Biography Of Suniti Kumar Chatterjee – সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় জীবনী

সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় জীবনী – Biography Of Suniti Kumar Chatterjee: আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মহান ব্যক্তিদের জীবনী সমগ্র। মহান ব্যক্তি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁদের জীবনের ক্ষুদ্রতম অংশগুলি আমাদের জন্য শিক্ষামূলক হতে পারে। বর্তমানে আমরা এই মহান ব্যক্তিদের ভুলতে বসেছি। যাঁরা যুগ যুগ ধরে তাদের কর্ম ও খ্যাতির মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প ও সাহিত্যের জগতে এক অনন্য অবদান রেখেছেন এবং তাঁদের শ্রেষ্ঠ গুণাবলী, চরিত্র দ্বারা দেশ ও জাতির গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। সেইসব মহান ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম সাহিত্যিক সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় (Suniti Kumar Chatterjee) -এর সমগ্র জীবনী সম্পর্কে এখানে জানব।

সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় জীবনী – Biography Of Suniti Kumar Chatterjee

নামসুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়
জন্ম26th নভেম্বর 1890
পিতাহরিদাস চট্টোপাধ্যায়
মাতা
জন্মস্থানভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার শিবপুর
জাতীয়তাভারতীয়
পেশাশিক্ষাবিদ, ভাষাবিজ্ঞানী ও সাহিত্যিক
মৃত্যু29th মে 1977

সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের পিতামাতা ও জন্মস্থান

প্রখ্যাত সাহিত্যিক, ভাষাতত্ত্ববিদ ও জাতীয় অধ্যাপক সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় (Suniti Kumar Chatterjee) ১৮৯০ খ্রিঃ ২৬ শে নভেম্বর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হরিদাস চট্টোপাধ্যায়।

সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের উপাধি

সুনীতি কুমারের জীবনেতিহাস প্রকৃত পক্ষে নতুন নতুন জ্ঞান অন্বেষণের এক ধারাবাহিক চমকপ্রদ ইতিহাস। তিনি ছিলেন যথার্থই জ্ঞানতাপস এবং তার জ্ঞানানুসন্ধান আমৃত্যু অব্যাহত ছিল। ভাষাতত্ত্ব ও ভাষা বিজ্ঞান ছাড়াও সঙ্গীত, চিত্রকলা প্রভৃতি বিষয়েও তার ব্যুৎপত্তি ছিল। রবীন্দ্রনাথ সুনীতি কুমারকে ভাষাচার্য উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন।

সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের শৈশ

শৈশবে অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া শিখতে হয়েছিল সুনীতি কুমারকে। ১৯০৭ খ্রিঃ মতিলাল শীল ফ্রী স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় ষষ্ঠস্থান অধিকার করেন। তৃতীয় স্থান অধিকার করেন স্কটিশচার্চ কলেজের এফ. এ পরীক্ষায়। ১৯১১ খ্রিঃ ইংরাজি অনার্স সহ এম. এ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন।

জ্ঞানানুসন্ধানের ক্ষেত্রে এই কৃতিত্ব তাকে উত্তরােত্তর সাফল্য ও গৌরবের অধিকারী করে তােলে।

এম.এ পাস করার পর শুরু হয় কর্মজীবন। বিদ্যাসাগর কলেজে ইংরাজি ভাষার অধ্যাপক রূপে যােগ দেন। পরের বছরে যােগ দেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানে ১৯১৯ খ্রিঃ পর্যন্ত ইংরাজির অধ্যাপনা করেন স্নাতকোত্তর বিভাগে।

১৯১৮ খ্রিঃ সংস্কৃতের মধ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সুনীতিকুমার প্রেমচাঁদ- রায়চাঁদ বৃত্তি ও জুবিলী গবেষণা পুরস্কার লাভ করেন। এই সালেই ধ্বনিতত্ত্ব সম্পর্কে ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে ইউরােপ যান।

সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের শিক্ষাজীবন

লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে ধ্বনিতত্ত্বে ডিপ্লোমা ও ১৯২১ খ্রিঃ ডি-লিট উপাধি লাভ করেন। বাংলা ভাষাতত্ত্ব ছিল তাঁর গবেষণার বিষয়। এখানেই তিনি বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের কাছে ধ্বনিতত্ত্ব, ইন্দো-ইউরােপীয় ভাষাতত্ত্ব প্রভৃতি, ফরাসী সাহিত্য, পুরাতন আইরিশ, ইংলিশ ও গােথিক ভাষা বিষয়ে পড়াশােনা করেন।

সুনীতিকুমার এর পর ছাত্র হিসেবে যােগ দেন প্যারিসের সারবােন বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এখানে তিনি বিচিত্র বিষয়ে পাঠগ্রহণ ও গবেষণা করেন। অধীত বিষয়ের বিচিত্রতাই প্রমাণ করে সুনীতি কুমারের আগ্রহ ও অনুসন্ধিৎসা। সেগুলাে হল- ভারতীয় আর্যভাষাতত্ত্ব, প্রাচীন সগডিয়ান ও মােটানী ভাষা, গ্রীক ও লাতিন ভাষার ইতিহাস প্রভৃতি।

এভাবেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন বহুভাষাবিদ পণ্ডিত।

১৯২২ খ্রিঃ দেশে ফিরে এসে স্যার আশুতােষের আগ্রহে তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় ভাষাতত্ত্বের প্রথম প্রফেসর নিযুক্ত হন। এই পদ থেকে অবসর গ্রহণের পরে ১৯৫২ খ্রিঃ নিযুক্ত হন এমেরিটাস প্রফেসর।

ভাষাতাত্ত্বিক ও বহুভাষাবিদ সুনীতিকুমারের (Suniti Kumar Chatterjee) খ্যাতি ইতিমধ্যে দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই খ্যাতি আরও বৃদ্ধি হয় তার বিখ্যাত গ্রন্থ ODBL অর্থাৎ Origin and Development of the Bengali Language- এর দুই খণ্ড প্রকাশিত হবার পর। এরপর লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয় তার কয়েকটি গ্রন্থ।

সেগুলাে হল ইন্দো-আরিয়ান অ্যান্ড হিন্দী, কিরাত জনকৃতি, বেঙ্গলী ফোনেটিক রিডার প্রভৃতি। রবীন্দ্রনাথ ১৯২৭ খ্রিঃ সুমাত্রা, জাভা, বাের্নিও ও শ্যাম দেশ পরিভ্রমণ করেন।

সুনীতিকুমারও তার সঙ্গে গিয়েছিলেন এবং বিভিন্ন স্থানে ভারতের স্কৃতি ও শিল্প বিষয়ে বক্তৃতা করেন। তার এই ভ্রমণ বৃত্তান্ত নিয়ে রচনা করেন দ্বীপময় ভারত। ভাষা তত্ত্বের বিভিন্ন সম্মেলন ও সেমিনার উপলক্ষে কখনাে বিদেশের আমন্ত্রণে কখনাে ভারতের প্রতিনিধি হয়ে তিনি বহুবার ইউরােপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করে ভাষণ দেন ও আলােচনায় অংশ গ্রহণ করেন।

হিন্দী ভাষায় অবদানের জন্য এলাহাবাদের হিন্দী সাহিত্য সম্মেলনকে সাহিত্য বাচস্পতি উপাধি দান করেন। এছাড়াও দেশ বিদেশের বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান লাভ করেন।

সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের কর্ম জীবন

কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে অধ্যাপনা করেন।

সুনীতিকুমার ১৯৫০-৫১ খ্রিঃ ইউনেস্কো আয়ােজিত ব্রেইল অক্ষর কমিটিতে যােগ দিয়েছিলেন। ১৯৫২-৬৮ খ্রিঃ পর্যন্ত তিনি বিধান পরিষদের অধ্যক্ষ ছিলেন। ভারত সরকার তাকে ১৯৬৩ খ্রিঃ পদ্মবিভূষণ উপাধিতে সম্মানিত করেন।

মানবিক তত্ত্বে গবেষণা ও কৃতিত্বের জন্য তিনি জাতীয় অধ্যাপকের সম্মান লাভ করেন। ১৯৬৯ খ্রিঃ তিনি সাহিত্য একাডেমির সভাপতি নির্বাচিত হন। বাংলা সাহিত্যে সুনীতি কুমারের উল্লেখযােগ্য অবদান হল চন্ডীদাসের পদাবলীর প্রামাণ্য সংস্করণ সংকলন ও সম্পাদনা বিশ্বসাহিত্যের পটভূমিকায় রবীন্দ্রসাহিত্যের বিচার বিশ্লেষণ সারস্বত মহলের সমাদর লাভ করে।

সারাজীবনে সুনীতিকুমার ৩০০ টিরও বেশি পাণ্ডিত্যপূর্ণ গ্রন্থ লিখেছেন।

সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যু

১৯৬৬ খ্রিঃ ২৯ শে মে এই বিশ্ববিশ্রুত ভাষাবিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদের কর্মজীবনের অবসান ঘটে।

আরও পড়ুন-

Leave a Comment