সত্যেন্দ্রনাথ বসু জীবনী – Satyendra Nath Bose Biography in Bengali

সত্যেন্দ্রনাথ বসু জীবনী: আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মহান ব্যক্তিদের জীবনী সমগ্র। মহান ব্যক্তি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁদের জীবনের ক্ষুদ্রতম অংশগুলি আমাদের জন্য শিক্ষামূলক হতে পারে। বর্তমানে আমরা এই মহান ব্যক্তিদের ভুলতে বসেছি। যাঁরা যুগ যুগ ধরে তাদের কর্ম ও খ্যাতির মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প ও সাহিত্যের জগতে এক অনন্য অবদান রেখেছেন এবং তাঁদের শ্রেষ্ঠ গুণাবলী, চরিত্র দ্বারা দেশ ও জাতির গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। সেইসব মহান ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম সত্যেন্দ্রনাথ বসু (Satyendra Nath Bose) -এর সমগ্র জীবনী সম্পর্কে এখানে জানব।

সত্যেন্দ্রনাথ বসু জীবনী – Satyendra Nath Bose Biography in Bengali

নামসত্যেন্দ্রনাথ বসু (Satyendra Nath Bose)
জন্ম1st জানুয়ারী 1894
পিতাসুরেন্দ্রনাথ বসু
মাতাআমোদিনী দেবী
জন্মস্থানকলকাতা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত
জাতীয়তাভারতীয়
পেশাপদার্থবিজ্ঞানী
মৃত্যু4th ফেব্রুয়ারি 1974 (বয়স 80)

সত্যেন্দ্রনাথ বসু কে ছিলেন? Who is Satyendra Nath Bose?

সত্যেন্দ্রনাথ বসু স্বদেশপ্রেমের প্রেরণায় ভারতকে জগৎসভায় প্রতিষ্ঠিত করবার দুর্বার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে যেসব৷

মনীষী অক্লান্ত সাধনায় জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে অন্যতম অগ্রপুরুষ বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু।

বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান শিক্ষা ও বিজ্ঞান প্রচারের কাজে তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিজেকে ব্যাপৃত রেখে দেশবাসীর সামনে এক অনন্য আদর্শ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।

সত্যেন্দ্রনাথ বসু এর জন্ম: Satyendra Nath Bose’s Birthday

সত্যেন্দ্রনাথের জন্ম ১৮৯৪ খ্রিঃ ১ লা জানুয়ারি, কলকাতায়। তাঁদের আদি নিবাস ছিল নদীয়া জেলার সুবর্ণপুরে।

পিতার নাম সুরেন্দ্রনাথ বসু। অসাধারণ মেধা ও স্মৃতিশক্তি নিয়ে জন্মেছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ। যা পড়তেন, তন্ময় হয়ে পড়তেন, আর একবারের পড়াতেই পাঠ্যবিষয় আত্মস্থ হয়ে যেত।

প্রায় সময়েই দেখা যেত বইয়ের পড়া পাতা তিনি ছিঁড়ে ফেলে দিচ্ছেন। মা এ নিয়ে বকাবকি করলে তিনি বলতেন, যেসব পাতা পড়া হয়ে গেছে সেগুলো ছিঁড়ে ফেলছেন৷

বুঝে বুঝে কোন বিষয় একবার পড়লে সে বিষয় তাঁর দ্বিতীয়বার পড়ার দরকার হত না। গণিতে ছিল সত্যেন্দ্রনাথের অসাধারণ দখল। এন্ট্রান্স পরীক্ষার টেস্টে হিন্দু স্কুলের মাষ্টারমশাই উপেন্দ্রনাথ বক্সী তাঁকে একশ নম্বরের মধ্যে ১১০ নম্বর দিয়েছিলেন।

এমন বিচিত্র অবস্থা কেন ঘটিল এই সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে মাস্টারমশাই বলেছিলেন, প্রশ্নপত্রে ১১ টি অংঙ্কের মধ্যে ১০ টি কষতে বলা হলে সত্যেন্দ্রনাথ ১১ টি অঙ্কই সঠিকভাবে কষেছিলেন।

কেবল তাই নয়, জ্যামিতি বিভাগের অতিরিক্ত সমস্যাগুলি (একসট্রা) দেওয়া হয়েছিল, সেগুলিরও তিনি সমাধান করেছিলেন দু-তিন রকম বিকল্প পদ্ধতিতে।

সত্যেন্দ্রনাথ বসু এর শিক্ষাজীবন: Satyendra Nath Bose’s Educational Life

পড়াশোনায় ছিলেন যেমন চৌকস তেমনি দুষ্টুমিতেও পিছিয়ে ছিলেন না সত্যেন্দ্রনাথ। বন্ধুদের পেছনে যেমন লাগতেন, মাস্টারমশাইদেরও নাজেহাল করতেন কম না। একবার মাস্টারমশাই ক্লাশে বলবিদ্যার বিষয় বোঝাচ্ছেন- বল x সরণ = কার্য। বিষয়টা বুঝতে পারেননি এমনি ভান করে সত্যেন্দ্রনাথ জানতে চাইলেন

একটা বিশাল পাথরকে অনেকবার ঠেলে গলদঘর্ম হয়েও সরানো গেল না, এ অবস্থায় কার্য বলা হবে কিনা।

এধরনের কিশোরসুলভ দুষ্টুমি করে সত্যেন্দ্রনাথ খুবই মজা পেতেন। কলেজেও তার এই অভ্যাস যথারীতি বজায় ছিল। এসম্পর্কে তিনি নিজেই বলেছেন, “ শান্তশিষ্ট সুবোধ বালকের সুনাম কলেজে আমার ছিল না।

তাই কোনদিন কোন কারণে, যা আমার এখন মনে নেই, ডাঃ রায়ের মনে হয়েছিল, ক্লাশের বক্তৃতা নিজে যথেষ্ট মনোযোগ দিয়ে শুনছি না এবং নিকটের বন্ধুদেরও চিত্তবিক্ষেপ ঘটিয়েছি। তাতে আদেশ জারি হলো- বক্তৃতার সময় সকলের থেকে পৃথক হয়ে বসতে হবে মঞ্চের রেলিং -এর ওপরে যেখানে গুরুদেব স্বয়ং দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দেন প্রত্যহ।

আরও পড়ুন- চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামন জীবনী

যেই সময়ের কথা সত্যেন্দ্রনাথ বলেছেন, তখন তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে আই এসসি ক্লাশের ছাত্র। আর ডাঃ রায় হলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র। বলাই বাহুল্য, নানা কূটপ্রশ্নে বিব্রত হবার আশাঙ্কাতেই রসায়নের ক্লাশে আচার্যদেব সত্যেন্দ্রনাথকে অন্য ছাত্রদের থেকে আলাদা করে বক্তৃতা মঞ্চের রেলিং -এ বসিয়ে রাখতেন।

স্কুলে কলেজে এভাবেই পড়াশুনার সঙ্গে হাসিঠাট্টা গল্পে মেতে থাকতেন সত্যেন্দ্রনাথ।

১৯০৯ খ্রিঃ এন্ট্রান্স পরীক্ষায় হিন্দুস্কুল থেকে সত্যেন্দ্রনাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম স্থান লাভ করেছিলেন। সেই বছর একই নম্বর পেয়ে ব্রেকেটে ফিফথ হয়েছিলেন হেয়ার স্কুলের আরও এক ছাত্র, তার নাম মানিকলাল দে। স্কুলের পাঠ শেষ করে প্রেসিডেন্সিতে আই.এসসি ক্লাশে ভর্তি হন সত্যেন্দ্রনাথ।

১৯১১ খ্রিঃ আই. এসসি পরীক্ষার তিনি হয়েছিলেন প্রথম, আর মানিকলাল হয়েছিলেন দ্বিতীয়। পরবর্তীকালে বন্ধু মানিকলালের কর্মক্ষেত্র আলাদা হয়ে গেলেও দুজনের মধ্যে সম্পর্ক ছিল নিবিড়।

বন্ধুবৎসল সত্যেন মানিকলালের অস্তিম সময়েও শয্যাপার্শ্বে ছিলেন। ছাত্র হিসেবে সত্যেন্দ্রানাথের কৃতিত্ব বরাবরই ছিল ঊর্ধ্বমুখী।

এন্ট্রান্স পরীক্ষায় পঞ্চম স্থান পেয়েছিলেন, তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক পরীক্ষাতেই তার প্রথম স্থানটি ছিল বাঁধা। আই. এসসিতে প্রথম অনার্স নিয়ে বি. এসসিতে প্রথম, মিশ্র গণিতে এম. এসসিতে প্রথম।বি.এসসি ও এম.এসসিতে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেছিলেন মেঘনাদ সাহা।

এম . এসসি পরীক্ষায় ১৯১৫ খ্রিঃ সত্যেন্দ্রনাথ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯২ নম্বর পেয়ে রেকর্ড স্থাপন করেছিলেন, এখনো পর্যন্ত সেই রেকর্ড অক্ষুণ্ণ রয়েছে।

বিজ্ঞানের ছাত্র সত্যেন্দ্রনাথ ইংরাজি ভাষাতেও ছিলেন সমান পারদর্শী। প্রেসিডেন্সি কলেজে আই.এসসি পরীক্ষায় টেস্টে অধ্যাপক তার ইংরাজি রচনা পড়ে মুগ্ধ হয়ে খাতার ওপরে মন্তব্য লিখেছিলেন, ‘ এই ছাত্রটি অসাধারণ, এর নিজস্ব কিছু বলবার ক্ষমতা আছে।

আরও পড়ুন- জগদীশচন্দ্র বসু জীবনী

বাংলা ও ইংরাজি সাহিত্যের বহু গ্রন্থের সঙ্গে সংস্কৃত সাহিত্যের কালিদাস, ভবভূতি প্রমুখ যশস্বী লেখকদের রচনা ও ছাত্রাবস্থাতেই পাঠ করেছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ।

সেই সঙ্গে শিখে নিয়েছিলেন ফরাসি ভাষা। ১৯১৭ খ্রিঃ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তদানীন্তন উপাচার্য আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের ঐকান্তিক উদ্যোগে কলকাতায় বিজ্ঞান কলেজের প্রতিষ্ঠা হয়।

এখানে স্নাতকোত্তর স্তরে পদার্থ বিদ্যায় পঠনপাঠন শুরু হবার এক বছর আগে থেকেই স্যার আশুতোষ সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা ও শৈলেন ঘোষকে ডেকে পাঠিয়ে অধ্যাপনার দায়িত্ব নেবার জন্য তৈরি হতে বলেন এবং তাঁদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করে দেন।

পরে এই তিনজন এবং আরও কয়েকজন কৃতবিদ্য তরুণকে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার পদে নিয়োগ করে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ চালু হয়।

বিজ্ঞান কলেজে সতেন্দ্রনাথ পদার্থবিদ্যা ও গণিত এই দুই বিষয়ের ক্লাশ নিতেন। অধ্যাপক হিসেবেও তিনি তাঁর ছাত্রদের শ্রদ্ধা লাভ করতে সমর্থ হয়েছিলেন।

সত্যেন্দ্রনাথ বসু এর কর্ম জীবন: Satyendra Nath Bose’s Work Life

বিজ্ঞানের নতুন ধ্যান-ধারণার সঙ্গে পরিচিত হবার প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব বুঝতেন সত্যেন্দ্রনাথ।

সেই সময় কলকাতায় বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয় সব বই ও পত্র পত্রিকা সংগ্রহ করা সহজ সাধ্য ছিল না। সত্যেন্দ্রনাথ এবিষয়ে জার্মান ভাষার বই ও পত্র-পত্রিকা পড়বার জন্য এসময়ে জার্মান ভাষাও শিখে নিয়েছিলেন।

সত্যেন্দ্রনাথ তাঁর প্রথম গবেষণাপত্র প্রস্তুত করেছিলেন মেঘনাদ সাহার সহযোগিতায়। ১৯১৮ খ্রিঃ এই প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় সুপ্রসিদ্ধ বিজ্ঞান পত্রিকা ফিলজফিক্যাল ম্যাগাজিনে।

আরও পড়ুন- অস্কার ওয়াইল্ড জীবনী

গ্যাসের আয়তন, চাপ ও উষ্ণতার মধ্যে যে সম্পর্ক রয়েছে এবং গ্যাসীয় অণুগুলির আয়তন দ্বারা তা কিভাবে প্রভাবিত হয়, ওই প্রবন্ধে তারা তা আলোচনা করেন।

গ্যাসীয় অণুর আয়তনের প্রভাবকে সঠিক বিবেচনায় রেখে তারা যে সম্পর্ক নির্ণয় করেন, তাই পরবর্তীকালে সাহা-বোস অবস্থা সমীকরণ নামে পরিচিত হয়।

সত্যেন্দ্রনাথের দুটি গণিত বিষয়ক প্রবন্ধ ১৯১৯ খ্রিঃ প্রকাশিত হয়। ১৯২০ খ্রিঃ কোয়ান্টাম তত্ত্বের ভিত্তিতে বর্ণালি বিশ্লেষণ সম্পর্কিত তার একটি প্রবন্ধ ফিলজফিক্যাল ম্যাগাজিন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরের বছরেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রিডার পদে যোগদান করেন।

ঢাকা যাবার আগে সত্যেন্দ্রনাথ মেঘনাদ সাহার সঙ্গে যৌথভাবে অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব বিষয়ে আইনস্টাইন ও হার্মান মিনকায়োস্কি রচিত কয়েকটি বিখ্যাত প্রবন্ধ মূল জার্মান ভাষা থেকে ইংরাজিতে অনুবাদ করেছিলেন।

ইংরাজি ভাষায় ওই প্রবন্ধের এগুলিই প্রথম অনুবাদ।

১৯২০ খ্রিঃ প্রবন্ধগুলি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছিল। সাতাশ বছর বয়সে সত্যেন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। সেই সময়ে জার্মানির প্রখ্যাত তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্লাঙ্কের গবেষণাপত্রের সংগ্রহ থার্মোডাইনলামিক্স উন্ড ওয়ার্মেস্ট্রালুং সত্যেন্দ্রনাথের হাতে পড়ে।

এই গ্রন্থের মহামূল্যবান প্রবন্ধগুলি গভীরভাবে অধ্যয়ন করে সত্যেন্দ্রনাথ বুঝতে পারেন প্ল্যাঙ্কের এই তাত্ত্বিক গবেষণার ভিত্তি হল আইনস্টাইনের অপেক্ষবাদ। প্ল্যাঙ্কের এই অতি জটিল গবেষণার মধ্যে ডুবে গিয়ে নতুন নতুন গাণিতিক সমীকরণের সিঁড়ি ভেঙ্গে এগিয়ে একসময় আবিষ্কার করে ফেলেন প্ল্যাঙ্কের তত্ত্বের একটি ভ্রান্তি।

এবিষয়ে তিনি চার পাতার একটি প্রবন্ধও দাঁড় করিয়ে ফেলেন। নাম দেন ‘প্ল্যাঙ্কের সূত্র ও আলোক কোয়া প্রকল্প ‘। সতেন্দ্রনাথ পদার্থবিদ্যা সংক্রান্ত একটি ভারতীয় জার্নালে প্রকাশের জন্য প্রবন্ধটি পাঠিয়ে দেন। সময়টা ১৯২৪ খ্রিঃ। যথারীতি প্রবন্ধটি ছাপার অযোগ্য ছাপ নিয়ে ফেরত আসে।

আরও পড়ুন- আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় জীবনী

সত্যেন্দ্রনাথ তাতেও না দমে গিয়ে পরপর বহু বিদেশী জার্নালে প্রবন্ধটি পাঠালেন। কিন্তু আধুনিক পদার্থবিদ্যার তাত্ত্বিক শাখার রূপকার ও মহাবিজ্ঞানী প্ল্যাঙ্কের ভুল ধরা ওই প্রবন্ধ সবজায়গাতেই অমনোনীত হল। শেষে এক দুঃসাহসী কাজ করে বসলেন সত্যেন্দ্রনাথ- চারপাতার ক্ষীণকায় প্রবন্ধটি খোদ আইনস্টাইনের কাছেই পাঠিয়ে দিলেন।

হালকা চেহারার প্রবন্ধটির মধ্যে এক ভারতীয় অধ্যাপকের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম গণনার গাণিতিক ক্ষমতার পরিচয় পেয়ে বিস্মিত হন শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী আইনস্টাইন।

কেবল তাই নয়, এই প্রবন্ধের সূত্র ধরেই একটি আদর্শ কণা তত্ত্বের ধারণার আভাসও পেয়ে যান তিনি।

আইনস্টাইন সব কাজ ফেলে রেখে ইংরাজি থেকে জার্মান ভাষায় অনুবাদ করে প্রবন্ধটি পাঠিয়ে দিলেন বিখ্যাত বিজ্ঞান জার্নাল Zeitschrift fuer physik ( ওসাইট শিফট ফ্যুর ফিজিক ) -এ প্রকাশের জন্য। S. N. Bose নামে যথারীতি প্রবন্ধটি প্রকাশলাভ করল।

চারপাতার প্রবন্ধের মহাআবিষ্কারের সূত্রে রাতারাতি সত্যেন্দ্রনাথ বিশ্ববিজ্ঞানী মহলে পরিচিতি লাভ করলেন। কি ছিল এই প্রবন্ধে? বায়ুমন্ডলে রয়েছে অম্লজান, উদজান, সোরাজান অঙ্গার ঘটিত সমস্ত গ্যাস।

কিন্তু গ্যাসের এই অসংখ্য অণুকে পৃথক করে চেনার উপায় নেই, ব্যষ্টির এই সমন্বয় সমষ্টির মধ্যেই প্রকাশযোগ্য। গ্যাসের এই অণুসমগ্রের গতিকে সঠিকভাবে বোঝাবার জন্য সাংখ্যায়নিক পদ্ধতিকে প্রথম ব্যবহার করেন ঊনিশ শতকের দুই পদার্থবিজ্ঞানী ম্যাক্সওয়েল ও বোলৎসম্যান ৷

তাঁরা জানালেন অসংখ্য গ্যাস অণুর সমাবেশে প্রত্যেকটি অণুর বিক্ষিপ্ত গতির হদিস করা বৃথা। ভাবতে হবে তাদের সামগ্রিক গতির কথা। এরপর ১৯০০ খ্রিঃ জার্মান তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক বস্তুর বিকিরণে বিভিন্ন শক্তির পরিমাপ করার জন্য এক সূত্রের আবিষ্কার করেন গাণিতিক প্রক্রিয়ায়।

বিশ্ববিজ্ঞানের ইতিহাসে এই সূত্রই প্ল্যাঙ্ক সূত্র নামে পরিচিত। প্ল্যাঙ্ক বললেন, বিকিরণে শক্তির পরিবর্তন হয় কোয়ান্টাম বা শক্তি কোয়ার মাধ্যমে।

আলোক কোয়ান্টা যাকে বলা হয়, প্ল্যাঙ্কের মতে তা হল প্রকৃত পক্ষে চৌম্বক তরঙ্গের শক্তি কোয়ান্টা।

প্ল্যাঙ্কের এই ধারণাই কোয়ান্টামবাদ নামে পরিচিত। এই তত্ত্বই পদার্থবিজ্ঞানে আধুনিক ধারণার প্রতিষ্ঠা করেছে। সতেরো আঠারো শতকে নিউটন তাঁর গতিবিদ্যায় ধারণা প্রকাশ করেছিলেন যে, শক্তির পরিবর্তন ঘটে নিরবচ্ছিন্ন ধারায়।

আর প্ল্যাঙ্ক বললেন শক্তির পরিবর্তন কখনওই নিরবচ্ছিন্ন নয়। বিজ্ঞানের জগতে দ্বন্দ্ব উপস্থিত হল নিউটনের নিরবচ্ছিন্ন শক্তিবাদ ও প্ল্যাঙ্কের কোয়ান্টামবাদকে কেন্দ্র করে। আইনস্টাইন প্ল্যাঙ্কের আলোেক কোয়ান্টামকে নিজের গবেষণায় ফোটনরূপে প্রতিষ্ঠা করেন।

সত্যেন্দ্রনাথ বিকিরণ প্রসূত আলোক কোয়ান্টাকে বস্তুকণা রূপে কল্পনা করে তার কণা চরিত্র মাত্র বজায় রাখলেন। তিনি এই কণা চরিত্র ধরেই প্ল্যাঙ্কের সূত্রের সংস্কার করলেন এবং গড়ে তুললেন এক অসাধারণ সাংখ্যায়নিক সমস্যা।

সত্যেন্দ্রনাথ এই সমস্যার সমাধানে বসে বস্তুকণায় রচিত গ্যাসের প্রকৃতি ব্যাখ্যায় প্রচলিত সাংখ্যায়নিক পদ্ধতি ভরহীন আলোক কোয়ান্টা ভাবনাকে বর্জন করলেন। সেখানে তিনি ধারণা করলেন ভরযুক্ত কণাকে। এইভাবেই প্ল্যাঙ্কের বিকিরণ সূত্র নতুন রূপ লাভ করল।

আরও পড়ুন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী

এই বস্তুকণা ভিত্তিক ভাবনায় প্ল্যাঙ্কের সূত্রের পুনর্গঠনের অভিনবত্ব ও গুরুত্ব বিজ্ঞানের বিস্ময় প্রতিভা আইনস্টাইনকে অভিভূত করেছিল।

তিনি বোসের সাংখ্যায়নিক বিধি বা বোস স্ট্যাটিসটিকস প্রয়োগ করলেন পরমাণু বস্তুকণা দ্বারা সংগঠিত সমষ্টির ওপর। এইভাবে তাঁর হাতে রূপলাভ করল একক পরমাণুসম্পন্ন গ্যাসের কোয়ান্টাম থিওরি বা কণাবাদ।

এই সাংখ্যায়নিক প্রয়োগ পদার্থবিদ্যায় বোস-আইনস্টাইন সংখ্যায়ন বা বোস আইস্টাইন স্ট্যাটিসটিকস নামে বিখ্যাত হয়। বর্তমানে তা কেবল বোস-সংখ্যায়ন নামেই অখ্যাত হয়ে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পি-এইচডি না- করা অখ্যাত অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ তাঁর চার পাতার প্রবন্ধের দৌলতে অঘটন ঘটিয়ে রাতারাতি জগদ্বিখ্যাত হয়ে গেলেন।

১৯২৪ খ্রিঃ সংখ্যায়নের ওপরে মাদাম কুরির সঙ্গে কাজ করবেন বলে সত্যেন্দ্রনাথ এলেন প্যারিসে।

মাদামের কাজ ছিল রসায়ন নির্ভর। যা হল পরীক্ষামূলক বিজ্ঞান। আর সত্যেন্দ্রনাথ হলেন গাণিতিক বা তাত্ত্বিক। তবু মাদাম এই অল্পবয়সী ভারতীয় অধ্যাপকের গাণিতিক প্রতিভার পরিচয় পেয়ে চমৎকৃত হন।

১৯২৫ খ্রিঃ সত্যেন্দ্রনাথ প্যারিস থেকে গেলেন জার্মানিতে। তাঁর জন্য এখানে আইনস্টাইন, প্ল্যাঙ্ক এবং শ্রোয়েডিঙ্গার- প্রবাদপ্রতিম এই বিজ্ঞানীরা প্রতীক্ষা করছিলেন।

সকলেই তার চারপাতার আশ্চর্য প্রবন্ধটির জন্য বারবার বিস্ময় প্রকাশ করলেন। বিশ্ববিজ্ঞানের অগ্রণী প্রতিভাদের কাছ থেকে সত্যেন্দ্রনাথ এই পুরস্কার লাভ করলেন তাঁর ত্রিশ বছর বয়সে।

সত্যেন্দ্রনাথ ভারতে ফিরে এসে আবার তার কাজে যোগ দিলেন। ততদিনে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি না থাকা সত্ত্বেও প্রফেসর পদে উন্নীত হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ ছেড়ে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের খয়রা অধ্যাপক পদে যোগ দিলেন ১৯৪৫ খ্রিঃ।

দেশে ফিরে সত্যেন্দ্রনাথ বোস সংখ্যায়ন সম্পর্কিত দ্বিতীয় একটি প্রবন্ধ আইনস্টাইনের কাছে পাঠালেন।

আইনস্টাইন জার্মান ভাষায় অনুবাদ করে প্রবন্ধটি একই জার্নালে প্রকাশ করলেন। সত্যেন্দ্রনাথের দ্বিতীয় গবেষণাটি গাণিতিক আলোচনা ও প্রমাণ হিসেবে প্রথম প্রবন্ধের চাইতেও উন্নত মানের ছিল।

কিন্তু গবেষণার একজায়গায় আইনস্টাইম বোসের সঙ্গে একমত হতে পারেন নি এমনি মন্তব্য করায় এই প্রবন্ধটি পদার্থ বিদ্যার আধুনিক গবেষণার ক্ষেত্রে যথোপযুক্ত স্থান লাভ করতে পারল না।

কিন্তু বোস- সংখ্যায়ন যে পদার্থ বিদ্যার অশেষ সম্ভাবনার পথ উন্মুক্ত করেছে তার প্রমাণ হয়ে গেল ১৯২৬ খ্রিঃ। ইংলন্ড ও ইতালির দুই তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞানী ডিরাক ও ফের্মি বোস সংখ্যায়নের অনুসরণে সূক্ষ্ম বস্তুপুঞ্জের ব্যাখ্যায় নতুন এক সংখ্যায়ন গড়ে তুললেন।

এইভাবে গাণিতিক সত্য পরীক্ষামূলক সত্যে রূপান্তরিত হয়ে সত্যেন্দ্রনাথের হতাশা দূর হল। প্রথমে এই সংখ্যায়ন ফের্মি-ডিরাকের নামাঙ্কিত হলেও পরে ফের্মি সংখ্যায়ন নামেই পরিচিতি লাভ করে।

পদার্থ বিজ্ঞানের সর্বাধুনিক শাখাটির নাম হল কণিকা পদার্থবিদ্যা বা পার্টিকেল ফিজিক্স। এই শাখার যেসব মৌলকণা বা পার্টিকেল বোস সংখ্যায়ন বিধি মেনে চলে সেসব কণাকে বলা হয় BOSON। আর যেসব মৌলকণা ফের্মি উদ্ভাবিত সংখ্যায়ন বিধি মেনে চলে তাদের বলা হয় FERMION।

আলোককণা ফোটন, আলফাকণা ডয়টেরিয়ম এরা বোসন শ্রেণীর ইলেকট্রন, প্রোটন হল ফের্মিয়ান শ্রেণীর। পদার্থবিজ্ঞানে আইনস্টাইনের বিস্ময়কর এক আবিষ্কার হল একক-ক্ষেত্রতত্ত্ববা ইউনিফায়েড ফিল্ড থিওরি।

তিনি এই তত্ত্বে নিজের অপেক্ষবাদের ভিত্তিতে মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র ও তড়িৎচৌম্বক ক্ষেত্রকে এক নিয়মের সূত্রের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। পরে মৌলকণাসমূহের প্রকৃতির ব্যাখ্যাতেও এই ক্ষেত্র তত্ত্বকে প্রসারিত করেছেন।

এই জটিল ক্ষেত্রতত্ত্বের প্রথম ধাপের ৬৪ টি সমীকরণ পদার্থবিজ্ঞানীরা কেউই সমাধান করতে পারছিলেন না। সত্যেন্দ্রনাথ ১৯৫২ খ্রিঃ ওই ৬৪ টি সমীকরণ অনায়াসে দুভাগ করে ফেললেন। প্রথম ভাগে ৪০ টি এবং দ্বিতীয় ভাগে ২৪ টি সহ-সমীকরণ রেখে তিনি অতি সাধারণ পথে দুঃসাধ্য কাজটি সম্পূর্ণ করে একক ক্ষেত্রতত্ত্বের এক নতুন রূপ দিলেন।

আরও পড়ুন- সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত জীবনী

এই সমাধানের ওপরে সতেন্দ্রনাথের কয়েকটি গবেষণাপত্র বিদেশের বিখ্যাত বিজ্ঞান জার্নালে প্রকাশিত হল। সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ববিজ্ঞানে আলোড়ন ওঠে। আইনস্টাইনও অত্যন্ত আনন্দিত হন। অলৌকিক প্রতিভার অধিকারী সত্যেন্দ্রনাথ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বলতে লাভ করেছিলেন কেবল, লন্ডনের রয়াল সোসাইটির সদস্যপদ ১৯৫৮ খ্রিঃ বোস সংখ্যায়ন আবিষ্কারের দীর্ঘ ৩৪ বছর পরে।

বোস সংখ্যায়নের সূত্রধরে একাধিক বিজ্ঞানী নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন। সত্যেন্দ্রনাথ নোবেল পাননি বলে তার অবদানের গুরুত্ব কিছুমাত্র হ্রাস হয়নি।

সত্যেন্দ্রনাথের সবচেয়ে বড় পুরস্কার হল, বিশ্বের তাবৎ মৌলিক কণার অর্ধেকেরই নামকরণ হয়েছে তাঁর নাম অনুযায়ী। নিজের দেশে সত্যেন্দ্রনাথ তার যথাযোগ্য মর্যাদা লাভ করেছিলেন। ১৯৫২ খ্রিঃ থেকে ১৯৫৮ খ্রিঃ ছ’বছর তিনি রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন। ১৯৫৬ খ্রিঃ থেকে ১৯৫৮ খ্রিঃ দু’বছর ছিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য।

সত্যেন্দ্রনাথ বসু এর পুরস্কার ও সম্মান: Satyendra Nath Bose’s Awards And Honors

১৯৫৮ খ্রিঃ হন জাতীয় অধ্যাপক। এছাড়া পেয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডকটরেট উপাধি। বিশ্বভারতী থেকে দেশিকোত্তম সম্মান এবং ভারত সরকারের পদ্মবিভূষণ উপাধি তাঁকে দেওয়া হয়েছিল। ১৯৪৪ খ্রিঃ সত্যেন্দ্রনাথ ভারতীয় জাতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের সভাপতির পদ লাভ করেছিলেন।

মূলত গণিত ও তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানী হলেও পরীক্ষামূলক পদার্থবিজ্ঞানেও সত্যেন্দ্রনাথের বহু মূল্যবান অবদান রয়েছে। কেলাসের গঠন প্রণালী, পদার্থের চুম্বকত্ব, বেতার তরঙ্গের বিস্তার, প্রতিপ্রভা প্রভৃতি বিষয়ে সত্যেন্দ্রনাথ গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন।

তাপ-দ্যুতি বিষয়ক গবেষণার জন্য সত্যেন্দ্রনাথ একটি বর্ণালি ফোটোমিটার উদ্ভাবন করেছিলেন। এই যন্ত্রে ক্ষণস্থায়ী বর্ণালিরও সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ সম্ভব হত।

রসায়ন, জীববিজ্ঞান, নৃতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয়েও সত্যেন্দ্রনাথের বিশেষ আগ্রহ ছিল। এবিষয়ে গবেষকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তিনি তাঁদের অনেক সমস্যার সমাধান করে দিয়েছেন।

বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে জগৎসভায় ভারতকে উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করার ব্রত ছিল সত্যেন্দ্রনাথের। এই ব্রত সার্থকভাবে সম্পূর্ণ করতে পেরেছিলেন তিনি।

তার কাছে দেশপ্রেম ছিল মানবপ্রেমেরই অন্য নাম। দেশের মানুষের প্রতি সত্যেন্দ্রনাথের সুগভীর ভালবাসার টানেই জীবনের শেষভাগে মাতৃভাষা তথা বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানের প্রচার ও প্রসারের কাজে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন।

তিনি বলতেন, এটা ঠিক যে, দেশ বলতে যদি দেশের লোককে বোঝায়, শুধুমাত্র শিক্ষিত বা নায়ক সম্প্রদায় না হয়, যদি মনে হয়, দেশের সাধারণ লোকই দেশ, তবে এরা শিক্ষিত হলেই তো সে দেশকে উন্নত বলা যাবে।

সত্যেন্দ্রনাথ বুঝতে পেরেছিলেন, দেশের উন্নতির জন্যই সমাজের সর্বস্তরে বিজ্ঞানচেতনার ব্যাপক বিস্তার প্রয়োজন। বাংলা ভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ ও সমাজকে বিজ্ঞান-সচেতন করা এবং সমাজের কল্যাণকল্পে বিজ্ঞানের প্রয়োগের উদ্দেশ্যে তাঁর উদ্যোগে ১৯৪৮ খ্রিঃ গঠিত হয় বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ।

মাতৃভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞানের প্রচার ও প্রসারে এরকম প্রাতিষ্ঠানিক প্রচেষ্টা ভারতবর্ষে এই প্রথম।

বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের মুখপত্র হিসাবে জ্ঞান ও বিজ্ঞান নামক মাসিক পত্রিকা ছাড়াও বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে পুস্তক প্রকাশ, বক্তৃতা, আলোচনা ও প্রদর্শনী ইত্যাদিও সংগঠিত হয়েছিল সত্যেন্দ্রনাথের উৎসাহে।

সত্যেন্দ্রনাথ বসু এর রচনা: Written by Satyendra Nath Bose

জ্ঞান ও বিজ্ঞান পত্রিকা ছাড়াও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞান ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সত্যেন্দ্রনাথের জনসাধারণের উপযোগী ৩৫ টি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল।

এছাড়া জনসাধারণের উপযোগী বিজ্ঞান বিষয়ক ৪ টি রচনা তিনি বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন, ফরাসি, জার্মান ও ইংরাজি ভাষা থেকে। বাল্যকাল থেকেই সত্যেন্দ্রনাথের সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগ ছিল। তিনি ছিলেন সঙ্গীতের খাঁটি সমঝদার।

তিনি নিজেও ভাল এসরাজ বাজাতে পারতেন। কুড়ি-একুশ বছর বয়সেই তিনি এই বাজনা শুরু করেছিলেন।

মানুষ হিসেবে সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন সরল স্বাভাবিকও উদার প্রকৃতির। মানুষের প্রতি ছিল তাঁর গভীর সহানুভূতি ও ভালবাসা। অন্যের প্রয়োজনকে তিনি কখনোই নিজের প্রয়োজন থেকে খাটো করে দেখতেন না।

সত্যেন্দ্রনাথ বসু এর মৃত্যু: Satyendra Nath Bose’s Death

বিশ্ববিজ্ঞান ইতিহাসের এই মহাসাধক ১৯৭১ খ্রিঃ ৪ ঠা ফেব্রুয়ারী কলকাতায় লোকান্তরিত হন।

Leave a Comment