Sarat Chandra Chattopadhyay Biography in Bengali – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জীবনী

Sarat Chandra Chattopadhyay: আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মহান ব্যক্তিদের জীবনী সমগ্র। মহান ব্যক্তি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁদের জীবনের ক্ষুদ্রতম অংশগুলি আমাদের জন্য শিক্ষামূলক হতে পারে। বর্তমানে আমরা এই মহান ব্যক্তিদের ভুলতে বসেছি। যাঁরা যুগ যুগ ধরে তাদের কর্ম ও খ্যাতির মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প ও সাহিত্যের জগতে এক অনন্য অবদান রেখেছেন এবং তাঁদের শ্রেষ্ঠ গুণাবলী, চরিত্র দ্বারা দেশ ও জাতির গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। সেইসব মহান ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় -এর সমগ্র জীবনী সম্পর্কে এখানে জানব।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জীবনী – Sarat Chandra Chattopadhyay Biography in Bengali

নামশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
জন্ম১২৮৩ সনের ৩১শে ভাদ্র , ইংরেজি ১৮৭৬ খ্রীষ্টাব্দের ১৫ই সেপ্টেম্বর
জন্মস্থানদেবানন্দপুর, ব্যান্ডেল, হুগলি জেলা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
পিতামতিলাল চট্টোপাধ্যায়
মাতাভুবনমােহিনী দেবী
ডাকনামন্যাড়া
ছদ্দনামঅনিলা দেবী
পেশালেখক (উপন্যাস, ছোটগল্প)
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিশ্রীকান্ত, দেবদাস
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারডিলিট (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), জগত্তারিণী পদক (কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়)
মৃত্যু১৬ জানুয়ারি ১৯৩৮, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর জন্ম স্থান ও পিতামাতা: Birthplace and Parents of Sarat Chandra Chattopadhyay

বাংলা তথা ভারতীয় সাহিত্যে অমর কথাশিল্পী নামে খ্যাত এবং আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক। তাঁর রচিত গল্প ও উপন্যাসের জনপ্রিয়তা তুলনাহীন। বিগত পঞ্চাশ বছর যাবৎ তাঁর রচিত গল্প উপন্যাসের জনপ্রিয়তা ও সমাদর অম্লান রয়েছে।

তৎকালীন সমাজের ত্রুটি বিচ্যুতি অনাচার স্খলন কুসংস্কার, ভন্ডামী সুদক্ষ চিত্রকরের মত তিনি তাঁর সাহিত্যে চিত্রিত করেছেন।

নিপুণভাবে নিজেকে পরিবর্তনের ইঙ্গিত আভাসিত করেছেন।

আড়ালে রেখে সমাজব্যবস্থার সরল সহজ ভাষায়, অননুকরণীয় ভঙ্গিতে সমাজের বিভিন্ন চরিত্রের দুঃখবেদনা, অভাব, অভিযোগ, মনন ও চিন্তার জটিল আবর্ত তিনি অতি সার্থকভাবে তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছেন।

বিশেষ করে নারীজাতির স্নেহ, মমতা, সরলতা ও বাৎসল্য, তাদের অন্তগূঢ়, আবেগ, আর্তি, ব্যথা, বেদনা, কুটিলতা, তাদের প্রতি পুরুষশাসিত সমাজের অবিচার, নির্যাতন, এক কথায় তৎকালীন সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত নারীসমাজের সমাগ্রিক রূপ তিনি গভীর মমত্ববোধ ও সহানুভূতির সঙ্গে ব্যক্ত করেছেন। সমাজের ত্রুচি ও দুর্বতার প্রতি তাঁর বক্তব্য ও ইঙ্গিত আজও প্রাসঙ্গিক।

শরৎচন্দ্রের জন্ম হুগলী জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে। পিতা মতিলাল চট্টোপাধ্যায় ছিলেন সাহিত্যানুরাগী, পান্ডিত্যের জন্যও তাঁর খ্যাতি ছিল। কিন্তু অস্থির স্বভাবের জন্য তাঁর সব গুণই অপচয়িত হয়।

উদাসী প্রকৃতির এই মানুষটি সংসারের প্রতিও ছিলেন উদাসীন, ফলে দারিদ্র্য ছিল নিত্যসঙ্গী। প্রধানতঃ এই কারণেই শরৎচন্দ্রকে কিশোর বয়সে ভাগলপুরে মাতুলালয়ে গিয়ে থাকতে হয়েছিল।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর ছোটবেলা: Sarat Chandra Chattopadhyay’s Childhood

নিজের ও পরিবারের কথা বলতে গিয়ে পরে শরৎচন্দ্র লিখেছেন, ‘আমার শৈশব ও যৌবন ঘোর দারিদ্র্যের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে। অর্থের অভাবেই আমার শিক্ষালাভের সৌভাগ্য ঘটেনি। পিতার নিকট হতে অস্থির স্বভাব ও গভীর সাহিত্যানুরাগ ব্যতীত আমি উত্তরাধিকার সূত্রে আর কিছুই পাইনি। পিতৃদত্ত প্রথম গুণটি আমাকে ঘরছাড়া করেছিল- আমি অল্পবয়সেই সারা ভারত ঘুরে এলাম।

আর পিতার দ্বিতীয় গুণের ফলে জীবন ভরে আমি কেবল স্বপ্নই দেখে গেলাম। আমার পিতার পান্ডিত্য ছিল অগাধ। ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা- এক কথায়, সাহিত্যের সকল বিভাগেই তিনি হাত দিয়েছিলেন। কিন্তু কোনটাই শেষ করতে পারেননি।’

তাঁর লেখা থেকেই জানা যায় অল্প বয়সেই তিনি দেশের নানা প্রান্তে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সংস্পর্শে আসতে পেরেছিলেন। তাদের দুঃখ বেদনার সংবাদ জানতে পেরেছিলেন যা পরবর্তী জীবনে তাঁর সাহিত্যরচনার পাথেয় হয়েছিল।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর শিক্ষাজীবন: Sarat Chandra Chattopadhyay’s Educational Life

কৈশোব ও যৌবন কেটেছিল তাঁর ভাগলপুরেই। তাঁর এখানকার জীবনের পরিচয় জানা যায় তাঁর বিখ্যাত শ্রীকান্ত উপন্যাস থেকে।

দুঃখ কষ্টের মধ্যে থেকেও ১৮৯৪ খ্রিঃ শরৎচন্দ্র প্রবেশিকা পাশ করেন। কলেজে ভর্তি হয়েও টাকার অভাবে কলেজ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। লেখাপড়ার প্রতি গভীর আগ্রহ বশেই একসময়ে সাহিত্যরচনায় প্রবৃত্ত হন। সতের বছর বয়সেই গল্প লেখা আরম্ভ করেন।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর কর্ম জীবন: Sarat Chandra Chattopadhyay’s Work Life

ভাগলপুরে বন্ধুদের সঙ্গে নাটকে অভিনয় করে খ্যাতিলাভ করেছিলেন। পিতার মৃত্যুর পর অর্থোপার্জনের চেষ্টায় কিছুদিন চাকরি করেন। পরে ১৯০৩ খ্রিঃ ভাগ্যান্বেষণে ব্রহ্মদেশে পাড়ি দেন।

রেঙ্গুনে তিনি অ্যাকাউন্টেন্ট জেনারেলের অফিসে চাকরি নিয়ে সেখানেই বসবাস করতে থাকেন।

প্রবাসের জীবন ছিল বৈচিত্র্যময়। এখানেই বিবাহ করেছিলেন। কিন্তু দুরারোগ্য প্লেগরোগে অকালেই স্ত্রীবিয়োগ হয়।

ব্রহ্মদেশে থাকবার সময়েই তিনি বন্ধুদের আগ্রহে সাহিত্যরচনায় ব্রতী হন। কলকাতার যমুনা পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় রামের সুমতি। ১৩১৯-২০ বঙ্গাব্দে এই পত্রিকায় তাঁর আরো দুটি উপন্যাস পথ-নির্দেশ ও বিন্দুর ছেলে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। তাঁর এই লেখাগুলো পাঠক সমাজে সাড়া জাগিয়েছিল।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর রচনা: Written by Sarat Chandra Chattopadhyay

পরের দুই বছরে বিখ্যাত ভারতবর্ষ পত্রিকায় বিরাজ বৌ, পন্ডিতমশাই, পল্লীসমাজ পরপর প্রকাশিত হয়। প্রথম রচনা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই পাঠক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। ভারতবর্ষে প্রকাশিত উপন্যাস তাঁকে বাংলা সাহিত্য ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করল। এরপর তিনি সাহিত্যকেই জীবিকার্জনের মাধ্যম রূপে গ্রহণ করেন এবং ১৯১৬ খ্রিঃ কলকাতায় ফিরে এসে সম্পূর্ণভাবে সাহিত্যরচনায় আত্মনিয়োগ করেন।

শরৎচন্দ্র কিছুকাল কলকাতার অদূরে বাজে শিবপুর অঞ্চলে বসবাস করেন। ১৯১৯ খ্রিঃ থেকে হাওড়া জেলার পানিত্রাস গ্রামে বাড়ি করে বসবাস করতে থাকেন। শেষ জীবনে কলকাতায়ও একটি বাড়ি করেছিলেন এবং সেখানেই বাস করেন।

শরৎচন্দ্রের প্রথম মুদ্রিত গল্পের নাম মন্দির। এই গল্পের জন্য তিনি কুন্তলীন পুরস্কার লাভ করেন ১৩০৯ বঙ্গাব্দে।

বড়দিদি উপন্যাস তাঁর প্রথম মুদ্রিত গ্রন্থ। ছদ্মনামেও তিনি কিছু প্রবন্ধ লিখেছিলেন। যমুনা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল অনিলা দেবী ছদ্মনামের নারীর লেখা, নারীর। মূল্য, কানকাটা, গুরু-শিষ্য-সংবাদ প্রভৃতি। বিভিন্ন সাময়িক পত্রে রাজনীতি বিষয়ক প্রবন্ধও প্রকাশিত হয়। তরুণের বিদ্রোহ তাঁর উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক রচনা।

স্বদেশী আন্দোলনের সঙ্গেও শরৎচন্দ্র অপ্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। প্রকাশ্য ভাবেও বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। হাওড়া জেলা কংগ্রেস কমিটির সভাপতি হয়েছিলেন। পরে বিতশ্রদ্ধ হয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সরে আসেন।

স্বদেশী যুগে তাঁর পথের দাবী উপন্যাসটি দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। বাংলার বিপ্লববাদের সমর্থক অভিযোগ তুলে ব্রিটিশ সরকার এই উপন্যাস ১৯২৫ খ্রিঃ বাজেয়াপ্ত করেছিল।

শরৎচন্দ্রের জনপ্রিয়তা তাঁর জীবিতকালেই প্রবাদ রূপ লাভ করেছিল। তাঁর গ্রন্থের প্রতি দেশের সর্বস্তরের মানুষই আগ্রহ বোধ করত। সাহিত্য তাঁকে অর্থ, যশ, সম্মান দুহাত ভরে দিয়েছিল। অনন্যসাধারণ সাহিত্যকীর্তির জন্য বহু সম্মান তিনি লাভ করেছিলেন।

১৯২৩ খ্রিঃ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে জগত্তারিণী পদক দিয়ে সম্মানিত করে। ১৯৩৬ খ্রিঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ডি-লিট উপাধি পান। ১৯৩৪ খ্রিঃ বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সদস্য হন।

শরৎচন্দ্র সাহিত্যক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথকে গুরুর মর্যাদা দিতেন। রবীন্দ্রনাথ উপন্যাস সাহিত্যে শরৎচন্দ্রকে জয়মাল্য দিয়েছিলেন।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর মৃত্যু: Sarat Chandra Chattopadhyay’s Death

১৯৩৮ খ্রিঃ অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র লোকান্তরিত হন।

আরও পড়ুন-

শরৎচন্দ্রের লেখা প্রথম গল্পের নাম কি?

শরৎচন্দ্রের প্রথম মুদ্রিত গল্পের নাম “ মন্দির ” কুন্তলীন পুরস্কার প্রতিযােগিতায় দেবার জন্য তিনি এই গল্পটি লেখেন।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত মন্দির গল্পটি কবে কোথায় প্রকাশিত হয়?

১৩১৪ বঙ্গাব্দ (১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে) সরলা দেবী সম্পাদিত ‘ভারতী’ পত্রিকার বৈশাখ-আষাঢ় সংখ্যায় উপন্যাসটি ধারাবাহিকভাবে প্রথম প্রকাশিত হয়। প্রথম দুই সংখ্যায় লেখকের কোনো নাম মুদ্রিত হয়নি। বড়দিদি প্রকাশের পাঁচ বছর আগে ‘মন্দির’ নামে একটি গল্প ‘কুন্তলীন পুরস্কার ১৩০৯’ নামের একটি সাহিত্য স্মরণিকায় প্রথম ছাপা হয়েছিলো।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ছোট গল্পের নাম কি?

‘রামের সুমতি’ নামে লেখকের গল্পটি এভাবে শুরু হয়।

Leave a Comment