Satyendranath Dutta Biography in Bengali – সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত জীবনী

Satyendranath Dutta Biography: আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মহান ব্যক্তিদের জীবনী সমগ্র। মহান ব্যক্তি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁদের জীবনের ক্ষুদ্রতম অংশগুলি আমাদের জন্য শিক্ষামূলক হতে পারে। বর্তমানে আমরা এই মহান ব্যক্তিদের ভুলতে বসেছি। যাঁরা যুগ যুগ ধরে তাদের কর্ম ও খ্যাতির মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প ও সাহিত্যের জগতে এক অনন্য অবদান রেখেছেন এবং তাঁদের শ্রেষ্ঠ গুণাবলী, চরিত্র দ্বারা দেশ ও জাতির গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। সেইসব মহান ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (Satyendranath Dutta) -এর সমগ্র জীবনী সম্পর্কে এখানে জানব।

Satyendranath Dutta Biography In Bengali – সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত জীবনী

নামসত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
জন্ম১১ই ফেব্রুয়ারি ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দ, কলকাতা, ব্রিটিশ ভারত
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয়
সময়কালবাংলা সাহিত্যের তত্ত্ববোধিনী যুগ
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিফুলের ফসল (১৯১১), কুহু ও কেকা (১৯১২)
বাসস্থানকলকাতা
ছদ্মনামনবকুমার, কবিরত্ন, অশীতিপর শর্মা, ত্রিবিক্রম বর্মণ, কলমগীর
পেশাকবি
মৃত্যু২৫ জুন ১৯২২ (৪১ বছর)

রবীন্দ্র প্রতিভার আলোকে যখন বাংলা কবিতার আকাশ প্রদীপ্ত, সেই সময়ে আধুনিক বাংলা কবিতার ক্ষেত্রে আবির্ভূত হয়ে যে কজন কবি নিজেদের প্রতিভার প্রভায় সাহিত্যের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন সত্যেন্দ্রনাথ তাঁদের মধ্যে অন্যতম।

এই কারণে রবীন্দ্রোত্তর বাংলা কবিতার আলোচনায় অবধারিতভাবে সত্যেন্দ্রনাথের প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়। রবীন্দ্র-প্রতিভার প্রদীপ্ত মধ্যাহ্ন-প্রহরে রবি রশ্মিতে রশ্মিমান হয়ে আপন ছন্দে রবীন্দ্রবলয়ে অবস্থান করেছিলেন পাঁচজন কবি।

তাঁরা হলেন সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায়, কুমুদরঞ্জন মল্লিক, যতীন্দ্রমোহন বাগচী এবং কালিদাস রায়।

রবীন্দ্র-বলয়ে অবস্থান করলেও সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন সম্পূর্ণভাবে রবীন্দ্র-প্রভাব মুক্ত। এখানেই সত্যেন্দ্রনাথের বৈশিষ্ট্য।

সত্যেন্দ্রনাথ বাস্তবানুসারী চিত্রাঙ্কনে, সৌন্দর্যের বিষয়-বৈচিত্র্যে, শব্দের ঝঙ্কারে, ছন্দের লালিতো এবং মার্জিত রুচির ঐতিহ্যে তাঁর কাব্যের একটি স্বতন্ত্র পরিমন্ডল গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন।

রবীন্দ্রনাথকে স্বীকার করেও একারণেই সত্যেন্দ্রনাথ রবীন্দ্র-প্রভাবমুক্ত কবি, রবীন্দ্রোত্তর সমকালীন কবিদের মধ্যে নিঃসন্দেহে জনপ্রিয়তম কবি।

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত এর জন্ম স্থান ও পিতামাতা: Birth Place And Parents Of Satyendranath Dutta

সত্যেন্দ্রনাথের জন্ম ১৮৮২ খ্রিঃ ১২ ই জানুয়ারি, বাংলা ১২৮৮ সন, ৩০ শে মাঘ। চব্বিশ পরগনা জেলার নিমতা গ্রামে মাতুলালয়ে তাঁর জন্ম।

পৈতৃক নিবাস ছিল বর্ধমান জেলার চুপীগ্রামে। সত্যেন্দ্রনাথের পিতার নাম রজনীমাধব দত্ত, মাতা মহামায়া দেবী।

পিতামহ প্রখ্যাত লেখক অক্ষয়কুমার দত্ত ছিলেন বিদ্যাসাগরের সমকালীন। একদিকে পিতামহ অক্ষয়কুমার অন্য দিকে রবীন্দ্রনাথ -সত্যেন্দ্রনাথের কবিপ্রতিভার উভয় দিগন্তে এই দুই প্রতিভাধর মনস্বী।

তবে অধিকতর কাছের মানুষ ছিলেন নিঃসন্দেহে অক্ষয়কুমারই। পরিবারের সারস্বত পরিমন্ডলে শৈশব থেকেই সত্যেন্দ্রনাথ হয়ে উঠেছিলেন পাঠানুরাগী। পাঠ্যবহির্ভূত বই পড়াতেই ছিল তাঁর বেশি উৎসাহ।

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত এর শিক্ষাজীবন: Satyendranath Dutta’s Educational Life

উত্তর কলকাতার সেন্ট্রাল কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৮৯৯ খ্রিঃ সত্যেন্দ্রনাথ দ্বিতীয় বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। বর্তমানে যার নাম স্কটিশ চার্চ কলেজ, পূর্বে তার নাম ছিল জেনারেল এসেমব্লিজ।সত্যেন্দ্রনাথ এই কলেজ থেকে ১৯০১ খ্রিঃ এফ.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বি.এ ক্লাশে ভর্তি হন।

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত এর প্রথম জীবন: Satyendranath Dutta’s Early Life

১৯০৩ খ্রিঃ বি.এ পরীক্ষায় বসবার আগেই সত্যেন্দ্রনাথের বিবাহ হয়। পরীক্ষায় অকৃতকার্যতার পর তাঁর কলেজে পড়ারও ইতি হয়। বিদ্যায়তনিক পড়াশুনো বন্ধ হলেও অধ্যয়ন যাঁর আবাল্যের নেশা তাঁর পড়াশোনার জগৎ থাকে চিরকালই অবারিত।

নানা বিষয়ের বই হয়ে উঠল তাঁর নিত্যসঙ্গী। এভাবেই দিনে দিনে সমৃদ্ধ হল সত্যেন্দ্রনাথের জ্ঞানভান্ডার।

সংগৃহীত হল তাঁর নিরবচ্ছিন্ন কাব্য সাধনার বহুবর্ণ উপচার। এই প্রসঙ্গে একস্থানে মোহিতলাল বলেছিলেন, “…… তাই প্রকৃতি চিত্রশালা এবং পাণ্ডিত্যের পুঁথিশালা দুইই ছিল তাঁহার সমান আশ্রয়। এই যে জানিবার ক্ষুধা এবং জানার আনন্দ – প্রধানতঃ এই দুইয়ের তাগিদে তিনি সরস্বতীর আরাধনা করিয়াছিলেন।”

সত্যেন্দ্রনাথের পিতা রজনীনাথের ইচ্ছা ছিল তাঁর পুত্র হোমিওপ্যাথিতে বড় চিকিৎসক হবেন। কিন্তু পিতার আকাঙ্ক্ষা তাঁর জীবনে পূর্ণ হয়নি। মামার উৎসাহে সত্যেন্দ্রনাথ আমদানি – রপ্তানির ব্যবসা শুরু করেন।

কিন্তু সাহিত্যানুরাগ যাঁর ধমনীতে প্রবাহিত বাণিজ্যলক্ষ্মীর সাধনায় তাঁর তৃপ্তি আসবে কেন? অচিরেই স্বক্ষেত্রে ফিরে আসতে হল তাঁকে। নিজেকে পুরোপুরিভাবে সাহিত্য সাধনার কাজে নিয়োজিত করলেন।

১৯০০ খ্রিঃ যখন এফ.এ. ক্লাশের ছাত্র, সেই সময়েই সত্যেন্দ্রনাথের প্রথম কাব্যগ্রন্থ সবিতা প্রকাশিত হয়। সেই প্রথম কাব্যগ্রন্থ থেকেই বাঙালী কাব্যরসিকরা পেলেন নতুনেব আম্বাদ।

রবীন্দ্রনাথের আশীর্বাদ জুটতেও বিলম্ব হল না। তাঁর কবিতায় ছন্দের অপূর্ব কলা – কৌশলে মুগ্ধ হয়ে রবীন্দ্রনাথ তাঁকে ছন্দের যাদুকর আখ্যায় ভূষিত করলেন। এরপর থেকে পরপর সত্যেন্দ্রনাথের কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়ে চলল।

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত এর রচনা: Written by Satyendranath Dutta

সত্যেন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়েছিল সবিতা, সন্ধিক্ষণ, হোমশিখা, তীর্থসলিল, বেণু ও বীণা, তীর্থেরেণু, ফুলের ফসল, কুহু ও কেকা, তুলির লিখন, মনিমঞ্জুষা, অভ্র-আবীর এবং হসস্তিকা। মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়েছিল বেলা শেষের গান এবং বিদায় আরতি।

১৯০৫ খ্রিঃ লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গ সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতায় সমগ্র বাংলা দেশ জুড়ে যে সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সত্যেন্দ্রনাথ সেই আন্দোলনের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন। কিন্তু তাঁর কাব্যসাধনার গতি ছিল অব্যাহত। সেই আবহাওয়া তাঁর কাব্যের বিষয়-বৈচিত্র্যের সঙ্গে যুক্ত করে আর একটি ভাবসমৃদ্ধ ধারা, তা হল স্বদেশ-প্রেম।

সত্যেন্দ্রনাথের স্বদেশ-প্রেম মূলক কবিতার অধিকাংশই এই সময়ে রচিত হয়। খুবই স্বল্প আয়ু নিয়ে এসেছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ।

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত এর মৃত্যু: Satyendranath Dutta’s Death

তাঁর প্রতিভার পূর্ণভাবে বিকাশলাভের পূর্বেই ১৯২২ খ্রিঃ ২৫ শে জুন মাত্র একচল্লিশ বছর বয়সে তিনি পরলোক গমন করেন।

সত্যেন্দ্রনাথের কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ষোল। এক সময়ে উপন্যাস ও নাটক রচনাতেও তিনি হাত দিয়েছিলেন।

প্রথম উপন্যাস জন্মদুঃখী প্রকাশিত হয় ১৯১২ খ্রিঃ। এইটি নরওয়ের একটি উপন্যাসের বঙ্গানুবাদ। নাটক দুটির একটি ক্ষুদ্র নাটিকা, নাম ধূপের ধোঁয়া।

কয়েকটি বিদেশী নাটকের অনুবাদ নিয়ে প্রকাশিত হয় তাঁর দ্বিতীয় নাটকগ্রন্থ রঙ্গমল্লী। এছাড়া সত্যেন্দ্রনাথের মননশীলতার উজ্জ্বল স্বাক্ষর পাওয়া যায় তাঁর নিবন্ধগ্রন্থ চীনের ধূপ-এ। সত্যেন্দ্রনাথের কবিতার জনপ্রিয়তার মূলে ছিল ছন্দের চটুল আবেদন এবং প্রত্যক্ষ জগতের বাস্তব বিষয়াবলীর চিত্রসম্ভার।

আরও পড়ুন-

কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত কি উপাধি দেওয়া হয়েছে?

ছন্দের যাদুকর

সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কাব্যগ্রন্থ?

সবিতা, সন্ধিক্ষণ, হােমশিখা, তীর্থসলিল, বেণু ও বীণা, তীর্থেরেণু, ফুলের ফসল, কুহু ও কেকা, তুলির লিখন, মনিমঞ্জুষা, অভ্র – আবীর এবং হসন্তিকা।

Leave a Comment