Rabindranath Tagore Biography in Bengali – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী

Rabindranath Tagore Biography In Bengali – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী: আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মহান ব্যক্তিদের জীবনী সমগ্র। মহান ব্যক্তি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁদের জীবনের ক্ষুদ্রতম অংশগুলি আমাদের জন্য শিক্ষামূলক হতে পারে। বর্তমানে আমরা এই মহান ব্যক্তিদের ভুলতে বসেছি। যাঁরা যুগ যুগ ধরে তাদের কর্ম ও খ্যাতির মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প ও সাহিত্যের জগতে এক অনন্য অবদান রেখেছেন এবং তাঁদের শ্রেষ্ঠ গুণাবলী, চরিত্র দ্বারা দেশ ও জাতির গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। সেইসব মহান ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম বিশ্ববিখ্যাত কবি রবীন্দ্রনাথের -এর সমগ্র জীবনী সম্পর্কে এখানে জানব।

Table of Contents

Rabindranath Tagore Biography in Bengali – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী

নামরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)
জন্ম২৫ বৈশাখ ১২৬৮ বঙ্গাব্দ / ইং- ৭ই মে ১৮৬১, জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, কোলকাতা
পিতাদেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
মাতাসারদাসুন্দরী দেবী
ছদ্দনামভানুসিংহ
দাম্পত্যসঙ্গীমৃণালিনী দেবী
পেশাকবি, প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, গল্পকার
উল্লেখযোগ্য রচনাবলীগীতাঞ্জলী, রবীন্দ্র রচনাবলী, গোরা, আমার সোনার বাংলা, ঘরে বাইরে প্রভৃতি
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারনোবেল পুরস্কার (১৯১৩)
মৃত্যু২২ শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ / ইং- ৭ই আগস্ট ১৯৪১, জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, কোলকাতা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর জন্ম স্থান ও পিতামাতা: Birth Place And Parents Of Rabindranath Tagore

ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মনীষী এবং বিশ্ববিখ্যাত কবি রবীন্দ্রনাথের জন্ম ১৮৬১ খ্রিঃ ৭ ই এপ্রিল, বাংলা ১২৬৮ সালের ২৫ শে বৈশাখ কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে। তাঁর পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মাতার নাম সারদাদেবী।

সেকালের জমিদার পরিবার হলেও ঠাকুরবাড়ি ছিল শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য। পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গীত, অভিনয়, ছবিআঁকা, শরীর চর্চা, এসবের মধ্য দিয়েই এই পরিবারের শিশুদের জীবন শুরু হতো।

তবে এই বিশাল পরিবারে পুরুষ মহিলা এবং ছোটদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল ভিন্ন ভিন্ন জগৎ। বিশেষ করে ছোটদের চলতে হত কঠোর অনুশাসনের মধ্যে। তাদের দেখাশোনার ভার থাকত পারিবারিক ভৃত্যকুলের হাতে। অবশ্য অভিভাবকদের নজরদারি থাকত সর্বত্র।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর ছোটবেলা: Rabindranath Tagore’s Childhood

রবীন্দ্রনাথের ছোটবেলাটা কেটেছে ভৃত্যকুলের হাতে। তাদের প্রহরাতেই তাঁর মনোবিকাশের শুরু। শৈশব থেকে কৈশোরে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন এদের মধ্যে থেকেই।

পরবর্তী জীবনে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বা পটু ওই ভৃত্যদের নিয়ে নানা প্রবন্ধ লিখেছেন যা বাংলা রস-সাহিত্যের সম্পদ হয়ে আছে।

ভৃত্যরাজ্যে তাদের গল্পচ্ছলে ভয় দেখানো, রামায়ণ মহাভারতের পাঁচালী মুখস্থ করানো এবং অবিরাম রক্তচক্ষু দেখিয়ে দাদাগিরি সব কিছু নিয়ে তাদের বিচিত্র জীবনকে তিনি দেখেছেন কৃতজ্ঞতার আন্তরিক মনোভাব নিয়ে।

ভৃত্যদের কড়া শাসনে শিশু রবীন্দ্রনাথের ভিন্নমুখী হবার উপায় ছিল না। বরং এই শাসনের জগতে শিখেছিলেন বাধ্য হয়ে চলতে, কষ্টসহিষ্ণু হতে, পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলতে।

বাল্যস্মৃতি স্মরণ করতে গিয়ে তিনি লিখেছেন, “আমাদের এক চাকর ছিল, তার নাম শ্যাম। শ্যামবর্ণ দোহারা বালক, মাথায় লম্বা চুল, খুলনা জেলায় তাহার বাড়ি। সে আমাকে ঘরের একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসাইয়া আমার চারিদিকে খড়ি দিয়া গণ্ডি কাটিয়া দিত।

গম্ভীর মুখ করিয়া তর্জনী তুলিয়া বলিয়া যাইত, গন্ডির বাহিরে গেলেই বিষম বিপদ। বিপদটা আধি ভৌতিক কি আধি দৈবিক তাহা স্পষ্ট করিয়া বুঝিতাম না। কিন্তু মনে বড় আশঙ্কা হইত।

গন্ডি পার হইয়া সীতার কি সর্বনাশ হইয়াছিল তাহা রামায়ণেই পড়িয়া ছিলাম; এই জন্য গন্ডিটাকে নিতান্ত অবিশ্বাসীর মতো উড়াইয়া দিতে পারিতাম না। চাকরদের মহলে যে সকল বই প্রচলিত ছিল তাহা লইয়াই আমার সাহিত্য চর্চার সূত্রপাত হয়। তাহার মধ্যে চাণক্য শ্লোকের বাংলা অনুবাদ ও কৃত্তিবাস রামায়ণই প্রধান।”

ভবিষ্যৎকালে বিশ্বসাহিত্যের সবচেয়ে মূল্যবান আসনটি যিনি লাভ করবেন এইভাবেই লালিত হয়েছিল তাঁর প্রতিভা।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর শিক্ষাজীবন: Rabindranath Tagore’s Educational Life

বালক রবীন্দ্রনাথকে বিদ্যাশিক্ষার জন্য প্রথমে পাঠানো হয়েছিল ওরিয়েন্টাল সেমিনারীতে। পরে নর্ম্যাল স্কুল, বেঙ্গল একাডেমী, সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করলেও স্কুলের পাঠ শেষ করতে পারেননি।

স্কুলের বাঁধাধরা বন্ধন, শিক্ষকদের ব্যবহার এবং পরিবেশ কোন কিছুকেই তিনি মন থেকে মেনে নিতে পারেননি। এই জগৎ সম্বন্ধে পরিণত বয়সেও তাঁর মনে ক্ষোভ ও অভিযোগ ছিল।

প্রথাগত বিদ্যাশিক্ষা না হলেও গৃহশিক্ষকের কাছে তিনি ইতিহাস, ভূগোল, গণিত, সংস্কৃত এবং ইংরাজিভাষা শেখেন।

বিদ্যাশিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গীত, অভিনয় ও অঙ্কন বিষয়েও তিনি শিক্ষা লাভ করেন। তাঁর দুচোখে ছিল অপার আগ্রহ।

পৃথিবীর সবকিছু জানার জন্য বোঝার জন্য তাঁর আকুলতা ও চেষ্টার বিরাম ছিল না। প্রকৃতির পাঠশালায় তিনি ছিলেন একজন একনিষ্ঠ ছাত্র।

এভাবেই তিনি দিনে দিনে পরিচিত হয়েছেন জগৎ ও জীবনের সঙ্গে। তাঁর এই জানাই পরবর্তীকালে গান, কবিতায়, গল্পে, প্রবন্ধে, নাটকে, উপন্যাসে বাংলা সাহিত্যকে পরিপূর্ণ করে তুলেছে।

নিতান্ত বাল্যবয়সেই দুটি ঈশ্বর স্তব লিখে পিতা দেবেন্দ্রনাথের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। উৎসাহিত হয়ে অবিরাম চলতে থাকে তাঁর কাব্যচর্চা। কাব্য-সাধনার ক্ষেত্রে প্রথম জীবনে দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ এবং তাঁর পত্নী কাদম্বরী দেবীর প্রভাবও ছিল যথেষ্ট।

‘হিন্দু মেলার উপহার’ কবিতা রবীন্দ্রনাথের নামে প্রথম প্রকাশিত হয় বাংলা ১২৮১ সালের মাঘ মাসে। এর কয়েক বছর পরে সতের বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথকে বিলেতে পাঠানো হয় ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য। দেড় বছর পরে পিতার আদেশে দেশে ফিরে আসেন।

জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত হত ভারতী ও বালক পত্রিকা। এই দুই পত্রিকায়ই তিনি নিয়মিত লিখতেন।

ভারতীর প্রথম সংখ্যায় তাঁর প্রথম ছোটগল্প ভিখারিণী এবং প্রথম উপন্যাস করুণা প্রকাশিত হয়। ভুবনমোহিনী প্রতিভা রবীন্দ্রনাথের প্রথম গদ্য প্রবন্ধ, প্রকাশিত হয়েছিল জ্ঞানাঙ্কুর পত্রিকায় মাত্র আঠারো বছর বয়সের মধ্যেই রবীন্দ্রনাথ রচনা করেন কবিকাহিনী, ভানুসিংহের পদাবলী, শৈশব সঙ্গীত ও রুদ্রচন্ড প্রভৃতি। রবীন্দ্রনাথের অভিনয় জীবনে হাতেখড়ি হয় বিলেত থেকে ফিরে আসার পর। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ রচিত মানময়ী নাটকে মদনের ভূমিকায় প্রথম অভিনয় করেন।

এক বছর পরেই স্বরচিত বাল্মীকি প্রতিভা নাটকে বাল্মীকির ভূমিকায় অভিনয় করে খ্যাতিলাভ করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বিবাহ জীবন ও পরিবার: Rabindranath Tagore’s Marriage Life and Family

১৮৮২ খ্রিঃ রবীন্দ্রনাথ নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ কবিতাটি রচনা করেন। সেই বছরেই সন্ধ্যাসঙ্গীত প্রকাশিত হলে বঙ্কিমচন্দ্র নিজের গলার মালা পরিয়ে দিয়ে কবিকে আশীর্বাদ করেন। বাইশ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের বিয়ে হয় ভবতারিণী দেবীর সঙ্গে।

বিয়ের পর কবি-পত্নীর নাম পরিবর্তিত হয় মৃণালিনী নামে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর কর্ম জীবন: Rabindranath Tagore’s Work Life

পরের বছরই পিতার নির্দেশে রবীন্দ্রনাথ জমিদারি দেখাশোনার কাজ আরম্ভ করলেন। এই সময় বৈষয়িক কাজে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল বিশেষ করে শিলাইদহ ও সাহাজাদাপুর পরিদর্শন করতে হয়।

সুন্দর প্রকৃতির মুক্ত উদার সান্নিধ্য কবির অনেক রচনার প্রেরণা জুগিয়েছে। দেবেন্দ্রনাথ নির্জনে ঈশ্বর উপাসনার উদ্দেশ্যে বীরভূমের বোলপুরে কুড়িবিঘা জমি কিনেছিলেন। সময় এবং সুযোগমত এখানে এসে তিনি বসবাস করতেন। এখানেই রবীন্দ্রনাথ ব্রহ্মচর্য আশ্রমের প্রতিষ্ঠা করেন ১৯০১ খ্রিঃ বর্তমানে যার পরিচয় শান্তিনিকেতন নামে।

পরে এই প্রতিষ্ঠানই বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়েছে। ১৯০৫ খ্রিঃ ব্রিটিশ সরকারের বঙ্গভঙ্গ পরিকল্পনার প্রতিবাদে এদেশে শুরু হয়েছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন।

রবীন্দ্রনাথও এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। দেশবাসীকে স্বদেশ চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিল তাঁর গান ও কবিতা। বঙ্গভঙ্গ প্রস্তাবের প্রতিবাদ আন্দোলন উপলক্ষেই তিনি রচনা করেন তাঁর বিখ্যাত গান ‘বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু বাংলার ফল, পূর্ণ হউক, পূর্ণ হউক, পূর্ণ হউক হে ভগবান।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর পুরস্কার ও সম্মান: Rabindranath Tagore’s Awards and Honors

১৯০৫ খ্রিঃ ১৬ ই অক্টোবর রবীন্দ্রনাথ একটি শোভাযাত্রা পরিচালনা করেন এবং রাখী উৎসবের প্রচলন করেন।

রবীন্দ্রনাথ রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত না থেকেও লেখায় ও বক্তৃতার মাধ্যমে অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসকের কাজের প্রতিবাদ করে গেছেন। ১৯১৯ খ্রিঃ পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগে যে নির্মম হত্যাকান্ড ব্রিটিশরা ঘটিয়েছিল রবীন্দ্রনাথ তার প্রতিবাদে সরকার প্রদত্ত নাইট উপাধি ত্যাগ করেন।

১৯১২ খ্রিঃ রবীন্দ্রনাথ বিলাত যান। সেখানে ইংরাজ শিল্পী রোদেনস্টাইন তাঁর গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরাজি অনুবাদ পড়ে মুগ্ধ হন। তাঁর মাধ্যমে কবি মে সিনক্লেয়ার, এজরা পাউন্ড, ইয়েটস প্রভৃতি লেখকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে। ইতিমধ্যে গীতাঞ্জলির ইংরাজী অনুবাদ Offerings লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয়।

লন্ডন থেকে রবীন্দ্রনাথ আমেরিকায় গিয়ে বিভিন্ন সভায় বক্তৃতা দেন এবং সেখানকার খ্যাতনামা ব্যক্তিদের সঙ্গে পরিচিত হন।

১৯১৩ খ্রিঃ রবীন্দ্রনাথ দেশে ফিরে আসেন । সেই বছরই গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য সুইডেনের সাহিত্য পরিষদ রবীন্দ্রনাথকে নোবেল পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করেন। এর আগে অপর কোন ভারতবাসী সাহিত্যকৃতির জন্য এই পুরস্কার লাভ করেনি। নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ বিশ্বকবির মর্যাদায় ভূষিত হন। বাংলার তথা ভারতের হয়েও রবীন্দ্রনাথ হলেন বিশ্বমানবের একান্ত আপনার জন।

১৯১৪ খ্রিঃ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় রবীন্দ্রনাথকে ডক্টরেট এবং পরের বছর সরকাব স্যার উপাধিতে ভূষিত করেন। সেই বছরই দেশভ্রমণে বেরিয়ে জাপান, চীন, ফ্রান্স, আমেরিকা প্রভৃতি দেশে যান। পরিচিত হন শিল্পরসিক বেনেদেত্তো ক্রোচ, মনীষী রমাঁ রোলাঁ প্রভৃতি ব্যক্তিদের সঙ্গে।

১৯২৭ খ্রিঃ রবীন্দ্রনাথ দূরপ্রাচ্য এবং ১৯২৯ খ্রিঃ কানাডায় যান। ১৯৩০ খ্রিঃ শেষবারের মত বিদেশ ভ্রমণে গিয়ে ঘুরে আসেন ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন দেশ, রাশিয়া এবং পারস্য। এই বছরেই তিনি আমন্ত্রিত হয়ে অক্সফোর্ডে হিউপার্ট বক্তৃতায় মানুষের ধর্ম বা Religion of Man বক্তৃতা দেন।

প্যারিস ও বার্লিনে প্রদর্শিত হয় তাঁর শেষ বয়সের প্রিয়া নামক ছবির প্রদর্শনী। পরিচিত হন বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের সঙ্গে। কবি সিংহলে শেষবার গেলেন ১৯৩৪ খ্রিঃ।

শান্তিনিকেতনে যে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তার জন্য অর্থসমস্যা রবীন্দ্রনাথকে পীড়িত করত। দেশবিদেশ থেকে সংগৃহীত অর্থ তিনি এখানকার উন্নতির জন্যই ব্যয় করতেন। এই প্রতিষ্ঠানের অর্থসংগ্রহের জন্য বৃদ্ধ বয়সেও তিনি ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে সারা দেশে নৃত্যনাট্য দেখিয়ে অর্থসংগ্রহ করেছেন। এই সময় তাঁর স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে গান্ধীজি ১৯৬৬ খ্রিঃ তাঁকে ৬০ হাজার টাকা সাহায্য করেন।

সত্তর বছর বয়সে কবিকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সভায় কবি বলেন, ‘একটি মাত্র পরিচয় আমার আছে, সে আর কিছু নয়। আমি কবিমাত্র।’ এই উপলক্ষে কবিকে The Golden Book of Tagore নামে এক দুর্লভ রচনা সম্বলিত গ্রন্থ উপহার দেওয়া হয়।

১৯৩৭ খ্রিঃ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবে ভাষণ দিতে আহুত হয়ে রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাষায় বক্তৃতা করেন। বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে পুনরায় ডি-লিট উপাধিতে ভূষিত করেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৪০ খ্রিঃ শান্তিনিকেতনে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কবিকে ডক্টরেট উপাধি প্রদান করেন। পৃথিবীর মানুষের কাছে এই তাঁর শেষ সম্মানলাভ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর পুরস্কার ও সম্মান: Rabindranath Tagore’s Awards and Honors

১৯৪১ খ্রিঃ তাঁর শেষ জন্মদিনে পাঠ করলেন সভ্যতার সংকট প্রবন্ধ। অবশেষে ১৯৪১ খ্রিঃ ৭ ই আগস্ট ‘মাঘের সূর্য গেল উত্তরায়ণে।’

অজস্র উপন্যাস, কবিতা, গান, নাটক, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, গীতিনাট্য, রম্যরচনা, চিঠি এবং ছবির রচয়িতা রবীন্দ্রনাথের কাব্যসাধনার একটি মাত্র পালা ছিল তা হল সীমার সঙ্গে অসীমের মিলন সাধনের পালা। তিনিই একমাত্র কবি যাঁর দুটি গান ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতরূপে গৃহীত হয়েছে।

আরও পড়ুন-

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবে জন্মগ্রহন করে?

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৭ মে ১৮৬১ – ৭ আগস্ট ( বাংলার ২৫ বৈশাখ ১২৬৮ বঙ্গাব্দ )

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা মাতারা নাম কি?

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সারদাসুন্দরী দেবী।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবে নোবেল পুরস্কার পান?

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পান।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনাবলী কি কি?

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উল্লেখযোগ্য রচনাবলী – গীতাঞ্জলী, রবীন্দ্র রচনাবলী, গোরা, আমার সোনার বাংলা, ঘরে বাইরে প্রভৃতি।

Join Our Telegram Channel

Leave a Comment