Nagarjuna Biography in Bengali – নাগার্জুন জীবনী

Nagarjuna Biography: আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মহান ব্যক্তিদের জীবনী সমগ্র। মহান ব্যক্তি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁদের জীবনের ক্ষুদ্রতম অংশগুলি আমাদের জন্য শিক্ষামূলক হতে পারে। বর্তমানে আমরা এই মহান ব্যক্তিদের ভুলতে বসেছি। যাঁরা যুগ যুগ ধরে তাদের কর্ম ও খ্যাতির মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প ও সাহিত্যের জগতে এক অনন্য অবদান রেখেছেন এবং তাঁদের শ্রেষ্ঠ গুণাবলী, চরিত্র দ্বারা দেশ ও জাতির গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। সেইসব মহান ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম সাহিত্যের অন্যতম নাগার্জুন (Nagarjuna) -এর সমগ্র জীবনী সম্পর্কে এখানে জানব।

Nagarjuna Biography In Bengali – নাগার্জুন জীবনী

নামনাগার্জুন
জন্মca. ১৫০ খ্রি:, দক্ষিণ ভারত
পেশাবৌদ্ধধর্মের শিক্ষক এবং দার্শনিক
পরিচিতির কারণমহাযান বৌদ্ধধর্মের মাধ্যমিক শাখার প্রতিষ্ঠাতা
রচনাচিকিৎসা রসায়ন শাস্ত্রের উপর
বিশেষ দায়িত্ব পালননালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়-এর প্রধান হিসেবে
মৃত্যুca. ২৫০ খ্রি:, ভারত

নাগার্জুন কে ছিলেন? Who is Nagarjuna?

ভারতের প্রাচীনতম সভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে সিন্ধুনদের উপত্যকায়৷ খ্রিষ্টের জন্মের ৩০০০ বছর আগে গড়ে উঠেছিল এই সিন্ধুসভ্যতা। ধ্বংসাবশেষ থেকে যেসব নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে তা থেকে জানা যায় রসায়ন-জ্ঞান ও ধাতুবিদ্যায় সিন্ধুবাসীরা যথেষ্ট উৎকর্ষ লাভ করেছিল।

বিভিন্ন মাটির পাত্র, ব্রোঞ্জের তৈজস পত্র, সোনা ও রুপোর অলঙ্কার এই সভ্যতার বৈজ্ঞানিক কৃতিত্বের পরিচায়ক।

কিন্তু সেই সভ্যতার বিজ্ঞানিক ব্যক্তি পরিচয় বা কর্মসাধনার তথ্য আজও আমাদের অজানা। সিন্ধু সভ্যতার পরবর্তী কালই ভারতে বৈদিক যুগ নামে পরিচিত।

আরও পড়ুন- কবি চন্ডীদাস জীবনী

বৈদিক মনীষীদের আয়ুর্বেদচর্চার ইতিহাস আমাদের জানা। যতদূর জানা যায় ভারতে আয়ুর্বেদচর্চার সূত্রপাত হয়েছিল খ্রিষ্টের জন্মের ৩০০ বছর আগে থেকে। নানাপ্রকার ওষুধ প্রস্তুতির জন্য উদ্ভিদ রস ও ভষ্ম ইত্যাদি সংগ্রহের সূত্রেই ভারতে আয়ুর্বেদচর্চার সূচনা হয়েছিল।

ক্রমে নানা চিকিৎসা বিজ্ঞানীর সাধনায় আয়ুর্বেদের অভাবিত অগ্রগতি সাধিত হয়েছিল। আয়ুর্বেদের ওষুধ প্রস্তুতির ক্ষেত্রে নানা ধাতু ও ধাতব যৌগের ব্যবহার শুরু হয়েছিল খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকের প্রথম ভাগ থেকে। এইভাবেই উদ্ভিদ জগৎ থেকে আয়ুর্বেদের উত্তরণ ঘটেছিল রসায়ন ক্ষেত্রে।

নাগার্জুন এর কর্ম জীবন: Nagarjuna’s Work Life

আয়ুর্বেদে রস বলা হয়েছে পারদকে। এই পারদ নিয়ে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার সূত্রপাত হয়েছিল খ্রিস্টীয় পঞ্চম ষষ্ঠ শতকে বৌদ্ধতান্ত্রিকতার যুগে। বৌদ্ধধর্মের সাধনা ছিল মূলতঃ জীবনবিমুখ।

তন্ত্রের ছিল ভিন্ন পথ। জীবনবাদী অন্ত্রিকগণ জীবনোপভোগের জন্য লাভ করতে চাইতেন অনন্ত যৌবন যেহেতু যৌবনই জীবন উপভোগের শ্রেষ্ঠকাল। স্বাভাবিকভাবে কালক্রমে বৌদ্ধতান্ত্রিকদের বিজ্ঞান সাধনাই হয়ে উঠেছিল এই অনস্ত যৌবন লাভের উপায়।

তাদের হাতেই রসায়ন ধাপে ধাপে অগ্রগতি লাভ করেছিল। এই যুগেই লেখা হয়েছিল রসায়নের নানা বই। তার মধ্যে সন্ধান পাওয়া যায় নানা রাসায়নিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার।

আরও পড়ুন- সাধক কবি রামপ্রসাদ জীবনী

বৌদ্ধতান্ত্রিকতার যুগের বিশিষ্ট রসায়ন বিজ্ঞানীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খ্যাতি লাভ করেছিলেন নাগার্জুন (Nagarjuna)। তিনিই ভারতের রসায়ন গবেষণার পথিকৃৎরূপে স্বীকৃত। নাগার্জুনের কাল নির্ণয় নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে।

বিখ্যাত পর্যটক আলবেরুনী ভারত ভ্রমণে এসেছিলেন ১০৩১ খ্রিঃ। তিনি ইন্ডিকা নামে যে ভ্রমণবৃত্তাস্ত লিখেছিলেন এই বইতে তিনি নাগার্জুন নামে একজন বিখ্যাত রসায়নবিদের কথা জানিয়েছিলেন। নাগার্জুন ছিলেন, গুজরাতের সোমনাথের নিকটবর্তী দৈহ্যক দুগের বাসিন্দা।

আলবেরুনী তার কাল নির্দেশ করেছেন দশম শতকের প্রথম ভাগ। নাগার্জুনের একটি অসাধারণ বইয়েরও উল্লেখ করেছেন আলবেরুনী।

বইটির নাম রসরত্নাকর। আলবেরুনী জানিয়েছেন, রসায়নের সমস্ত বিষয়কেই এই বইতে স্থান দেওয়া হয়েছে। মহাযান বৌদ্ধমতে বিশ্বাসী নাগার্জুন সুশ্রুত সংহিতার উত্তর তন্ত্র অংশটিও রচনা করেছিলেন৷ ব্যক্তি নাগার্জুন সম্পর্কে জানা যায় তিনি বিদর্ভ নগরের অধিবাসী ছিলেন।

আরও পড়ুন- কাশীরাম দাস জীবনী

বাল্যকাল থেকেই তিনি ছিলেন বিদ্যোৎসাহী। সেইকালে কৃষ্ণানদীর তীরে অমরাবতী নামে এক বিখ্যাত জনপদ ছিল। সেখানে ছিল একটি বিশ্ববিদ্যালয়।

নাগার্জুন (Nagarjuna) এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটেই বাস করতেন।

নাগার্জুনের প্রতিভার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন তাঁর রসরত্নাকর গ্রন্থটি। রস ঘটিত যৌগ ও তার প্রস্তুতি এই বইয়ের প্রধান উপজীব্য। রস ছাড়া লোহা, সোনা, রুপো ইত্যাদি ধাতুর কথাও তিনি তাঁর বইতে আলোচনা করেছেন।

নাগার্জুনের রসায়নচর্চার প্রধান বিষয় ছিল রস বা পারদকে উদ্ভিদ বা জীবজন্তুর দেহাবশেষ মিশিয়ে কি করে সোনাতে রূপান্তরিত করা যায় তার অনুসন্ধান।

সোনা তৈরির অনেক পদ্ধতির কথা নাগার্জুন তাঁর রসরত্নাকর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।

তিনি বলেছেন এক প্রকার উজ্জ্বল নীল বর্ণের পাথরকে একটি বিশেষ রসে জারিত করলে তা এক রতি রুপোকে ১০০ গুণ বেশি ওজনের সোনায় রূপান্তরিত করতে পারে।

যে নীলবর্ণের পাথরটির কথা তিনি বলেছেন তা হল ল্যাপিস বা জুলাই জাতীয় পাথর। আর বিশেষ রসটি হল আলবিজিয়া লেব্বেক। আরও বলেছেন, হলুদ বর্ণের গন্ধককে বুটিকা মনোস্পারমার রসের সঙ্গে মিশিয়ে বিশুদ্ধ করার পর তার সঙ্গে রুপো ঘুটের আগুনে জ্বাল দিলে বিশুদ্ধ সোনা পাওয়া যাবে।

আরও পড়ুন- কৃত্তিবাস ওঝা জীবনী

রসায়নের নানা পদ্ধতির বিবরণও দেওয়া হয়েছে রসরত্নাকর গ্রন্থে। পাতন, ঊর্ধ্বপাতন, ভস্মীকরণ , ইত্যাদি ও বহু যন্ত্রপাতিরও উল্লেখ পাওয়া যায়।

নাগার্জুনই সর্বপ্রথম কজ্জলী বা কৃষ্ণবর্ণের সালফাইডকে পুড়িয়ে ধাতব অক্সাইড তৈরি করেছেন।

‘রস’ বা পারদ ঘটিত নানা রস তৈরি করে তিনিই প্রথম চিকিৎসা বিজ্ঞানের নানা ওষুধে ব্যবহার করেছেন। অনন্ত যৌবন লাভের পথ আবিষ্কারের প্রেরণাতেই প্রথমে নাগার্জুন রসায়নের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন।

রস ঘটিত নানা যৌগ থেকেই যে অনন্ত যৌবন লাভের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে তা তিনি শুনেছিলেন। তাই কোন সমর্থ রস-বিজ্ঞানীর কাছে শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে তিনি যৌবনেই পরিব্রাজনে বেরিয়ে পড়েছিলেন।

এ সম্পর্কে তিনি এক জায়গায় বলেছেন, মানুষের মঙ্গল আকাঙ্ক্ষা নিয়ে দীর্ঘ বার বছর তিনি যক্ষিণীর উপাসনা করেন। সন্তুষ্ট হয়ে যক্ষিণী তাঁকে রস বন্ধন অর্থাৎ রসকে কঠিনীভবনের জ্ঞান দান করেন।

আরও পড়ুন- মহাকবি কালিদাস জীবনী

বস্তুতঃ দীর্ঘ বারো বছরের সাধনার ফলেই যে নাগার্জুন তাঁর অভিষ্ট লাভ করেছিলেন তারই ইঙ্গিত পাওয়া যায় এই যক্ষিণী গল্পের প্রসঙ্গে। তাঁর আবিষ্কারের অব্যর্থতা সম্পর্কে লোকের মনে বিশ্বাস উৎপাদনের জন্যই যে যক্ষিণীর অবতারণা করেছিলেন তা সহজেই অনুমান করা যায়।

নাগার্জুন এক জায়গায় লিখেছেন, সব রসের রাজা রসরাজ হল পারদ। এই পারদকে লেবুরস, নিশাদল, অম্ল, ক্ষার, পঞ্চ লবন, আদ্যরস ইত্যাদির সঙ্গে মিশিয়ে আটটি বিভিন্ন ধাতুর সঙ্গে সংকর ধাতু তৈরি করা যায়।

চিরযৌবন লাভের ওষুধি প্রস্তুতি সম্পর্কে নাগার্জুন বলেছেন, রস অর্থাৎ পারদকে কঠিন অবস্থায় রূপান্তরিত করে সম ওজনের সোনার সঙ্গে ভালভাবে মিশিয়ে সোনা পারদের সংকর প্রস্তুত করতে হবে। এই সংকরকে মেশাতে হবে গন্ধক, সোহাগা ইত্যাদির সঙ্গে।

আরও পড়ুন- মহর্ষি বাল্মীকি জীবনী

এবারে এই মিশ্রণকে একটা মাটির পাত্রে ঢেকে নিয়ে উচ্চতাপে উত্তপ্ত করতে হবে। এইভাবে যে ঊর্ধ্বপাতিক শোধিত অংশ পাওয়া যাবে তা পান করলে চির যৌবন লাভ অবধারিত।

নাগার্জুনের সাধনা এইভাবেই এক সময় নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পথ ধরে বৈজ্ঞানিক গবেষণার মুক্ত অঙ্গনে প্রবেশ করেছিল।

তাঁর তৈরি রসায়নের পথ ধরেই ভারতীয় রসায়ন বিজ্ঞানের ইমারত তৈরি হয়েছিল উত্তরকালে।

Leave a Comment