James Cook Biography in Bengali – ক্যাপ্টেন জেমস কুক জীবনী

James Cook Biography– আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মহান ব্যক্তিদের জীবনী সমগ্র। মহান ব্যক্তি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁদের জীবনের ক্ষুদ্রতম অংশগুলি আমাদের জন্য শিক্ষামূলক হতে পারে। বর্তমানে আমরা এই মহান ব্যক্তিদের ভুলতে বসেছি। যাঁরা যুগ যুগ ধরে তাদের কর্ম ও খ্যাতির মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প ও সাহিত্যের জগতে এক অনন্য অবদান রেখেছেন এবং তাঁদের শ্রেষ্ঠ গুণাবলী, চরিত্র দ্বারা দেশ ও জাতির গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। সেইসব মহান ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম ক্যাপ্টেন জেমস কুক (Captain James Cook) -এর সমগ্র জীবনী সম্পর্কে এখানে জানব।

James Cook Biography in Bengali – ক্যাপ্টেন জেমস কুক জীবনী

নামজেমস কুক (James Cook)
জন্ম২৭ অক্টোবর ১৭২৮
জন্মস্থানইংল্যান্ড
পেশাExplorer, নাবিক, cartographer
উপাধিক্যাপ্টেন
দাম্পত্য সঙ্গীএলিজাবেথ বাটস
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার‘কোপলে’ স্বর্ণপদ
মৃত্যু১৪ ফেব্রুয়ারি ১৭৭৯

জেমস কুক কে ছিলেন ? Who is James Cook ?

দুঃসাহসিক অভিযান ও আবিষ্কারের ইতিহাসে ক্যাপ্টেন জেমস কুক একটি গৌরবোজ্জ্বল নাম। তিনি ছিলেন অ্যান্টার্কটিক অভিযানের উদ্যোক্তা-নায়ক এবং নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া -এই দুই ভূখন্ডকে আবিষ্কার করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।

জেমস কুক এর জন্ম – James Cook Birthday

জেমস কুকের জন্ম ক্লীভল্যান্ডে ১৭২৮ খ্রিঃ ২৮শে অক্টোবর। অতি সাধারণ এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিলেন তিনি। ছেলেবেলায় তাঁর গ্রামেরই একটা খামারে কাজ করতেন।

ছেলেবেলা

বছর বারো বয়সেই কুককে শিক্ষানবিসীর জন্য পাঠানো হয়েছিল একটি মনোহারি দোকানে।

এখানে দোকান ঝাঁট দেওয়া থেকে আরশোলা মারা পর্যন্ত যেসব কাজ তাঁকে করতে হতো, তার মধ্যে কোন আকর্ষণ খুঁজে পেতেন না তিনি।

তাই সুযোগ পেলেই দোকানের মালিকের চোখ এড়িয়ে পালিয়ে গিয়ে উপস্থিত হতেন বন্দরে নাবিকদের আড্ডায়।

সেখানে তাদের মুখে দুঃসাহসিক সব সমুদ্র অভিযানের কাহিনী, জলদস্যুদের রোমহর্ষক গল্প, নতুন নতুন দেশ ও মানুষজনের গল্প শোনো যেত। কুক্ অবাক হয়ে সেসব কাহিনী-গল্প শুনতেন।

ছেলেবেলা থেকেই তিনি ছিলেন ডাকাবুকো স্বভাবের। সাহস আর তেজের দরকার এমন সব কাজের দিকেই ছিল তাঁর ঝোঁক।

সমুদ্রচর মানুষদের মুখে সমুদ্রের গল্প শুনে শুনে একদিন কিশোর কুক মনস্থির করে ফেললেন, তিনিও নাবিক হবেন। দেশ-বিদেশ পাড়ি দেবেন, দেখবেন নতুন নতুন মানুষজন।

অজ্ঞাত স্বপ্নময় জগতের নিঃশব্দ হাতছানিতে সাড়া দিতে দেরি হল না তাঁর। একদিন দু-চারখানা দরকারি জিনিস এবং দোকানের তহবিল থেকে একখানা শিলিং চুরি করে হুইটবিতে হাজির হলেন।

জেমস কুক এর ব্রিটিশ নৌ বাহনীতে যোগদান – James Cook Joined British Navy

তারপর ওয়াকার নামের এক কয়লার জাহাজে শিক্ষানবিসের কাজ নিয়ে সমুদ্রে ভেসে পড়লেন।

সেই যে বেরুলেন তারপর থেকে বিভিন্ন জাহাজে নাবিকের জীবনেই কাটিয়ে দিলেন টানা পনেরোটা বছর। ঘুরে বেড়ালেন নরওয়ে এবং বাল্টিক সাগরের বন্দরে বন্দরে।

জেমস কুক (James Cook) এর রয়্যাল নেভিতে যোগদান

সাতাশ বছর বয়সে সাধারণ নাবিকের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের কাজ থেকে তাঁর পদোন্নতি হল সারেঙের সম্মানজনক পদে।

কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই উপকূলবাহী জাহাজের চাকরি ছেড়ে তিনি যোগ দিলেন রয়্যাল নেভিতে।

আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বেশ কষ্টসাধ্য একটা কাজের দায়িত্ব দেওয়া হল তাঁকে। কানাডায় গিয়ে সেন্ট লরেন্স দ্বীপ জরিপের কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে।

এই কাজে যথেষ্ট বিপদের ঝুঁকি ছিল। যে কোন মুহূর্তে ভারতীয় ও ফরাসী টহলদারী জাহাজের আক্রমণের আশঙ্কা ছিল। সব জেনেশুনেই সানন্দে কাজের দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন তিনি।

এই কাজে থাকার সময়েই কুক কুইবেক থেকে সমুদ্রাভিমুখী নদীর একটা নক্সা তৈরি করলেন। পরবর্তীকালে তাঁর এই নক্সা ব্রিটিশ নৌবহরের যথেষ্ট উপকারে এসেছিল।

১৭৬২ খ্রিঃ কুক এলেন নিউফাউন্ডল্যান্ড-এর উপকূলে। এখানেও কয়েকটি মানচিত্রের কাজ করে তিনি যথেষ্ট প্রশংসা লাভ করলেন।

নিউফাউন্ডল্যান্ড ও ল্যাব্রাডার উপকূলভাগ জরিপের কাজ সম্পূর্ণ হলে একজন দক্ষ মানচিত্রকার হিসেবে কুক নৌসেনাপতির দপ্তর এবং রয়্যাল সোসাইটির প্রশংসা অর্জন করলেন।

এতকাল তিনি ছিলেন একজন দক্ষ নাবিক। ১৭৬৬ খ্রিঃ পর থেকে একজন জরিপ বিশেষজ্ঞ এবং গণিত বিশেষজ্ঞ হিসেবেও তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ল।

আরও পড়ুন- ক্রিস্টোফার কলম্বাস জীবনী

অল্প সময়ের মধ্যেই কুকের জীবনের মোড় ঘুরে গেল। রাষ্ট্রীয় নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধায়ক বিশেষজ্ঞরা তাঁর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ও গণিত প্রতিভাকে দক্ষিণ সাগর অভিযানের ক্ষেত্রে কাজে লাগাবার মনস্থ করলেন ।

বৈজ্ঞানিক বিষয় নিয়ে গবেষণার ব্যাপারে কিশোর বয়স থেকেই গভীর আগ্রহ বোধ করতেন কুক। জরিপের কাজে এসে সখ করে নানা বিষয়ে পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করে গবেষণার অভ্যাসকে আরও দুরস্ত করার সুযোগ পেয়েছিলেন।

১৭৬৬ খ্রিঃ আগস্ট মাসের সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে তিনি যে পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছিলেন তা সকলেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।

তাই সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে তাঁকে দক্ষিণ সাগর অভিযানের সঙ্গে পাঠানো হল।

এই অভিযানের আসল উদ্দেশ্য ছিল টেরা অস্ট্রেলিস ভূভাগকে ব্রিটিশ অধিকারে আনা। ইতিপূর্বে বহু নাবিক ও ভৌগোলিক একই উদ্দেশ্যে দক্ষিণাঞ্চলে অভিযান করেছিলেন।

কুকের ওপরে তাঁর ওপরওয়ালাদের নির্দেশ ছিল, টেরা অস্ট্রেলিস নামের মহাদেশের প্রকৃতই কোনও অস্তিত্ব আছে কিনা তা খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তার সন্ধান পাওয়া গেলে অবস্থান ও বিস্তৃতি সম্পর্কে বিস্তৃত তথ্য তাঁকে সংগ্রহ করতে হবে।

ক্যাপ্টেন কুক কোন দেশ আবিষ্কার করেন

দক্ষিণ সাগরের অভিযান ছিল বিপদসঙ্কুল। সবকিছু অবহেলা করেই বিগত দুই শতাব্দী ধরে বিভিন্ন অভিযাত্রী ছুটে এসেছেন পৃথিবীর এই প্রান্তে। লোকমুখে প্রচারিত ছিল দক্ষিণাঞ্চলের এই মহাদেশে পথেঘাটে পড়ে থাকে তাল তাল সোনা রুপো।

বস্তুতঃ এই বিপুল সম্পদ আহরণের উদ্দেশ্যেই সকল বিপদ বাধা তুচ্ছ করে অভিযানের পর অভিযান পরিচালনা করেছিলেন তাঁরা।

এই ক্ষেত্রে প্রধান উদ্যোগী ছিল স্প্যানিশ, পর্তুগীজ ও ওলন্দাজ নাবিকেরা। কিন্তু কেউই সফল হতে পারেনি।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁদের জাহাজ বিধ্বস্ত হয়েছিল মধ্য-প্রশান্ত সাগরীয় অঞ্চলের বিস্তৃত পাথুরে উপকূলে।

সেইকালে যারা মানচিত্র প্রস্তুত করতেন, নাবিকদের কাছে শোনা নানান অদ্ভুত গল্প থেকে তাঁদের ধারণা হয়েছিল, দক্ষিণ অঞ্চলের প্রতিটি নতুন আবিষ্কারই ছিল কল্পিত মহাদেশ টেরা অস্ট্রেলিসের এক একটি অংশ।

অবশ্য ১৬০৫ খ্রিঃ এক স্প্যানিস নাবিক, দ্য টোরেস, প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন, নিউ গায়না, ওই কল্পিত মহাদেশের অংশ নয়।

তিনি সেখানে যে প্রণালীগুলো আবিষ্কার করেছিলেন, সেগুলোর নামকরণ নিজের নামেই করেছিলেন।

কিন্তু ওই স্প্যানিস নাবিকের আবিষ্কার এক শতাব্দী পর্যন্ত অজানাই থেকে গিয়েছিল। ফলে একটি দ্বীপ হিসেবে নিউ গায়নার আবিষ্কারক হিসেবে উইলিয়াম ড্যাম্পিয়ের নামে এক অভিযাত্রীর নামই সকলে জানত। ব্রিটিশ সরকারও সেই কারণে দক্ষিণের মহাদেশটি আবিষ্কারের দায়িত্ব ড্যাম্পিয়েরকেই অর্পণ করেছিল।

কিন্তু ড্যাম্পিয়ের প্রকৃতই অকর্মণ্য। তাই তার অভিযানের ফলাফল প্রকৃত উদ্দেশ্যের ওপরে কোন আলোকপাতই করতে পারেনি।

ড্যাম্পিয়েরের জাহাজ, যে অংশ পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া নামে পরিচিত, তার পাশ ঘেঁষে চলে গিয়েছিল। ফলে তাঁর রিপোর্টে ড্যাম্পিয়ের জানিয়েছিল, এখানকার উপকূলভাগ নিতান্তই আকর্ষণহীন এবং এখানে বাস করে একদল অসভ্য বন্য লোক।

১৬৪২ খ্রিঃ ট্যসম্যান নামে এক ওলন্দাজ কল্পিত মহাদেশটির সন্ধানে বাটাভিয়া থেকে দক্ষিণ-পূর্ব পথ ধরে যাত্রা শুরু করেছিল।

এই অভিযানে সে তাসমানিয়া এবং নিউজিল্যান্ড অঞ্চল দুটি আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছিল।

এর ফলে এটা প্রমাণ হয়ে গিয়েছিল যে নিউ গায়না ও অস্ট্রেলিয়ার উত্তরের উপকূল অংশগুলি ওই মহাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় উপদ্বীপ নয়।

এত কিছুর পরেও কিন্তু ট্যসম্যানের অভিযান শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার চারপাশ ঘিরে ঘুরপাক খেয়েও ভূখন্ডটির প্রকৃত অবস্থান সনাক্ত করতে পারেনি।

দক্ষিণ সাগরে অভিযানের দায়িত্ব পেয়ে লেফট্যানেন্ট কুক তাঁর পূর্বসূরীদের অভিযানের ইতিহাস খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করলেন, যদি সঠিক কোন পথের হদিশ পাওয়া যায়।

কিন্তু সেসব থেকে তিনি কোন সাহায্য পেলেন না। অবশেষে ১৭৬৮ খ্রিঃ ২৫শে আগস্ট ত্রিশজনের একটি দল নিয়ে অভিযানে রওনা হলেন।

তাঁর দলে ছিল একদল বিজ্ঞানী এবং স্বনামধন্য স্যার জোসেফ ব্যাঙ্কস। তিনশো সত্তর টন ওজনের যে জাহাজে দলটি যাত্রা করেছিল তার নাম ছিল এডিভার। অভিযানের মেয়াদ ছিল তিন বছর।

এই সময়ের মধ্যে ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে কল্পিত মহাদেশের নির্ভুল অবস্থান নিরূপণ করতে হবে। কুক তাঁর জাহাজ নিয়ে তাহিতি পৌঁছলেন ১৭৬৯ খ্রিঃ বসন্তকালে। সেখানে জুন মাসের ৩ তারিখ শুক্র গ্রহের গমন পথের সন্ধান পেলেন।

বিজ্ঞানীরা জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কিত পর্যবেক্ষণ নিয়ে যখন ব্যস্ত ছিলেন, সেই অবসরে কিছু নাবিক জাহাজের গুদাম ঘর থেকে বড় আকারের বেশ কিছু পেরেক সরিয়ে ফেলেছিল। এই পেরেকগুলি চুরি করা হয়েছিল দ্বীপবাসীদের কাছে অস্ত্র হিসেবে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে।

সৌভাগ্যক্রমে দুর্বৃত্তদের একজন কুকের হাতে ধরা পড়ে গিয়েছিল। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল সাতটা পেরেক।

শৃঙ্খলাপরায়ণ কুকের নির্দেশে ওই নাবিককে চুরির অপরাধের শাস্তি হিসেবে কুড়ি ঘা বেত মারা হল।

তাহিতি থেকে কুক যাত্রা করলেন অজানা মহাদেশের উদ্দেশ্যে। দক্ষিণদিক দিয়ে যাত্রা করে সোসাইটি আইল্যান্ডকে পাশ কাটিয়ে এক সময় তিনি এসে পৌঁছলেন নিউজিল্যান্ডে।

কিন্তু সমগ্র উপকূলভাগ জুড়ে তীরে অবতরণ করার উপযুক্ত কোন জায়গা তাঁরা পেলেন না। ফলে ছ’সপ্তাহ ধরে জাহাজেই আবদ্ধ থাকতে হল। শেষ পর্যন্ত একটা দিক সুগম করে তাঁরা তীরে নেমে এলেন। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁরা দেখলেন সর্বাঙ্গে উলকি আঁকা ভীষণাকৃতির স্থানীয় মানুষ দলে দলে তাঁদের দিকে ছুটে আসছে।

স্থানীয় লোকদের সকলেই ছিল মাওলি যোদ্ধা। কুক বন্ধুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত করে এবং উপহার সামগ্রি প্রদান করে তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে সমর্থ হলেন।

কিন্তু সাময়িকভাবে জঙ্গলের আদিম মানবেরা অভিযাত্রীদের কোনও ক্ষতি না করলেও দ্বীপের অভ্যন্তরে গিয়ে তাঁদের অনুসন্ধানের কাজে আপত্তি প্ৰকাশ করল। কুকও তাদের অসন্তোষের কোন কারণ ঘটালেন না।

এরপর সেখান থেকে জলপথে তিনি উত্তর ও দক্ষিণের দ্বীপগুলোকে প্রদক্ষিণ করে চললেন। সেই সঙ্গে সম্পূর্ণ করলেন তাদের জরিপের কাজ। দ্বীপ মধ্যবর্তী প্রণালীগুলোর ওপরেই কুকের বিশেষ মনোযোগ ছিল। যাতে সেগুলো সম্পর্কে তথ্যের কোন ত্রুটি না থাকে। এই প্রণালীগুলো বর্তমানে তাঁরই নামে পরিচিত।

এক সময় কুক পদার্পণ করলেন কুইন সারটস গ্রাউন্ড নামে জঙ্গলাকীর্ণ দ্বীপে। কিছুটা জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করিয়ে সঙ্গীদের নিয়ে সেখানে মাটিতে পুঁতলেন একটা বিশাল মাস্তুল।

মাস্তুলের মাথায় ওড়ানো হলো ইউনিয়ন জ্যাক। সঙ্গীসাথীদের জয়ধ্বনির মধ্যে কুক ছোটখাট একটি বক্তৃতা দিয়ে ঘোষণা করলেন, মহামান্য সম্রাট তৃতীয় জর্জের নামে এই দ্বীপ অঞ্চলের অধিকার নেওয়া হল।

এরপর নিউজিল্যান্ড পরিত্যাগ করে আবার সমুদ্রে ভাসল এনডিভার। নব্বই দিন টানা চলার পরে অদূরে স্থলভাগের চিহ্ন অভিযাত্রীদের নজরে এলো।

বস্তুতঃ এইভাবেই মহাদেশ অস্ট্রেলিয়া সর্বপ্রথম বাইরের জগতের মানুষের দৃষ্টিগোচর হয়েছিল। অবশ্য তখন এই দ্বীপ মহাদেশ নিউ হল্যান্ড নামে পরিচিত ছিল।

কুক সেই অজ্ঞাত ভূ-খন্ডের পূর্ব উপকূল ধরে অগ্রসর হতে লাগলেন। এই সময় তিনি ওই অঞ্চলের একটা সামুদ্রিক মানচিত্রও তৈরি করে ফেললেন।

এই নতুন মহাদেশে যে স্থানে কুক প্রথম পদার্পণ করেছিলেন তার নামকরণ করেছিলেন নিউ সাউথ ওয়েলস। সেখান থেকে সরাসরি অগ্রসর হয়ে তিনি পৌঁছলেন ট্রাইবিউলেশন অন্তরীপে।

এখানে আকস্মিক এক দুর্ঘটনায় খুবই বিপন্ন হয়ে পড়লেন তিনি। মূল ভূখন্ড থেকে চল্লিশ মাইল দূরে এক ডুবো পাহাড়ে আটকে গেল এনডিভার জাহাজ। অনেক চেষ্টা করেও যখন জাহাজকে নাড়ানো গেল না তখন বাধ্য হয়ে তিনি নাবিকদের নির্দেশ দিলেন অনাবশ্যক এবং বাড়তি জিনিস জাহাজ থেকে জলে ফেলে দেবার জন্য।

সকলের সমবেত অমানুষিক চেষ্টার ফলে শেষ পর্যন্ত জলযানটিকে মুক্ত করে সেযাত্রা সদলবলে রক্ষা পেলেন।

যে উদ্দেশ্যে কুককে দক্ষিণ সমুদ্রে পাঠানো হয়েছিল, অপরিসীম ধৈর্য, অধ্যবসায় ও সাহসিকতার বলে সেই কাজ সফল করেন তিনি।

নতুন মহাদেশ অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান ও পরিবেশ ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যাদি সংগ্রহের পরে কুক তাঁর দলবল নিয়ে সেখানকার মাটিতে একটি ছোটখাটো অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।

সেখানে রাজা তৃতীয় জর্জের নামে সমগ্র পূর্ব অস্ট্রেলিয়ায় অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেন এবং প্রবল হর্ষধ্বনির মধ্যে ইউনিয়ান জ্যাক উত্তোলন করলেন। জাতীয় পতাকাকে সম্মান জানিয়ে বন্দুক থেকে তিনবার গুলি ছোঁড়া হয়, জাহাজের গোলন্দাজরাও ছোঁড়ে তিন রাউন্ড গুলি।

এই ঐতিহাসিক ঘটনার সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হল একবিন্দু রক্তপাত

ছাড়াই বিশাল এক মহাদেশ সামান্য এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হল।

ইতিপূর্বে টোরেট এবং ড্যাম্পিয়ের যে সমস্ত প্রণালী আবিষ্কার করেছিলেন, কুক সেই পথ ধরে নিউ গায়নার উদ্দেশ্যে অগ্রসর হলেন এবং উত্তমাশা অন্তরীপ হয়ে স্বদেশের পথে রওনা হলেন।

দক্ষিণ সাগরের তথাকথিত বিখ্যাত ভূখন্ড সম্পর্কে তাঁর প্রথম অভিযানে কুক যে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি সম্পন্ন করেছিলেন তা হল, অস্ট্রেলিয়ার সম্ভাব্য অবস্থান নির্ণয়। কিন্তু তার সম্পূর্ণ সীমানা নির্ধারণ এবং অন্যান্য সব সমস্যাই অমীমাংসিত থেকে গিয়েছিল। তাঁর সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ অবিলম্বেই কুক উন্নীত হলেন কমান্ডার পদে। তারপর দ্বিতীয় দফায় তিনি অভিযানে রওনা হলেন প্লাইমাউথ থেকে ১৭৭২ খ্রিঃ ১৩ জুলাই।

এবারে এই অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল পৌরাণিক মহাদেশ নামে পরিচিত এক ভূখন্ডের সন্ধান করা। তাঁর সঙ্গে ছিল রেজলিউশন ও অ্যাডভেঞ্চার নামে দুটি জাহাজ এবং একশো তিরানব্বই জন নাবিক। কুক এগিয়ে চললেন উত্তমাশা অন্তরীপ হয়ে। সেখান থেকে তাঁর জাহাজ মোড় নিল দক্ষিণ-পূর্ব পথ ধরে অ্যান্টার্কটিক সার্কল-এর দিকে।

পথের বাধা কিছু এবারেও কম ছিল না তাঁর। বড় বড় বরফের চাঁইয়ের দ্বারা তাঁর গতি বিঘ্নিত হয়েছে বারবার। কিন্তু তাতে তিনি উদ্যম হারালেন না। পূর্বাপর সমান উৎসাহে ওঠা-নামা করে নিষ্ঠাভরে কাজ করে গেলেন দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে।

সমুদ্রে ডুবো পাহাড়ও ভাসমান বরফের চাঁই কোনও কিছুই তিনি গ্রাহ্যের মধ্যে আনলেন না।

কিন্তু বিপদ একসময় ঠিক উপস্থিত হল। তবে অন্য পথে। অ্যান্টার্কটিকের বিপজ্জনক কুয়াশার আস্তরণ একসময়ে অভিযাত্রীদের রেজলিউশন ও অ্যাডভেঞ্চার নামের জাহাজ দুটিকে বিচ্ছিন্ন করে দিল।

রেজলিউশন জাহাজটিকে নিয়ে কুক অতি কষ্টে চৌদ্দ হাজার মাইল জলপথ পরিভ্রমণ করে একসময় এসে পৌঁছলেন ডাঙ্কি বে বন্দরে। জাহাজের মেরামতিও দরকার হয়ে পড়েছিল। তাই রেজলিউশনকে সেখানে রেখে তিনি বেরলেন দ্বিতীয় জাহাজটির সন্ধানে।

কুইন সারলটস সাউন্ড নামে এক উষ্ণ দ্বীপে এসে অ্যাডভেঞ্চারের সন্ধান পেলেন তিনি।

এই ভূখন্ডের মানুষ ছিল বর্বর উপজাতির লোক। শ্বেতকায় মানুষ তারা আগে কখনও দেখেনি।

কিন্তু একখন্ড অলিভ গাছের ডাল হাতে নিয়ে কুক নির্বিঘ্নে তাদের মধ্যে নেমে তাঁর কাজ করে যেতে লাগলেন।

নতুন এই ভূখন্ডের মধ্য দিয়ে চলতে চলতে কুক বিস্ময়ে আনন্দে অভিভূত হয়ে পড়লেন। সমুদ্রের মধ্যে ছড়িয়ে রয়েছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য দ্বীপ। সবুজ গাছপালায় ঘেরা প্রতিটি দ্বীপেই রয়েছে মানুষের বসতি। তাদের আচরণ ও জীবনযাত্রা বড়ই অদ্ভুত।

তাদের মধ্য দিয়ে পথ করে চলতে গিয়ে বহুবার তাঁকে সম্মুখীন হতে হয়েছে জীবন সংশয়কর পরিস্থিতির।

কিন্তু প্রবল মনোবল ও বুদ্ধিবলের সহায়তায় প্রতিবারেই তিনি বিপদ অতিক্রম করে নিজেকে নিরাপদ রাখতে সক্ষম হয়েছেন।

বিপদ বাধাকে তুচ্ছ করে অজানা সব বিস্ময়ঘেরা পথ অতিক্রম করে অগ্রসর হয়ে একসময় তিনি নিউ জেব্রাইডিস দ্বীপপুঞ্জ আবিষ্কার করলেন এবং মার্সিসাস এবং টংগা দ্বীপের অবস্থান নির্ণয় করলেন।

একে একে তিনি নিউ ক্যালেডোনিয়া, নরফোক এবং পাইনস দ্বীপ আবিষ্কার সম্পূর্ণ করে দক্ষিণ আটলান্টিকের পথ ধরে উত্তমাশা অন্তরীপ এবং আফ্রিকার উপকূল ছুঁয়ে ফিরে এলেন প্লাইমাউথে। সময়টা ছিল ১৭৭৫ খ্রিঃ ২৫ জুলাই।

কুক-এর তিন বছরব্যাপী দ্বিতীয় অভিযান নানা দিক থেকেই ছিল উল্লেখযোগ্য। এই সময়কালে সর্বমোট ষাট হাজার মাইল জলপথ তাঁকে অতিক্রম করতে হয়েছিল এবং এই দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রায় জাহাজের একটি মাত্র লোক ব্যাধিতে আক্রন্ত হয়ে মারা গিয়েছিল।

কুক-এর উল্লেখযোগ্য সাফল্য এটাই যে সেকালের জাহাজী জীবনে মারাত্মক স্কার্ভিরোগের ব্যাপক প্রকোপ সত্ত্বেও তিনি তাঁর সহযাত্রীদের নিরাপদ রাখতে সমর্থ হয়েছিলেন।

মাত্র কয়েক বছর আগেই কানাডায় ফরাসীদের বিরুদ্ধে নৌ-অভিযানে কুক অংশ গ্রহণ করেছিলেন।

সেই সময়ে আটলান্টিকের বুকেই দুরন্ত স্কার্ভির আক্রমণে তাঁদের বহরের প্রায় অর্ধেক লোক প্রাণ হারিয়েছিল।

সেই দুঃখজনক অভিজ্ঞতা তাঁকে তাঁর দ্বিতীয় সমুদ্র অভিযানে জাহাজের লোকজনকে নিরাপদ রাখতে সাহায্য করেছিল।

সেবার তিনি লক্ষ্য করেছিলেন, লবনজারিত শুওরের মাংস ও বিস্কুট থেকে রোগটি জাহাজে ছড়িয়েছিল। সমুদ্রে দুষ্প্রাপ্য কাঁচা সবজি ও ফল রোগের সফল প্রতিষেধকের কাজ করেছিল।

সেই অভিজ্ঞতা থেকে রোগটির অন্যতম প্রতিষেধক হিসাবে কুক নিজের উদ্ভাবিত একটি মিশ্র খাদ্য ব্যবহার করে যথেষ্ট সুফল পেয়েছিলেন।

গাজরের নির্যাস, লবণ সিক্ত কুচো বাঁধাকপি, স্কার্ভিঘাস ও লেবুর সিরাপের সঙ্গে নানান সব্জীর ঝোল মিশিয়ে তিনি একটি বহনযোগ্য মিশ্রণ খাদ্য হিসেবে চালু করেছিলেন।

অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে অবশ্য পালনীয় স্বাস্থ্যসচেতক কয়েকটি নিয়মও তিনি জাহাজে চালু করেছিলেন যার ফলে নাবিকদের চিরাচরিত অভ্যাসের মধ্যে একটা ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়েছিল।

তিনি বাধ্যতামূলক নিয়ম করেছিলেন, প্রত্যেককে তার বাসস্থান ও বিছানাপত্র পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, জাহাজ বন্দরে থাকাকালীন নিয়মিত স্নান করতে হবে।

স্বাস্থ্য সচেতক এই নির্দেশিকার ছাপানো কাগজ পরে যখন তিনি রয়্যাল সোসাইটির সদস্যদের মধ্যে বিলি করেন, তাঁরা তাঁর সাফল্যকে উচ্ছ্বসিত অভিনন্দন জানান। তিনি লাভ করেন কেপলি মেডেল পুরস্কার।

স্কার্ভির আক্রমণ প্রতিরোধের পন্থা উদ্ভাবনের কৃতিত্ব ছাড়াও স্কট-এর দ্বিতীয় অভিযানের ফলে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের একটি সঠিক ভৌগোলিক ধারণা পাওয়া গিয়েছিল।

তাঁর অঙ্কিত মানচিত্র বর্তমান সময়েও প্রায় একই রয়ে গেছে। আধুনিক মানচিত্রকারেরা তাঁর মানচিত্রই অনুসরণ করছেন। মেরু অভিযাত্রীদের কাছেও তাঁর অ্যান্টার্কটিকার বরফ অঞ্চলের রূপরেখা ও পরিসংখ্যান গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়ে থাকে।

রয়্যাল সোসাইটি কুক-এর কাজের স্বীকৃতি জানিয়েছিল তাঁকে তাদের সদস্যপদে মনোনীত করে। তাছাড়া তিনি পেয়েছিলেন গ্রীনউইচ হাসপাতালের সম্মানীয় ক্যাপ্টেন পদ।

দ্বিতীয় অভিযানের সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে কুক তৃতীয় একটি অভিযানের পরিকল্পনা নেন এবং সেটিই ছিল তাঁর শেষ সমুদ্র অভিযান।

উত্তর-পশ্চিমে আটলান্টিক থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত যে সমুদ্র পথটি যুগ যুগ ধরে দুঃসাহসিক নাবিক ও অভিযাত্রীদের আকর্ষণ করেছে, সেই পথ জানা ও প্রশান্ত মহাসাগরের অজানা দ্বীপ অবিষ্কার করা, এই উদ্দেশ্য নিয়ে স্কট তাঁর তৃতীয় অভিযান শুরু করলেন।

এই যাত্রায় কুক তাঁর যাত্রা শুরু করলেন পশ্চিম দিক থেকে অর্থাৎ প্ৰশান্ত মহাসাগর থেকে।

১৭৭৬ খ্রিঃ ২৫ জুন রেজলিউশন ও ডিসকভারি নামের জাহাজ দুটি অভিযাত্রীদের নিয়ে জলে ভাসল।

নোর থেকে উত্তমাশা অন্তরীপ ছুঁয়ে তিনি প্রথমে গেলেন তাসমানিয়ায়। তারপর নিউজিল্যান্ড, টংগা দ্বীপপুঞ্জ এবং তাহিতি প্রভৃতি তাঁর পূর্বে আবিষ্কৃত স্থানগুলো পার হয়ে উত্তরদিকে যাত্রা করলেন।

প্রশান্ত মহাসাগরের সর্ববৃহৎ দ্বীপমালা হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের প্রথম সন্ধান পেয়েছিলেন ১৫৫৫ খ্রিঃ একজন স্প্যানিশ অভিযাত্রী। কিন্তু এই আবিষ্কারের সংবাদ স্পেন দীর্ঘকাল সযত্নে গোপন রেখেছিল। সুদীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে শেষ পর্যন্ত এই ঘটনা বিস্মরণের অতলে হারিয়ে গিয়েছিল।

কুক এই যাত্রায় এই দ্বীপগুলোর পুনরাবিষ্কারের সৌজন্যে গৌরবের অধিকারী হলেন এবং নামকরণ করলেন তার বন্ধু তৎকালীন রাষ্ট্রীয় নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধায়ক প্রধান লর্ড স্যান্ডউইচের নামে স্যান্ডউইচ দ্বীপপুঞ্জ।

উত্তর থেকে পশ্চিম উপকূল বরাবর এগিয়ে স্কট পৌঁছলেন আমেরিকার ওরেগন নামক স্থানে। সেখান থেকে উপকূল ধরে জাহাজ ঘোরালেন উত্তরের হিম অঞ্চলের অভিমুখে।

বিপজ্জনক সমুদ্রপথ পাড়ি দেবার সময়ও কুক তাঁর প্রকৃত দুঃসাহসিক কাজটি বিস্মৃত হননি।

সর্তকতার সঙ্গে তিনি উপকূলরেখা পরীক্ষা ও জরীপ করেছেন, ওই অঞ্চলের মানচিত্র অঙ্কন করেছেন।

জাহাজ অগ্রসর হচ্ছিল বেরিং প্রণালীর ভেতর দিয়ে। কিন্তু অক্ষাংশের সত্তর ডিগ্রি কোণ বরাবর পৌঁছে বাধা পেলেন নিরেট বরফের দেয়ালে। বাধ্য হয়েই কুককে পেছনে ফিরতে হল।

এই দুঃসাহসিক অভিযাত্রী জাহাজ নিয়ে পিছু হটার সময়েও কামচাটকা ও অ্যালুশিয়ান দ্বীপপুঞ্জে যথাসম্ভব সমীক্ষা চালিয়ে নানা তথ্য সংগ্রহ করলেন, জরীপ করে মানচিত্র তৈরি করলেন।

একসময়ে তাঁর জাহাজ এসে ভিড়ল হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে। সময়টা ছিল ১৭৭৯ খ্রিঃ জানুয়ারী মাস। দুটি জাহাজের নোঙর ফেলা হল কীলাকেকুয়া উপসাগরে।

দিন পনের নাবিকরা তীরভূমিতে বিশ্রাম ও আনন্দ উপভোগ করল। এই সুযোগে ইতিহাসের এক দুঃখজনক বিয়োগান্ত ঘটনা সংঘটিত হল।

সেই অঞ্চলের আদিবাসিন্দাদের সঙ্গে কুকের সহযাত্রীদের আকস্মিক ভাবে সংঘর্ষ উপস্থিত হল।

জাহাজ থেকে সাঁড়াশি চুরি গিয়েছিল। চুরির অপরাধে ধরা পড়ল এক আদিবাসী। শাস্তি হিসাবে তাকে বেত্রাঘাত করা হল। সেখানকার আদিবাসীরা স্বভাবগতভাবেই ছিল চোর। শাস্তি পেয়েও তাই তারা দমল না।

সেই রাতেই আরো কতগুলি সাঁড়াশী চুরি গেল। অনেক অনুসন্ধানেও এবারে অপরাধী ধরা পড়ল না। কুক তখন তীরে নেমে গিয়ে আদিবাসীদের জানালেন, চুরি রোধ করার জন্য জামিন হিসাবে উপজাতি রাজাকে বন্দী করা হবে।

ওদিকে কুকের সহযাত্রী নাবিকরা তাঁর নিষেধ সত্ত্বেও স্থানীয় অধিবাসীদের ভয় দেখাবার জন্য বন্দুক চালাল। তাতে ক্ষিপ্ত জনতা মারমুখী হয়ে উঠলে কুককে তীরে ফেলে রেখেই তার সঙ্গীরা জাহাজে পালিয়ে গেল।

আদিবাসীরা তখন তাঁকে ঘিরে ধরে নির্মম ভাবে অস্ত্রাঘাত করে হত্যা করল। আদিবাসীদের ক্রোধ তাতেও প্রশমিত হল না। তারা কুকের দেহে আগুন ধরিয়ে দিল।

জাহাজের দায়িত্বশীল অফিসারদের ভীরুতা ও কর্তব্যহীনতার ফলে মানব সভ্যতার এক দুঃসাহসিক আবিষ্কারকের জীবনের শোচনীয় পরিণতি ঘটল। কুকের দেহাবশেষ থেকে কয়েকখানি হাড় মাত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। কয়েকদিন পর সেগুলোই সমাহিত করা হল।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নির্ভুল মানচিত্র অঙ্কন অভিযাত্রী-আবিষ্কারক কুকের অবিস্মরণীয় অবদান।

অদম্য মনোবল ও একাগ্র নিষ্ঠার বলে তিনি সকল প্রকার প্রতিকূলতাকে জয় করে নিজের লক্ষ্য সাধন করেছেন।

তাঁর জীবন ছিল কঠিন নিয়ম ও শৃঙ্খলায় বাঁধা। অসাধারণ ব্যক্তিত্বের প্রভাবে সহযাত্রীদের স্বভাবকেও নিয়মানুবর্তিতার অধীনে আনতে পেরেছিলেন তিনি।

কুক ছিলেন নির্ভীক, উদ্যমশীল ও সদাহাস্যময় এক আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। সবসময়ই নিজেকে কোনও না কোনও কাজে ব্যাপৃত রাখতেন, প্রতিটি কাজ করতেন সময় মেপে, নিষ্ঠাভরে।

অজানা দ্বীপের আদিবাসীদের প্রতি তাঁর মানবিক ব্যবহার কখনও ক্ষুণ্ণ হত না। সর্বত্রই তিনি পেয়েছেন স্থানীয় জনতার আন্তরিক সংবর্ধনা। একজন সফল অভিযাত্রী ও তথ্যনিষ্ঠ অবিষ্কারক হিসাবে বিশ্ববাসীর কাছে তিনি আজও স্মরণীয় হয়ে আছেন।

ক্যাপ্টেন কুক কোন দেশ আবিষ্কার করেন?

ক্যাপ্টেন কুক ১৮ জানুয়ারি ১৭৭৮ সালে, সবার আড়ালে থাকা এক বিশাল জনপদ আবিষ্কারের দিন। সেদিন হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ আবিষ্কার করেন ইংরেজ অভিযাত্রী ক্যাপ্টেন জেমস কুক।

ক্যাপ্টেন জেমস কুকের প্রথম কাজ কি ছিল?

17 বছর বয়সে, তিনি হুইটবির কাছে স্টেইথেসে একজন দোকানদারের জন্য কাজ করেছিলেন। এখানে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে সমুদ্রে একটি জীবন যা তিনি চান এবং তিনি হুইটবি কয়লা শিপারদের একটি ফার্মের কাছে শিক্ষানবিশ হয়েছিলেন। 18 বছর বয়সে, তিনি প্রথম সমুদ্রে যান।

জেমস কুক কে ছিলেন?

ক্যাপ্টেন জেমস কুক অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রধান ইংরেজ অভিযাত্রী, নাবিক ও মানচিত্রবিদ ছিলেন।

Leave a Comment