Lord Byron Biography in Bengali – লর্ড জর্জ গর্ডন বায়রন জীবনী

Lord Byron Biography: আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মহান ব্যক্তিদের জীবনী সমগ্র। মহান ব্যক্তি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁদের জীবনের ক্ষুদ্রতম অংশগুলি আমাদের জন্য শিক্ষামূলক হতে পারে। বর্তমানে আমরা এই মহান ব্যক্তিদের ভুলতে বসেছি। যাঁরা যুগ যুগ ধরে তাদের কর্ম ও খ্যাতির মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প ও সাহিত্যের জগতে এক অনন্য অবদান রেখেছেন এবং তাঁদের শ্রেষ্ঠ গুণাবলী, চরিত্র দ্বারা দেশ ও জাতির গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। সেইসব মহান ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম কবি লর্ড জর্জ গর্ডন (Lord Byron) -এর সমগ্র জীবনী সম্পর্কে এখানে জানব।

Lord Byron Biography In Bengali – লর্ড জর্জ গর্ডন বায়রন জীবনী

নামলর্ড জর্জ গর্ডন বায়রন বা লর্ড বায়রন
জন্ম22nd জানুয়ারী 1788
পিতাক্যাপ্টেন জন ম্যাড জ্যাক বায়রন
মাতাক্যাথরিন গর্ডন
জন্মস্থানলন্ডন, ইংল্যান্ড
জাতীয়তাব্রিটিশ
পেশাকবি, রাজনীতিবিদ
মৃত্যু19th এপ্রিল 1824 (বয়স 36)

লর্ড জর্জ গর্ডন বায়রন বা লর্ড বায়রন কে ছিলেন? Who is Lord Byron?

ইংলন্ড তথা ইউরােপের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। তার কবিপ্রতিভা তাকে করে তুলেছিল ইউরােপ মহাদেশের একসময়ের বহু আলােচিত রােমান্টিক নায়ক। লন্ডনের অভিজাতসম্প্রদায়ের যুবকেরা ও মেয়েরাতাকে অনুকরণ করতে আরম্ভ করেছিলেন। এমনকি পােশাকে পরিচ্ছদেও।

বায়রন -অঙ্কিত চরিত্রের অনুকরণে তারা বিষাদগ্রস্ত রােমান্টিকনায়কদের মত আচরণ করতে অভ্যস্থ হয়ে উঠেছিলেন।

এই অনুকরণপ্রিয়তাসারাইউরােপে, বিশেষতঃ জার্মানীতে প্রবলভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। জার্মানীতে বায়রনের স্থান শেক্সপীয়রের পরেই।

লর্ড জর্জ গর্ডন বায়রন এর জন্ম: Lord Byron’s Birthday

১৭৮৮ খ্রিঃ ২২ জানুয়ারি লর্ড বায়রনের জন্ম। জন্মসূত্রে তিনি দুটি অভিজাত পরিবারের সঙ্গে যুক্ত।

লর্ড জর্জ গর্ডন বায়রন এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Lord Byron’s Parents And Birth Place

তার বাবাজন বায়রন ছিলেন ইংরেজ মাক্যাথারিন গর্ডনছিলেন অভিজাতস্কটিশ মহিলা। বায়রনের চরিত্রে ফুটে উঠেছিল একই সঙ্গে উদ্দামতা ও বন্যতা এবং উদারতা ও স্নেহশীলতা। বাবা ও মা বিপরীত স্বভাবের এই দুজনের সংমিশ্রণেই গড়ে উঠেছিলেন বায়রন।

জন্মের কিছুদিন পরেই বায়রনের পিতা জন বায়রন তার মাকে ছেড়ে নিরুদ্দেশ হন।

স্বভাবের জন্য লােকের্তাকে বলত ম্যাডজ্যাক। শিশুপুত্রকে নিয়ে ক্যাথারিনের জীবন -সংগ্রাম আরম্ভ হয় অ্যাবার্ডিন শহরে।

মিসেস ক্যাথারিন ছিলেন উদারচেতা ও শীলা এবং একই সঙ্গে প্রচন্ড বদমেজাজী ও বদরাগী। তার পুত্রের মধ্যেও এই স্বভাবের সংমিশ্রণ ঘটেছিল।

জন্ম থেকেই বায়রন ছিলেন খঞ্জ। সম্ভবতঃ শিশুপক্ষাঘাত রােগে আক্রান্ত হওয়াতেই তার একটি পা বাঁকা হয়ে গিয়েছিল। বায়বন সারাজীবন ধরে তাই বিষন্নতার বােঝা বয়ে বেড়িয়েছেন। তার এই বিষন্নতা তার সাহিত্যেও ওতপ্রােত হয়েছিল।

লর্ড জর্জ গর্ডন বায়রন এর ছোটবেলা: Lord Byron’s Childhood

পাঁচবছর বয়সেই লেখাপড়া শুরু হয়েছিল বায়রনের। পড়তে শিখেই তিনি ইতিহাসের প্রতি আকর্ষণ বােধ করেন।

স্কুলে পড়ার সময় মুষ্টিযুদ্ধ ও সাঁতাবেও খুব দক্ষ হয়ে উঠেছিলেন বায়রন। ১৮০৫ খ্রিঃ তিনি ক্রিকেটও খেলেছেন।

লর্ড জর্জ গর্ডন বায়রন এর শিক্ষাজীবন: Lord Byron’s Educational Life

ডালউইচ বিদ্যালয়ে পড়তে পড়তে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন হ্যারােতে ১৮০১ খ্রিঃ। এখান থেকে বেরিয়ে ১৮০৫ খ্রিঃ কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে ভর্তি হন।

এখানে পড়াকালীনই তার উশৃঙ্খল জীবনযাত্রার শুরু হয়। তবে এক মুষ্টিযােদ্ধা বন্ধুর প্রভাবে শরীরচর্চা করে সুঠাম ও সুন্দর দেহের অধিকারী হয়েছিলেন।

লর্ড জর্জ গর্ডন বায়রন এর রচনা: Written by Lord Byron

কলেজে পড়ার আগেই বায়রনের কাব্যচর্চা শুরু হয়েছিল। ১৮০৭ খ্রিঃ তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ Hours of idleness প্রকাশিত হয়। বিশেষ উঁচুমানের না হলেও কাব্যগ্রন্থটি অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। এডিনবরা রিভিউ নামের পত্রিকায় বইটির বিরূপসমালােচনা প্রকাশিত হয়েছিল।

এর ফলে বায়রন মনে আঘাত পেয়ে ইংরাজসাহিত্যিকদের প্রতি ক্ষুব্ধ ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলেন।একবছর পরে তিনি লিখলেন EnglishBirds and Scotch Review ers.

এবারের বইটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই জনপ্রিয়তালাভ করল। একমাসের মধ্যেই। বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়।

বেহিসেবী খরচ এবং উশৃঙ্খল স্বভাবের কারণে মায়ের সঙ্গে বায়রনের সম্পর্ক দিন দিনই খারাপ হয়ে পড়ছিল। এ সত্ত্বেও কবি তার স্বভাব শুধরাবার চেষ্টা করেননি। ঋণের পর ঋণ করে খেয়াল খুশিমত আনন্দ ফুর্তি করে টাকা ওড়াতেন।

আরও পড়ুন- চার্লস জন হফহ্যাম ডিকেন্স জীবনী

নিউস্টেটের পৈতৃক বাড়িতে বসবাস কালেই ১৮০৯ খ্রিঃ বায়রন তার এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে ইউরােপ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন। এই সময় তিনি গ্রীস, তুরস্ক প্রভৃতি দেশ পরিভ্রমণ করেন।

আলবানিয়া হয়ে গ্রীসে যাবার পথে বায়রন লিখতে শুরু করেনতার অমর সৃষ্টি Child Harold’s Pilgrimage.

আলবানিয়ার বন্য সৌন্দর্য আর আধাসভ্য অধিবাসীদের দেখে খুবই আনন্দ পেয়েছিলেন বায়রন। তাঁর ভ্রমণ -অভিযানের কাহিনীই বর্ণিত হয়েছিল এই বইটিতে।

গ্রীসের এথেন্সে তিন মাস বাস করেন বায়রন। ছেলেবেলা থেকেই ইতিহাসের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন তিনি। তাই গ্রীসের সুপ্রাচীন সংস্কৃতি ও প্রাচীন কীর্তিগুলির ধ্বংসাবশেষ তাকে মােহিত করেছিল।

১৮৪৪ খ্রিঃ বায়রন ইংলন্ডে ফিরে আসেন। এদিকে পাওনাদারদের অস্থিরতাও বেড়ে উঠেছিল। তিনিযখন ঋণের দায়ে ব্যতিব্যস্ত সেইসময়েই তার মা মারা যান।

ডালমেনামে বায়রনের একজন সাহিত্যানুরাগী বন্ধু ছিলেন। বায়রনতাকেতার ইউরােপ ভ্রমণকালে রচিত চাইল্ড হ্যান্ডের প্রথম দুটি সর্গ পড়তে দিয়েছিলেন।

এই সূত্রেই আকস্মিকভাবে ভাগ্য বিপর্যস্ত বায়রনের জীবনে ঘটল এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন। তিনি রাতারাতি ইংলন্ডে নায়কের মর্যাদা লাভ করে বসলেন।

ডালমে বন্ধুর কাব্যটি পড়ে এমনই মুগ্ধ হলেন যে তিনি এক প্রকাশককে দিলেন সেটি প্রকাশের জন্য।

প্রাপ্তবয়স্ক হবার পরে পরেই বায়রন হাউস অব লর্ডস -এ যােগ দিয়েছিলেন। সেই উপলক্ষ্যে তিনি নিউস্টেটের পৈতৃক বাড়িতে জোরদার ভােজসভারও আয়ােজন করেছিলেন।

আরও পড়ুন- জর্জ বার্নাড শ জীবনী

তিনি যেদিন হাউস অব লর্ডস -এ প্রথম ভাষণ দিলেন তার কয়েকদিন পরেই প্রকাশিত হল চাইল্ড হ্যারল্ড -এর প্রথম ও দ্বিতীয় পর্ব।

হাউস অব কমন্স -এ মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে ভাষণ দিয়ে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন তিনি। চাইল্ড হ্যারল্ড তাঁকে রাতারাতি জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌছেদিল।

লন্ডন শহর যেন বইটি নিয়ে উন্মাদ হয়ে উঠল। নিজের এই অবিশ্বাস্য জনপ্রিয়তা সম্পর্কে বায়রন বলেছেনঃ একদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গলে দেখি আমি বিখ্যাত হয়ে গেছি। লন্ডনের অভিজাত সম্প্রদায় বায়রনকে সাদরে বরণ করে নিলেন।

মেয়েরা তাকে দেখবার জন্য পাগল হয়ে উঠলেন। ভাগ্যের অবিশ্বাস্য প্রসন্নতার সঙ্গে সঙ্গে সকলের অলক্ষে এই সময়ে বিপর্যয়ের অঙ্কুরও রােপিত হল।

নিঃসঙ্গ, সদা -বিষম রহস্যময় রােম্যান্টিক তরুণ কবি অতি দ্রুত একাধিক প্রেমের ঘটনায় জড়িয়ে পড়লেন। সম্রান্ত ঘরের মেয়ে এবং গৃহিণীরাই ছিলেন তার প্রেমপাত্রী।

এই সময়েই পরপর প্রকাশিত হল তাঁর কাব্যগ্রন্থ The Giaur (১৮১৩ খ্রিঃ); The Bride of Abydas (১৮১৩ খ্রিঃ), The Carsair (১৮১৪ খ্রিঃ), Lara (১৮১৪ খ্রিঃ)।

লর্ড জর্জ গর্ডন বায়রন এর বিবাহ জীবন ও পরিবার: Lord Byron’s Marriage Life And Family

১৮১৫ খ্রিঃ জানুয়ারি মাসে বায়রন অ্যাসবেলা মিলব্যাককে বিয়ে করেন। এই বিয়েই বায়রনের জীবনে দুঃসময় ডেকে আনল।

বিয়ের একবছর পরে বায়রন দম্পতির একটি কন্যাসন্তান জন্মাল। মেয়েটির নাম রাখা হয়েছিল অগাষ্টাস আভ। মেয়ের জন্মের পাঁচসপ্তাহ পরেই লেডি বায়রন তার স্বামীকে ছেড়ে চলে যান।

বায়রনের বিবাহ -বিচ্ছেদের সঠিককারণ জানা যায় না। তবে এই ব্যাপার নিয়ে সমাজের সর্বস্তরের মানুষই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল।

আর এই ক্ষোভ ছিল বায়রনের বিরুদ্ধে। খবরের কাগজগুলােতেও তার বিরুদ্ধে লেখালেখি চলতে লাগল।

আরও পড়ুন- আর্নেস্ট মিলার হেমিংওয়ে জীবনী

ফেঁড়ারওপরশাকের আঁটিরমত এইসময়ে বায়রনের আর্থিক দুরবস্থাও চরমে উঠেছিল। পাওনাদাররাও সমালােচকদের সঙ্গে সুর মিলাল।

রাতারাতি যেমন একদিন তিনি দেশজুড়ে বিখ্যাত হয়ে পড়েছিলেন তেমনি রাতারাতিই তিনি হয়ে উঠলেন সমাজের সকলের ঘৃণার পাত্র। ফলে শেষ পর্যন্ত তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হলেন।

১৮১৬ খ্রিঃ বায়রন চিরকালের জন্য দেশ ত্যাগ করলেন।

লন্ডন ছেড়ে জেনেভায় এসে বাস করতে লাগলেন বায়রন। এই সময়েই লিখলেন The Prisoner of Chillon (১৮১৬ খ্রিঃ)। বেশ কিছু ছােট কবিতার সঙ্গে চাইল্ড হ্যারল্ড -এর শেষ পর্ব সমাপ্ত করলেন।

এই সময়কালেই জেনেভায় বিখ্যাত কবি শেলির সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটে বায়রনের এবং অল্পসময়ের মধ্যেই দুজনের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।

আরও পড়ুন- পাবলাে নেরুদা জীবনী

উত্তর ইটালি ঘুরে বায়রন এসে বাস করতে লাগলেন ভেনিসে। তখনাে সমানে চলছিল তার অমিতব্যয়ী জীবনযাপন। তবে সৃজনশীলতা কখনাে ব্যাহত হতে দেননি তিনি।

Manfred (১৮১৭ খ্রিঃ) ইত্যাদি কয়েকটি বইসহ Don Juan-এর দুটি পর্বও এই সময়ে রচনা করেন বায়রন।

১৮২১ খ্রিঃ প্রকাশিত হল Cain। বইটি ইংলন্ডে খুবই আলােড়ন তুলল। ধর্মীয় মৌলবাদীরা বইটির নিন্দায় সরব হয়ে উঠল। বায়রনের অমর সৃষ্টি Don Juan রচনা চলাকালীন (১৮১৯ খ্রিঃ -১৮২৪ খ্রিঃ) সময়ে গ্রীস ও তুরস্কের মধ্যে যুদ্ধ তীব্র আকার ধারণ করল।

বায়রন গ্রীসের স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন উৎসর্গ করার সঙ্কল্প গ্রহণ করলেন এবং গ্রীসের সমর্থনে অস্ত্র ধারণ করলেন।

লর্ড জর্জ গর্ডন বায়রন এর মৃত্যু: Lord Byron’s Death

যুদ্ধকালেই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৩৬ বৎসর বয়সে ১৮২৪ খ্রিঃ ১৯ শে এপ্রিল বায়রন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

বায়রনের কবি -প্রতিভা সমগ্র ইউরােপের সমসাময়িক সাহিত্যকে প্রভাবিত করেছিল। তার বর্ণময় রচনাশৈলী এবং সমসাময়িক চিন্তাধারার প্রতি ব্যঙ্গাত্মক কটাক্ষই বায়রনকে সাফল্যের উচ্চতম শিখরে পৌছে দিয়েছিল।

নিজের জীবদ্দশায় অন্য কোন কবির ভাগ্যেই এমন ঘটনা ঘটেনি। একটা বিষণ্ণতা বােধ বাকল্পিতদুঃখবােধ বায়রনের সারাজীবনকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। তার প্রত্যেকটি রচনার মধ্যেই তাই একটি ভুরু কোঁচকানাে ভাব ফুটে উঠেছে। এখানেইকবি বায়রনের বিশিষ্টতা। উল্কার মতইছিলতার আবির্ভাব। উল্কার মতই ঘুরে বেড়িয়েছেন ইউরােপের সর্বত্র। একদিন আবার উল্কার মতই আকস্মিকভাবে অন্তর্ধান ঘটেছিল তার।

Leave a Comment