Biography of Ashapurna Devi – আশাপূর্ণা দেবী জীবনী

আশাপূর্ণা দেবী জীবনী – Biography of Ashapurna Devi: আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মহান ব্যক্তিদের জীবনী সমগ্র। মহান ব্যক্তি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁদের জীবনের ক্ষুদ্রতম অংশগুলি আমাদের জন্য শিক্ষামূলক হতে পারে। বর্তমানে আমরা এই মহান ব্যক্তিদের ভুলতে বসেছি। যাঁরা যুগ যুগ ধরে তাদের কর্ম ও খ্যাতির মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প ও সাহিত্যের জগতে এক অনন্য অবদান রেখেছেন এবং তাঁদের শ্রেষ্ঠ গুণাবলী, চরিত্র দ্বারা দেশ ও জাতির গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। সেইসব মহান ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম শিশু সাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবী -এর সমগ্র জীবনী সম্পর্কে এখানে জানব।

আশাপূর্ণা দেবী জীবনী – Biography Of Ashapurna Devi

নামআশাপূর্ণা দেবী
জন্ম8th জানুয়ারি 1909
জন্মস্থানউত্তর কলকাতায় মাতুলালয়
পিতাহরেন্দ্রনাথ গুপ্ত
মাতাসরলাসুন্দরী দেবী
জাতীয়তাভারতীয়
পেশালেখক, ঔপন্যাসিক
মৃত্যু13th জুলাই 1995

আশাপূর্ণা দেবী কে ছিলেন? Who is Ashapurna Devi?

আশাপূর্ণা দেবী বাংলা সাহিত্যে প্রতিষ্ঠিত ও খ্যাত কীর্তি লেখকদের মধ্যে সম্ভবতঃ আশাপূর্ণা দেবীই একমাত্র ব্যক্তিত্ব যিনি বাংলা ছাড়া অন্য কোন ভাষা জানতেন না। রক্ষণশীল পরিবারে জন্ম হওয়ার জন্য স্কুল কলেজের বিধিবদ্ধ লেখাপড়ার সুযােগও তিনি পান নি। তিনি ছিলেন স্বসৃষ্টি এবং আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক। ১৯০৯ খ্রিঃ ৮ ই জানুয়ারী কলকাতায় জন্ম। তাদের আদিনিবাস ছিল হুগলির বেগমপুরে।

আশাপূর্ণা দেবীর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Ashapurna Devi’s Parents And Birth Place

পিতার নাম হরেন্দ্রনাথ গুপ্ত। কমার্শিয়াল আর্টিস্ট হিসেবে তার সুখ্যাতি ছিল। সম্ভবতঃ পিতার শিল্প প্রতিভাই আশাপূর্ণাকে সাহিত্যচর্চার প্রেরণা জুগিয়েছিল।

নিজের বাড়িতে পড়াশােনার যেটুকু সুযােগ পেয়েছিলেন তাতেই সহজাত সাহিত্য প্রতিভা মুকুলিত হয়েছিল। ছােটদের লেখা দিয়েই হয়েছিল হাতেখড়ি এবং শিশু সাহিত্যের চর্চার মাধ্যমেই তিনি সাহিত্যক্ষেত্রে পদার্পণ করেছিলেন। তেরাে বছর বয়সে তার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়েছিল শিশুসাথী পত্রিকায়।

তখনকার দিনের রীতি অনুযায়ী পনের বছর বয়সেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। শশুর ঘরের পরিবেশে স্বামীর ঐকান্তিক আগ্রহে ও উৎসাহে গৃহকর্মের অবসরে সাহিত্য চর্চার সুযােগ করে নেন।

গৃহবধূ এবং মা হিসেবে সংসারে তার যে কর্মক্ষেত্র সাহিত্য রচনা কোন দিন সেখানে তার কাজের বাঁধা হয়ে ওঠেনি। আশ্চর্য ছিল তার প্রতিভা।

সাহিত্য সৃষ্টির জন্য বিশেষ কোন পরিবেশ বা সময়ের প্রয়ােজন হতাে না। সংসারের কাজের অবসরেই তিনি সৃষ্টি করেছেন অনবদ্য সাহিত্য। ১৯৩৮ খ্রিঃ তাঁর বই প্রথম প্রকাশিত হয়। ছােট ঠাকুরদার কাশী যাত্রা বইটি সরস লেখনীর গুণে এবং ঘরােয়া পরিবেশের বাস্তব চিত্র রূপ অঙ্কনের জন্য ছােটদের মন জয় করেছিল।

এরপর থেকেই বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় অনিয়মিত রচনা প্রকাশ নিয়মিত হয়ে ওঠে। তার লেখাও চলতে থাকে বিরামহীন গতিতে।

১৯৪৪ খ্রিঃ আশাপূর্ণার প্রথম উপন্যাস প্রেম ও প্রয়ােজন প্রকাশিত হয়। মধ্যবিত্ত পরিবারের নারীপুরুষের চাওয়া পাওয়া, মানসিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত প্রেম-বিরহ সেই সঙ্গে সমসাময়িক সামাজিক পটভূমি, প্রয়ােজন-অপ্রয়ােজন -এই ছিল আশাপূর্ণার সাহিত্যের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।

অন্তঃপুরে থেকেই মেয়েদের বহির্মুখী জীবন তিনি আশ্চর্য দক্ষতায় চিত্রায়িত করেছেন। আধুনিক সমাজের যথাযথ ভূমিকা নিয়েই তার সাহিত্যে উপস্থিত হয়েছে। আধুনিক মেয়েদের কথা তিনি বলেছেন, তাঁদের চাহিদা ও ত্যাগের সব খবরই তিনি রাখতেন।

তবু আধুনিকতার বিলাসিতা তার সাহিত্যে কখনাে প্রশ্রয় পায়নি। যা কিছু রুচিহীন, বিকৃত তার প্রতি তার অবজ্ঞা ও ব্যঙ্গ প্রকাশ পেয়েছে। তবে সহানুভূতি ও সহমর্মিতা কখনাে বিসর্জন দেননি।

গােটা নারী সমাজের আশা আকাঙক্ষা দুঃখবেদনার কথা তিনি অকপটে সহজ সরল ভাষায় ও ভঙ্গিতে প্রকাশ করেছেন। পুরুষদের মনের দ্বন্দ্ব-সংঘাতও তিনি যথাযথ রূপে প্রকাশ করতে পেরেছেন। আশাপূর্ণার সাহিত্যসৃষ্টির সার্থকতা এখানেই। অসংখ্য গল্প ও উপন্যাস সারা জীবনে তিনি লিখেছেন।

কোন লেখা তার অনাদৃত হয়নি। তার লেখা বাঙালী মেয়েদের উজ্জীবিত করেছে।

আশাপূর্ণা দেবীর রচনা: Written by Ashapurna Devi

আশাপূর্ণার সার্থক ট্রিলজি প্রথম প্রতিশ্রুতি, সুবর্ণলতা, বকুলকথা। প্রথম প্রতিশ্রুতির জন্য ১৯৭১ খ্রিঃ তিনি দেশের সর্বোচ্চ জ্ঞানপীঠ সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।

দীর্ঘ সত্তর বছরের জীবনে তিনি অকাতরে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখা দিয়েছেন। লেখার প্রার্থীদের তিনি কখনাে বিমুখ করতেন না। সারাজীবনে রচনা করেছেন প্রায় দুশাে উপন্যাস।

ছােটগল্প সংকলন ও ছােটদের বই নিয়ে গ্রন্থ সংখ্যা সত্তরেরও বেশি। বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় তার ষাটটিরও বেশি গ্রন্থ অনূদিত হয়েছে।

আশাপূর্ণা দেবীর পুরস্কার ও সম্মান: Ashapurna Devi’s Awards And Honors

সাহিত্যকৃতির জন্য রবীন্দ্রপুরস্কার, সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি-লিট উপাধি পেয়েছেন।

আশাপূর্ণা দেবীর মৃত্যু: Ashapurna Devi’s Death

১৯৭১ খ্রিঃ ১৩ ই জুন এই অসামান্য লেখকের জীবনাবসান হয়।

আরও পড়ুন-

Q. আশাপূর্ণা দেবীর বিখ্যাত উপন্যাস?

প্রেম ও প্রয়োজন (১৯৪৪) (প্রথম) মিত্তির বাড়ি (১৯৪৭) অনির্বাণ (১৯৪৫) অগ্নিপরীক্ষা (১৯৫২) নবজন্ম (১৯৫৪) কল্যাণী (১৯৫৪) যোগবিয়োগ (১৯৫৩) নির্জন পৃথিবী (১৯৫৫) সমুদ্র নীল আকাশ নীল (১৯৬১) দিগন্তের রঙ (১৯৬২) নদী দিক হারা (১৯৬২) কড়া পাকের পাকচক্র (১৯৯৭) প্ল্যানচেট (১৯৯৯) ছাড়পত্র (১৯৫৯) -প্রভৃতি।

Q. আশাপূর্ণা দেবীর উক্তি?

সাহিত্যকে যদি এক একটি কালের অথবা এক একটি ভাষার গণ্ডির মধ্যে খণ্ডমূর্তিতে দেখা হয়, সেটা ঠিক দেখা হবে না। তার সেই খণ্ড বিচ্ছিন্ন নানামূর্তির ঊর্দ্ধে আর এক অখণ্ড মূর্তি বিরাজিত, সে হচ্ছে যুগ যুগান্তর সঞ্চিত মানস চেতনার একটি অবিচ্ছিন্ন চিন্তাধারার আলোক। সেই আলোকধারা যুগের সঙ্গে যুগের সেতু নির্মাণ করে চলেছে অতীত থেকে ভবিষ্যতে। এইখানেই সাহিত্যের অপরিহার্যতা, এইখানেই সাহিত্যের মূল্য। সাহিত্য অতীতকে রক্ষা করে, বর্তমানকে সমৃদ্ধ করে আর উত্তরকালের জন্য সঞ্চয় করে।
সাহিত্য চিরদিনই দুঃসাহসিক অভিযানের যাত্রী। প্রতি পদক্ষেপই তার নতুন পরীক্ষায় চঞ্চল। বন্ধুর পথকে জয় করতে পারায় তার উল্লাস। তাই অহরহই তার ভাঙা গড়ার খেলা। প্রতিনিয়তই সে পরীক্ষা নিরীক্ষায় অস্থির। এই অস্থিরতাই সাহিত্যের ধর্ম। বিশেষ কোনো একটি মহৎ লক্ষ্যে পৌঁছে, বিশেষ কোনো একটি দর্শনের সত্যকে আঁকড়ে ধরে, বাকী কালটা গুছিয়ে বসবে, এমন পাত্র সাহিত্য নয়। সাহিত্য নদীর সমগোত্রীয়, সরোবরের নয়।

Q. আশাপূর্ণা দেবী ছদ্মনাম?

আশাপূর্ণা দেবী বাংলা সাহিত্যে প্রতিষ্ঠিত ও খ্যাত কীর্তি লেখকদের মধ্যে সম্ভবতঃ আশাপূর্ণা দেবীই একমাত্র ব্যক্তিত্ব যিনি বাংলা ছাড়া অন্য কোন ভাষা জানতেন না। রক্ষণশীল পরিবারে জন্ম হওয়ার জন্য স্কুল কলেজের বিধিবদ্ধ লেখাপড়ার সুযােগও তিনি পান নি। তিনি ছিলেন স্বসৃষ্টি এবং আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক।

Q. আশাপূর্ণা দেবীর প্রথম উপন্যাস কোনটি?

প্রেম ও প্রয়োজন

Leave a Comment