Kaliprasanna Singha Biography in Bengali – কালীপ্রসন্ন সিংহ জীবনী

Kaliprasanna Singha Biography: আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মহান ব্যক্তিদের জীবনী সমগ্র। মহান ব্যক্তি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁদের জীবনের ক্ষুদ্রতম অংশগুলি আমাদের জন্য শিক্ষামূলক হতে পারে। বর্তমানে আমরা এই মহান ব্যক্তিদের ভুলতে বসেছি। যাঁরা যুগ যুগ ধরে তাদের কর্ম ও খ্যাতির মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প ও সাহিত্যের জগতে এক অনন্য অবদান রেখেছেন এবং তাঁদের শ্রেষ্ঠ গুণাবলী, চরিত্র দ্বারা দেশ ও জাতির গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। সেইসব মহান ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম কালীপ্রসন্ন সিংহ (Kaliprasanna Singha) -এর সমগ্র জীবনী সম্পর্কে এখানে জানব।

Kaliprasanna Singha Biography In Bengali – কালীপ্রসন্ন সিংহ জীবনী

নামকালীপ্রসন্ন সিংহ
জন্ম২৩ ফেব্রুয়ারি ১৮৪০
জন্মস্থানকলকাতার জোড়াসাঁকো
পিতানন্দলাল সিংহ
মাতাবিম্ববতী
পেশাসাহিত্যিক
উল্লেখযোগ্য গ্রন্থহুতোম প্যাঁচার নকশা
নাটকবাবু নাটক
মৃত্যু২৪ জুলাই ১৮৭০

Birthplace And Parents of Kaliprasanna Singha: কালীপ্রসন্ন সিংহ এর জন্ম স্থান ও পিতামাতা

উনবিংশ শতাব্দীর বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ কালীপ্রসন্ন ১৮৪০ খ্রিঃ কলকাতার জোড়াসাঁকো অঞ্চলের বিখ্যাত জমিদার বংশে জন্মগ্রহণ করেন।

তাঁর পিতার নাম নন্দলাল সিংহ। বাল্যবয়স থেকেই কালীপ্রসন্ন অসাধারণ মেধাবী ছিলেন। বালকের মাথায় বৃদ্ধের মস্তিষ্ক বললে যা বোঝায় তিনি ছিলেন তাই। অতি অল্প বয়সেই বিভিন্ন ভাষা ও বিষয়ে ব্যুৎপত্তি লাভ করেন।

কালীপ্রসন্ন সিংহ এর শিক্ষাজীবন: Kaliprasanna Singha’s Educational Life

হিন্দু কলেজে ভর্তি হয়েও প্রথাবদ্ধ পড়া সম্পূর্ণ করতে পারেন নি। তবে কলেজের অসম্পূর্ণ পড়া সম্পূর্ণ করেছিলেন একজন ইংরাজ গৃহশিক্ষকের সাহায্যে।

বিদগ্ধ বন্ধুদের সঙ্গে মিলিত হয়ে মাত্র ১৩ বছর বয়সেই বিদ্যোৎসাহিনী সভা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই সভা প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ ছিল স্বদেশের সর্ববিধ উন্নতি বিধান।

আরও পড়ুন- নবীনচন্দ্র সেন জীবনী

তাই সভ্যদের আলোচনার মুখ্য বিষয়ই ছিল ভাষা সাহিত্য ও সমাজের নানাবিধ সমস্যা।

সনাতনপন্থী সমাজের গোঁড়ামি ও কুসংস্কার তাঁকে পীড়িত করত।

কালীপ্রসন্ন সিংহ এর কর্ম জীবন: Kaliprasanna Singha’s Work Life

দেশবাসীর মধ্যে শিক্ষার প্রসার ও প্রগতিমূলক চিন্তার প্রসার ঘটাবার উদ্দেশ্যে প্রকাশ করেন সভার মুখপত্র বিদ্যোৎসাহিনী পত্রিকা (১৮৫৫ খ্রিঃ)। পরের বছর গড়ে তোলেন বিদ্যোৎসাহিনী থিয়েটার।

বস্তুতঃ এসব উদ্যোগের মাধ্যমেই বাংলার সাংস্কৃতিক জীবনে কালীপ্রসন্নের আবির্ভাব সূচিত হয়। শিক্ষার প্রসার ও উন্নতির উদ্দেশ্যে পরে তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় সর্বতত্ত্ব প্রবেশিকা, বিবিধার্থ সংগ্রহ ও পরিদর্শক প্রভৃতি পত্রিকা।

প্রাণিতত্ত্ব, ভূ-তত্ত্ব, শিল্প সাহিত্য ও সমাজ ছিল এই সকল পত্রিকার প্রধান বিষয়। দেশে নীলকর সাহেবদের অত্যাচার এবং অসহায় চাষীদের দুরবস্থা অবলম্বনে রায়বাহাদুর দীনবন্ধুমিত্র রচনা করেছিলেন নীলদর্পণ নাটক, ১৮৬০ খ্রিঃ।

আরও পড়ুন- সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত জীবনী

এই নাটক বহুভাবে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। মাইকেল মধুসূদন নাটকটি ইংরাজিতে অনুবাদ করেছিলেন। বই আকারে প্রকাশ করেছিলেন পাদ্রী লঙ সাহেব।

এর জন্য ইংরাজ সরকারের আদালতে তাঁকে অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হতে হয়েছিল। জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ কালীপ্রসন্ন লঙ সাহেবের জরিমানার হাজার টাকা আদালতে জমা দিয়েছিলেন।

কালীপ্রসন্ন সিংহ এর রচনা: Written by Kaliprasanna Singha

সমাজ হিতৈষী কালীপ্রসন্ন এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার সম্পাদক হরিশ মুখোপাধ্যায় ও তাঁর পরিবারবর্গকে; মুখার্জীস ম্যাগাজিন -এর শম্ভুচন্দ্র মুখার্জী, শিক্ষক রিচার্ডসন ও লঙসাহেব প্রমুখদের বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে সাহায্য করেছিলেন।

বিদ্যাসাগর প্রবর্তিত বিধবাবিবাহ প্রসারের তিনি ছিলেন একজন প্রধান উৎসাহী সমর্থক। তিনি বিধবা বিবাহকে জনপ্রিয় করবার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন।

বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ বন্ধ করার জন্য বিদ্যাসাগর দেশব্যাপী যে আন্দোলন আরম্ভ করেছিলেন তাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন কালীপ্রসন্ন।

সাহিত্যক্ষেত্রে প্রবেশ করেছিলেন প্রধানতঃ নাটক রচনার মাধ্যমে। তাঁর রচিত বাবু নাটক প্রকাশিত হয় ১৮৫৪ খ্রিঃ।

আরও পড়ুন- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী

পরবর্তী তিন বছরে প্রকাশিত হয় বিক্রমোর্কশী, সাবিত্রী সত্যবান ও মালতীমাধব। তৎকালীন বাবুসম্প্রদায়ের রুচিবিকৃতি ও সাধারণ সমাজব্যবস্থার ত্রুটিপূর্ণ দিকগুলির প্রতি কটাক্ষ প্রকাশ করেছেন বিদ্রূপাত্মক রচনা হুতোম প্যাঁচার নক্সা প্রকাশ করে (১৮৬২ খ্রিঃ)।

হুতোম প্যাঁচা ছিল তাঁরই ছদ্মনাম। নানাদিক থেকেই এই গ্রন্থ স্মরণীয়। বিশেষ করে সংস্কৃত শব্দ কন্টকিত ভাষার পরিবর্তে সাহিত্যে কথ্য ভাষার প্রচলন করার লক্ষ্যে এই গ্রন্থটিই ছিল প্রথম পদক্ষেপ এবং একারণেই বাংলা সাহিত্যে স্মরণীয়।

মূল সংস্কৃত মহাভারত বাংলায় অনুবাদ করে নিজ খরচে তা প্রকাশ করা কালী প্রসন্ন সিংহের জীবনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি।

এই মহৎ কাজে তাঁকে উৎসাহিত করেছিলেন বিদ্যাসাগর স্বয়ং। তাঁরই তত্ত্বাবধানে এবং হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য, ভুবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, নবীনকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ পণ্ডিতের সাহায্যে কালীপ্রসন্ন এই শ্রমসাধ্য দুরূহ কর্ম সম্পাদন করেছিলেন।

আরও পড়ুন- কাজী নজরুল ইসলাম জীবনী

খুবই স্বল্প পরিসর জীবনে কালীপ্রসন্ন যেসব কাজ করেছিলেন তা বিস্ময়ের উদ্রেক করে। সমসাময়িক কালে তিনি ভাষা সাহিত্য ও সমাজ জীবনে প্রচন্ড আলোড়ন সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়েছিলেন।

তিনি সরকার কর্তৃক অনারারী ম্যাজিস্ট্রেট ও জাস্টিস অব দ্য পীস নিযুক্ত হয়েছিলেন।

কালীপ্রসন্ন সিংহ এর মৃত্যু: Kaliprasanna Singha’s Death

মাত্র ত্রিশ বছর বয়সে ১৮৭০ খ্রিঃ ২৪ শে জুলাই কালীপ্রসন্ন পরলোক গমন করেন।

কালীপ্রসন্ন সিংহের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ কোনটি?

কালীপ্রসন্ন সিংহের সবথেকে বড় কীর্তি হল, তার সম্পাদনায় আঠারো পর্ব মহাভারত গদ্য আকারে বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে, যা এখনও ব্যাপকভাবে পঠিত এবং প্রকাশিত হয়। পুরো প্রকল্পটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর দ্বারা পরিদর্শিত হয়। এই অনুবাদটি ১৮৫৮ থেকে ১৮৬৬ এর ভিতরে প্রকাশিত হয়েছিল।

কালীপ্রসন্ন সিংহের ছদ্মনাম?

হুতোম প্যাঁচা।

Join Our Telegram Channel

Leave a Comment