বিজ্ঞানী চরক এর জীবনী সমগ্র – Biography of Charak

বিজ্ঞানী চরক এর জীবনী সমগ্র – Biography Of Charak: আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মহান ব্যক্তিদের জীবনী সমগ্র। মহান ব্যক্তি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁদের জীবনের ক্ষুদ্রতম অংশগুলি আমাদের জন্য শিক্ষামূলক হতে পারে। বর্তমানে আমরা এই মহান ব্যক্তিদের ভুলতে বসেছি। যাঁরা যুগ যুগ ধরে তাদের কর্ম ও খ্যাতির মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং নামজ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প ও সাহিত্যের জগতে এক অনন্য অবদান রেখেছেন এবং তাঁদের শ্রেষ্ঠ গুণাবলী, চরিত্র দ্বারা দেশ ও জাতির গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। সেইসব মহান ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম বিজ্ঞানী চরক -এর সমগ্র জীবনী সম্পর্কে এখানে জানব।

বিজ্ঞানী চরক এর জীবনী সমগ্র – Biography of Charak

নামচরক
Born300 BC
NationalityIndian
BooksCharaka Samhita: Sutra sthana
FieldsMedicine

চরক -এর জীবনী সমগ্র: চরক প্রাচীনকালে ইউরোপের অধিকাংশ দেশ যখন অজ্ঞানতার অন্ধকারে আচ্ছন্ন সেই সময় আমাদের দেশে রচিত হয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের শ্রেষ্ঠগ্রন্থ চরক সংহিতা।

এই গ্রন্থের রচয়িতা মহাজ্ঞানী চরকই হলেন আয়ুর্বেদ চিকিৎসার প্রাণপ্রতিষ্ঠাতা। বিশ্বের চিকিৎসা ইতিহাসে তাঁর অবদান আজও এক মহাবিস্ময়।

চরকের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় আমাদের কাছে অজানা। তাঁর ব্যক্তি পরিচয় নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

বৌদ্ধশাস্ত্র গ্রন্থ ত্রিপিটকের একটি চীনা সংস্করণে চরক নামের উল্লেখ পাওয়া যায়৷ তাতে চরককে কুষাণরাজ কণিষ্কের রাজসভার প্রধান চিকিৎসকরূপে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রখ্যাত ফরাসী প্রাচ্যবিশেষজ্ঞ সিলভা লেভির মতে চীনা ত্রিপিটক গ্রন্থে উল্লেখিত চরকই চরক সংহিতার রচয়িতা।

কিন্তু এই তথ্যে অসঙ্গতি ধরা পড়েছে ভিন্ন গবেষকদের চোখে। তারা দেখান যে, চরক সংহিতা গ্রন্থে চরক নিজে কোথাও উল্লেখ করেননি কণিষ্কের কথা। যিনি রাজসভার প্রধান চিকিৎসক, এবং যাঁর গবেষণার জন্য অকাতরে অর্থ ব্যয় করেন রাজা, গ্রন্থকার তাঁর কথা গ্রন্থে একবারও উল্লেখ করবেন না, তা যুগপ্রচলিত রীতির বিপরীত।

ভারতের সর্বপ্রাচীন সাহিত্য বেদে চরক শব্দের উল্লেখ দেখা যায়। তবে সেখানে চরক বলা হয়েছে বেদের কোনও এক শাখা বা বিষয়ে অনুরক্ত ব্যক্তিকে। আবার দেশে দেশে ঘুরে যাঁরা শিক্ষা বিস্তারের কম করেন, তাঁদেরও চরক বলা হয়েছে।

আরো পড়ুন- আর্কিমিডিস জীবনী

খ্রিস্টপূর্ব ছয় শতকে আবির্ভূত হয়েছিলেন পাণিনি। তার ব্যাকরণ গ্রন্থে সূত্রে চরকের উল্লেখ পাওয়া যায় । এখানেও চরক নাম উল্লিখিত হয়েছে বিশেষণ হিসেবে অর্থাৎ বেদের নানা শাখার অনুগামীদের বিশেষণ।

পাণিনির সূত্রের সঙ্গেও তাই ঐতিহাসিকগণ চিকিৎসাশাস্ত্রবিদ চরকের কোন সাদৃশ্য খুঁজে পাননি। কোন কোন গবেষক চরক-সংহিতাকার চরককে যোগবিজ্ঞানের প্রবর্তক পাতঞ্জলীর সমকালের বিজ্ঞানী বলে উল্লেখ করেছেন।

পতঞ্জলীর পরবর্তীকালের অনেক লেখকই তাঁকে শেষনাগের অবতার হিসেবে দেখিয়েছেন।

আবার চিকিৎসক চরককেও শেষনাগের অবতার বলে কোন কোন গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই সকল তথ্য বিশ্লেষণ করে অনেক পন্ডিত মন্তব্য করেছেন, পাতঞ্জলী এবং চরক অভিন্ন ব্যক্তি। কিন্তু পাতঞ্জলীর চরক-সংহিতার ওপর রচিত ভাষ্য এই যুক্তিকে খন্ডন করে দেয়৷ কেন না, ভাষ্য রচয়িতার অবস্থানকাল পরে হওয়াই স্বাভাবিক ঘটনা। পাতঞ্জলীর অবস্থান কাল হল খ্রিস্টপূর্ব ১৭৫ অব্দ। সেই সময়ে চরক ভারতের চিকিৎসাক্ষেত্রে সূর্যের মত ভাস্বর এক নাম।

চরক আসলে কারো নাম, না ছদ্মনাম অথবা উপাধি -এই সব তথ্য জানার কোন উপায় নেই।

কালের গর্ভে সব তথ্যই চাপা পড়ে গেছে। ফলে চরকের জীবনকে সরিয়ে রেখে তাঁর কর্মসাধনারই আমরা সন্ধান করেছি।

চরক নামের মধ্যে আমরা পাই ভারতীয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের এক অনন্য সাধারণ প্রতিভার দীর্ঘ অনুসন্ধান ও শ্রমের সমন্বয়। কেবল চিকিৎসক হিসেবেই নয়, চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবেও তাঁর সমকক্ষ ব্যক্তিত্ব পৃথিবীর বিজ্ঞানের ইতিহাসে বিরল।

খ্রিস্টীয় সপ্তম, অষ্টম ও নবম শতাব্দীতে ভারতে যখন আয়ুর্বেদ চিকিৎসার পূর্ণ বিকাশের কাল সেই সময় আমরা দেখি চরক-সংহিতাই নিয়ন্ত্রণ করছে সেই গৌরব যাত্রা। কেবল তাই নয়, এই তিনশো বছরের মধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়েছে, ল্যাটিন ও আরবী ভাষার অনূদিত হয়ে ক্রমশ বিস্তৃত হয়েছে চরক সংহিতার প্রয়োগ ও প্রচারের ক্ষেত্র।

বিজ্ঞান-ভিত্তিক এবং ব্যবহারযোগ্যতার বহুমুখীনতা যেভাবে আয়ুর্বেদের বিভিন্ন শাখাকে সমৃদ্ধ করেছে এই গ্রন্থ, তা আর কোন মনীষীর পক্ষে সম্ভব হয়নি। চরকেব সমস্ত তত্ত্বকেই অভ্রান্ত এবং অমোঘ বলে মেনে নিতে হয়েছে সকলকে।

ভারতের চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে চরক এক কথায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থানে বর্তমান। একাদশ থেকে যোড়শ শতক পর্যন্ত ভারতে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের ওপরে নতুন বই লেখার কোন প্রচেষ্টা হয়নি। এই সময়কালে ভারতীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা রচনা করেছেন চরক-সংহিতার বিভিন্ন ভাষ্য৷

চরক সংহিতা বাংলা:

চরক-সংহিতার ব্যাখ্যাকার হিসেবে বিখ্যাত হয়ে রয়েছেন চক্রপাণি, বিজয় রক্ষিত, শ্রীকান্ত বাচস্পতি, কাদ্ভদত্ত, শিবদাস, ভাবমিশ্র প্রভৃতি আয়ুর্বেদাচার্যগণ। সকলেই চরককে সর্বকালের আয়ুর্বেদের শ্রেষ্ঠ আচার্যরূপে স্বীকার করেছেন।

চরকের জীবনসাধনার শ্রেষ্ঠতম কীর্তি হল চরক-সংহিতা। তবে এই সংহিতা গ্রন্থের মূলের সূচনা যে চরকের হাতে হয়নি তা জানা যায়।

তা করেছিলেন মহাজ্ঞানী অগ্নিবেশ, খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম বা অষ্টম শতকে তিনি বর্তমান ছিলেন।

অগ্নিবেশের পুঁথিটির সন্ধান পাওয়া যায় খ্রিস্টীয় একাদশ শতক পর্যন্ত। এই বইটির নাম ছিল অগ্নিবেশ-তন্ত্র।

অগ্নিবেশের পরবর্তী কালের অনেক নতুন নতুন আবিষ্কার নতুন তত্ত্ব স্বাভাবিকভাবেই কালানুবর্তের সঙ্গে সঙ্গে অগ্নিবেশের আয়ুর্বেদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গিয়েছিল।

অনুমান করা হয় খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের পূর্বেই চরক নানা তত্ত্ব ও আবিষ্কারের সঙ্গে যুক্ত করে নিজ প্রতিভাবলে অগ্নিবেশ-তন্ত্রকে বিপুলাকারে চরক সংহিতায় রূপান্তরিত করেছিলেন।

আমরা যে চরক-সংহিতার সঙ্গে পরিচিত সেটি হল মূল গ্রন্থের সম্পাদিত রূপ। কাশ্মীরের প্রখ্যাত আয়ুর্বেদাচার্য ও গবেষক দুধবল চরক-সংহিতাকে সম্পাদনা ও সম্পূর্ণ করেন।

আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের রচয়িতা:

এই গ্রন্থের পাতা ওল্টালেই ভারতীয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের হৃদস্পন্দন অনুভব করা যায়। প্রাচীন ভারতে হিন্দুসমাজের উচ্চবর্ণের মানুষরাই আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের চর্চা করতেন। এদের মধ্যে ব্রাহ্মণ এবং বৈদ্য এই দুটি ভাগ ছিল।

আয়ুর্বেদের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজটা করতেন ব্রাহ্মণ চিকিৎসকরা। তাঁরা এভাবে নানা রোগের নিরাময়ের ওষুধ তৈরি করতেন। যে সকল ব্রাহ্মণ ঘরে ঘরে গিয়ে রোগী দেখতেন এবং রোগচিকিৎসাকে বৃত্তি হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন তাঁদের বলা হত বৈদ্য।

বিজ্ঞানী চরক এর জীবনী সমগ্র – Biography Of Charak

লোকচিকিৎসার মাধ্যমে যা উপার্জিত হত তাই দিয়েই এই বৈদ্য ব্রাহ্মণরা জীবনযাত্রা নির্বাহ করতেন।

তবে রোগ চিকিৎসার ক্ষেত্রে বর্ণভেদের বিচারের বিশেষ কড়াকড়ি ছিল না। যে কোন বর্ণের মানুষই বিশেষ বিশেষ গুণও যোগ্যতা বলে চিকিৎসাশাস্ত্রের পাঠ নিতে পারতেন।

আয়ুর্বেদ চিকিৎসা শিক্ষার জন্য উপযুক্ততা বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে চরক সংহিতায়।

যদি কারো থাকে সুগঠিত স্বাস্থ্য, মনের শক্তি, সামাজিক রীতিনীতির শিক্ষা, আত্মিক বল, বিনয়, নীতিপরায়ণতা, জ্ঞানলাভের স্পৃহা এবং ব্রহ্মচর্য তাহলে সে চিকিৎসা শিক্ষার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

ছাত্রকে যজ্ঞাগ্নির সামনে বসে গুরু ও দেবতাকে অর্ঘ্য নিবেদন করতে হবে। পরে পবিত্র অগ্নি তিনবার প্রদক্ষিণ করে শপথবাক্য পাঠ করতে হবে।

বলতে হবে
(1) ছাত্রজীবনে আমি ব্রহ্মচর্য পালন করব, নিরামিষাশী হব, সর্বক্ষেত্রে সত্যবাদী হব, মনে অসুয়া স্থান দেব না কারও অনিষ্ট করব না বা অস্ত্র ধারণ করব না।


(2) আচার্যের প্রতি শ্রদ্ধা ও নিষ্ঠা অবিচল রাখব। আচার্যের পুত্রসম বাধ্য থেকে সকল প্রকার আদেশ পালন করব। আচার্যের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতি আমার সর্বদা লক্ষ থাকবে; কখনো দুর্বিনীত হব না।


(3) ভবিষ্যৎ জীবনে যদি চিকিৎসক হিসেবে সফল ও যশস্বী হই, সর্বজীবের মঙ্গল সাধনই হবে আমার ব্রত।


(4) রুগীর সেবা ও সুখের জন্য সর্বদা তৎপর থাকব। চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পদলাভের প্রবৃত্তি যেন কখনো না জাগে। কোনপ্রকার অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে কখনো জড়িত হব না।


(5) শ্রুতি সুখকর এবং আত্মশক্তিতে পরিপূর্ণ কথা দ্বারা রুগীর মনোবল জাগ্রত করবার চেষ্টা করব। সুভাষী হব। সময়ের কাজ সময়ে করবার চেষ্টা করব। অভিজ্ঞতাকে কাজে প্রয়োগ করব।


(6) সমাজের চোখে ঘৃণ্য ব্যক্তির চিকিৎসা করব না। যারা দুষ্ট, রহস্যময়, সম্মানের অযোগ্য, স্বামী বা গুরুজন পরিত্যক্তা নারী এদের চিকিৎসা করব না।


(7) স্বামী বা গুরুজনের বিনানুমতিতে কোন নারীর প্রদত্ত উপহার সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করব। রুগীর বাড়ির পরিচিত কোন ব্যক্তির সঙ্গেই রুগীর বাড়িতে যাব। তার অনুমতি নিয়েই রুগীর চিকিৎসায় নিযুক্ত হব। চিকিৎসাকালে মন যেন ভিন্নমুখী না হয়।


(8) রুগীর ব্যক্তিজীবন সর্বপ্রথমে সংগুপ্ত রাখব।


(9) কথা কম বলব । নিজেকে কখনো জ্ঞানী বলে অহঙ্কার করব না।

বিজ্ঞানী চরক এর জীবনী সমগ্র – Biography Of Charak

শপথ পাঠ শেষ করার পর আচার্যের পদপ্রান্তে বসে আয়ুর্বেদের শিক্ষা গ্রহণ শুরু হয় ছাত্রের। ছাত্র তখন আচার্যের পরিবারের একজন বলে গণ্য হয়। কায়মনে সে গুরু সেবা করে আর আচার্যের চিকিৎসা লক্ষ্য করে। এভাবেই সে শিক্ষা কবে আচার্যের কথার ভঙ্গী, স্বর, রোগ পরীক্ষা ও রোগ নির্ণয়ের প্রণালী, নিরাময়ের উপায় সন্ধান ইত্যাদি। এসকল ক্ষেত্রে প্রয়োজন মত ছাত্র আচার্যকে সাহায্য করবে।

নানা ওষুধের নাম ও কাজ এবং প্রয়োগ বিধি শিক্ষা করতে হয়। জানতে হয় শরীরের নানা অংশের শারীরবৃত্তীয় পরিচয় ও কাজ। শল্যচিকিৎসার নানা যন্ত্রপাতি তাদের প্রয়োগ পদ্ধতি বিষয়েও সম্যক ধারণা করতে হবে।

চিকিৎসা শিক্ষা অধিগত করতে প্রয়োজন হয় ছয় থেকে সাত বছরের কঠিন পরিশ্রম, অধ্যয়ন ও অধ্যবসায়।

ছাত্রের শিক্ষা সম্পর্কে আচার্য যখন নিশ্চিত হন, তখনই তিনি ছাত্রকে নিয়ে গিয়ে রাজসভায় পরিচিত করিয়ে দেন। রাজসম্মতি লাভ করার পরই ছাত্র স্বাধীনভাবে লোক-চিকিৎসা শুরু করতে পারেন।

ছাত্রের ব্যবহার এবং অধীত বিদ্যায় উন্নতি সম্পর্কে যদি গুরুর মনে সংশয় থাকে তাহলে ছাত্রকে তার ছাত্রজীবন চালিয়ে যেতে হয় যতদিন পর্যন্ত না আচার্য সর্ববিষয়ে সন্তুষ্ট হন।

আরও পড়ুন- গল্পের রাজা ঈশপ জীবনী

সেই প্রাচীনকালে সকল চিকিৎসকেরই প্রধান লক্ষ্য হল রাজসভার চিকিৎসক হওয়া। রাজার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের কাজ ছিল ব্যাপক । রাজার বা রাজপরিবারের কারো রোগ হলে সারিয়ে তুলতে হতো। কেবল তাই নয়, কেউ চক্রান্ত করে রাজার খাবারে গোপনে বিষ প্রয়োগ করল কিনা, কোথাও রাজাকে শারীরিক দুর্বিপাকে পড়তে হবে কিনা এসব বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখাও রাজ চিকিৎসকের অন্যতম জরুরী কাজ৷

রাজা যুদ্ধযাত্রা করলে চিকিৎসককেও সঙ্গে যেতে হত। যথাকালে প্রয়োজনীয় শরীর ও স্বাস্থ্য রক্ষার ব্যবস্থা তাকেই করতে হবে।

এই সমস্ত কর্তব্য ও দায়িত্ব পালনের বিনিময়ে চিকিৎসক রাজার কাছ থেকে লাভ করত ভাল মাসোহারা, বিভিন্ন সুযোগসুবিধা এবং পুরস্কার।

চরক এইভাবে তাঁর সময়ের চিকিৎসাশাস্ত্র শিক্ষার নিয়ম-রীতির কথা আমাদের জানিয়েছেন।

স্বভাবতঃই আমাদের জানতে ইচ্ছা করে চরক তার চিকিৎসায় কি কি বিষয় নিয়ে অনুশীলন করেছিলেন।

সংহিতা গ্রন্থে চরক বহু বিষয়ের উল্লেখ করেছেন, যেমন মানব শরীরের গঠন, যাকে আমরা বলি অ্যানাটমি, শরীরের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপ, ভ্রূণসৃষ্টি ও গঠন, বায়ু পিত্ত ও কফ অর্থাৎ শরীরের ত্রিধাতুর সঙ্গে শরীরের সুস্থতা ও অসুস্থতার সম্পর্ক, ত্রিধাতুর কাম্য অবস্থা কাকে বলে, বিভিন্ন রোগের লক্ষণ ও রোগের শ্রেণীবিভাগ, শরীরে রোগের পূর্বাভাস, রোগ নির্ণয়, প্যাথোলজি বা রোগবিকারবিদ্যা এবং বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা ইত্যাদি।

আর একটি অত্যন্ত কৌতূহলদ্দীপক বিষয় সম্পর্কে চরক বিস্তারিত আলোচনা করেছেন, তা হল চিরযৌবন লাভের বৈজ্ঞানিক উপায়। এই সমস্ত বিষয় নিয়েই গড়ে উঠেছে চরকের আয়ুর্বেদ শাস্ত্র।

এবারে কয়েকটি বিশেষ বিষয়ের আলোচনা করে আমরা চরকের সংহিতা গ্রন্থের বিবরণের সঙ্গে পরিচিত হতে পারব।

মানব শরীরের গঠন সম্পর্কে এ যুগের চিকিৎসাশাস্ত্র আমাদের অনেক তথ্যই জানিয়েছে।

এক্ষেত্রে দুহাজার বছরেরও আগে অর্থাৎ খ্রিষ্টপূর্ব দুশ বছর আগে বলা চরকের অনেক তথ্যই বিচিত্র মনে হবে।

বিজ্ঞানী চরক এর জীবনী সমগ্র – Biography Of Charak

চরক বলেছেন, দাঁত ও নখ মিলিয়ে আমাদের দেহে হাড়ের সংখ্যা ৩৬০ টি। সংখ্যা ধরে আলাদা ভাবেই হাড়গুলোকে দেখিয়েছেন চরক।

তার হিসেবটা এ রকম, ৩২ দাঁত ও দাঁতের গর্ত, নখ ২০, হাত পায়ের আঙুলের নখ ৬০, দীর্ঘাস্থি ২০ এবং চারটি দীর্ঘাস্থির নিম্নভাগ, গোড়ালির হাড় ২, পায়ের গিঁটের হাড় ৪, মণিবন্ধের হাড় ৪, চার হাতের সামনের হাড়, চার পায়ের হাড়, দুই হাঁটুর হাড় বা মালাইচাকি, দুই কনুইয়ের হাড়, দুই উরুর হাড়, দুই বাহুর ফাঁপা হাড়, দুই কাঁধের হাড়, দুই কণ্ঠার হাড়, দুই কটির হাড়, এক পিউবিক হাড়, পিছনের হাড় ৪৫, ২৪ অবি, বুকের হাড় ১৪, বুকের পাঁজরার হাড় ২৪, গলার হাড় ১৫, বায়ুনলি ১, তালুর গর্ত ২, চোয়ালের নিচের হাড় ১, চোয়ালের বন্ধনীর হাড় ২, নাকের হাড় ১, গালের হাড় ১, ভুরুর হাড় ১, কপালের দুপাশের হাড় ২, মাথার খুলির চাটু আকৃতির হাড় ৪, ইত্যাদি।

মানব শরীরের হাড়ের সংখ্যা ৩৬০ বলেছেন চরক, অপর পক্ষে সুশ্রুতের হিসাব হল ৩০০।

চরক পেশীর যে বর্ণনা দিয়েছেন তাতে দেখা যায় মাংসের দলাকেই তিনি পেশী হিসেবে ধরেছেন। এখানে তিনি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টির পরিচয় দিতে পারেন নি। হৃদযন্ত্র সম্পর্কে চরক বলেছেন- এটি একটি গর্ত, সেই গর্ত থেকে দশটি নলা বেরিয়েছে, সেগুলো শরীরের নানা স্থানের সঙ্গে যুক্ত।

মস্তিষ্কের গঠন সম্পর্কে বা ফুসফুস সম্পর্কে খুব পরিষ্কার ধারণা তিনি দিতে পারেননি।

ভ্রুণ কি, কিভাবে ভ্রুণের বিকাশ লাভ হয়, এসব নিয়ে চরক তাঁর ভূণবিদ্যায় আলোচনা করেছেন। তাঁর মতে নারীপুরুষের মিলনের মধ্য দিয়ে পুরুষের বীর্যরস ও নারীর রক্ত মিলে ভ্রূণের বীজ সৃষ্টি হয়। ভূণের বিকাশ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ভূণের মধ্যে বীর্যরস ও নারীরক্তের মাত্রা যদি সমান থাকে অথবা বীর্য যদি হয় প্রজনন শক্তিবিহীন তবে সেই ভ্ৰূণ হিজড়ায় রূপান্তরিত হয়ে থাকে।

মিলনের ফলে সৃষ্ট ভূণের বীজ যদি দুই বা দুইয়ের অধিক অংশে বিভক্ত হয় তখনই গর্ভে দুই বা ততোধিক সন্তান জন্মের সম্ভাবনা থাকে।

আবার যদি নারীরস (রক্ত) -এর তুলনায় বীর্যরস অধিক জোরালো হয় তবে সন্তান হবে পুরুষ। ঠিক বিপরীত অবস্থায় সন্তান হয় নারী।

ভ্রুণ সৃষ্টি ও লিঙ্গ নির্ধারণের পর চরক ভূণবিকাশের স্তরগুলো নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন, প্রথম মাসে ভ্রুণের অবস্থা থাকে একটা আঠালো পদার্থের মতো।

দ্বিতীয় মাসে এই আঠালো পদার্থ কিছুটা কঠিন হয়। এই কঠিনাকার বস্তুতে শরীরের পাঁচটি বিশেষ অংশের চিহ্ন পরিস্ফুট হয় পরবর্তী মাসে। চতুর্থ মাসে অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো স্পষ্ট ও বর্ধিত হয় এবং চেতনা জন্মে। এই মাস থেকেই শুরু হয়ে যায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া।

পঞ্চম মাসে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বৃদ্ধির ও বিকাশের সঙ্গে চেতনার পরিধিও বিস্তৃত হয়।

ভূণের দেহে বুদ্ধির বিকাশ ঘটে ষষ্ঠ মাসে। সপ্তম মাসে প্রত্যঙ্গসমূহের বিকাশ সম্পূর্ণ হয়।

এই পর্যন্ত যা বিকাশ লাভ করেছে সেই সব পূর্ণতা প্রাপ্ত হয় অষ্টম মাসের মধ্যে। এইভাবে ভ্রুণ ক্রমে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে পরিপূর্ণ শিশুর রূপ লাভ করে নবম বা দশম মাসের মধ্যে।

সস্তানের শরীরের নানা অংশের উপাদান ও বৈশিষ্ট্যের মধ্যে জনক বা জননীর প্রভাব থাকে। চরকের মতে সন্তান মায়ের কাছ থেকে পায় ত্বক, রক্ত, মাংস, নাভি, হৃদযন্ত্র, ফুসফুস, যকৃৎ, প্লীহা, নারী শিশুর ক্ষেত্রে স্তন ও শ্রোণীচক্র, পাকস্থলী, অস্ত্র এবং মজ্জা।

জনকের কাছ থেকে পায় মাথা, অস্থি, নখ, দাঁত, শিরা, বীর্য ইত্যাদি।

ভূণবিকাশের তৃতীয় মাসেই যে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের পূর্ণতা সম্পন্ন হয় সে সম্পর্কে চরক স্থির নিশ্চয় ছিলেন।

গর্ভস্থ সন্তান ছেলে অথবা মেয়ে তা বুঝবার বিশেষ কতগুলি লক্ষণের কথা চরক উল্লেখ করেছেন ৷
সেগুলি হল:

বিজ্ঞানী চরক এর জীবনী সমগ্র – Biography Of Charak

1. যদি মায়ের ডান স্তন থেকে দুধ নির্গত হয়।

2. যদি চলতে গিয়ে মা প্রথমেই ডান পা বাড়ায়।

3. যদি ডান চোখকে অপেক্ষাকৃত বড় মনে হয়।


4. পুরুষ নামীয় জিনিষের প্রতি আকর্ষণ দেখা যায়।


5. পুরুষ নামের ফুল যদি স্বপ্নে দেখে।


6. মুখ যদি ক্রমশই উজ্জ্বলতর হয়।


7. নারীসঙ্গই যদি সবসময় কামনা করে।


8. কথায় কথায় পুরুষালী মেজাজ প্রকাশ পায় এবং কাজের ক্ষেত্রে পুরুষসুলভ খবরদারি দেখায় তবে গর্ভস্থ সন্তান যে পুরুষ তাতে কোন সন্দেহ নাই।

বিজ্ঞানী চরক এর জীবনী সমগ্র – Biography Of Charak

চরকের শারীরবিদ্যায় বলা হয়েছে, সমস্ত সৃষ্টির মূলেই রয়েছে পঞ্চভূতের সমন্বয়৷ আমরা খাদ্য হিসাবে যা কিছু গ্রহণ করি এবং যে সব উপাদানে আমাদের শরীর তৈরি এর সবকিছুই মূলতঃ পঞ্চভূতের সমাহার।

পঞ্চভূত বলতে ক্ষিতী- মাটি, অপ- জল, তেজ- আগুন, মরুৎ- আকাশ, এবং বায়ু। রস, রক্ত, মাংস, মেদ, অস্থি, মজ্জা এবং শুক্র, শরীরে এইসব উপাদানের মধ্যেই পঞ্চভূত মিশে থাকে৷

সম্মিলিতভাবে এই উপাদানগুলিকে বলে ধাতু। আমরা যে খাদ্য গ্রহণ করি তার দ্বারা শরীরের এই ধাতুই পুষ্টিলাভ করে। এই কারণে এই ধাতুগুলোর মধ্যে থাকে স্বাভাবিক সমতা যাকে বলে সাম্যাবস্থা। ধাতুর সাম্যাবস্থা আমাদের পরিপাক ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখে।

চরক বলেছেন, আহারের পর খাদ্য প্রথমে রসে পরিণত হয়। এই রস থেকেই যাবতীয় ধাতু উৎপন্ন হয়। যখন পরিপাক ক্রিয়া চলতে থাকে সেইসময় যে বিক্রিয়ার আবহ সৃষ্টি হয় তার দুটি স্তর রয়েছে।

পর্যায়ক্রমে এই স্তরগুলো হল প্রথমে মিষ্টি স্বাদের আবহ। সেই অবস্থা মিলিয়ে গেলে আসে অম্লভাবের আবহ।

মিষ্টস্বাদের ভাব থেকে সৃষ্টি হয় কফ। আম্লিক আবহ খাদ্যবস্তুর জীর্ণত্ব বৃদ্ধি করে। জীর্ণ খাদ্য থেকে অস্ত্রে ধীরে ধীরে এক ধরনের তরল পদার্থ তৈরি হয়। এই তরল পদার্থই হল পিত্ত।

জীর্ণ খাবারের শেষ অংশ অস্ত্রের ভেতরেই শক্ত আকার নেয়। এই অবস্থায় একপ্রকার তিক্তস্বাদের আবহ এখানেই উৎপন্ন হয়। এই আবহ থেকে উৎপন্ন হয় বায়ু বা বাত৷ কফ পিত্ত বায়ু শরীরের এই উপাদানগুলোকে এক সঙ্গে বলা হয় ত্রি-দোষ৷ খাদ্য পরিপাকের সঙ্গে সঙ্গে ধাতু ও এই ত্রি-দোষ পাশাপাশি শরীরে তৈরি হয়।

বিজ্ঞানী চরক এর জীবনী সমগ্র – Biography Of Charak

শরীরের ক্ষেত্রে ত্রি-দোষের গুরুত্ব চরক খুব ভাল ভাবে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিয়েছেন। শরীরে এদের প্রত্যেকের কাজই নির্দিষ্ট। আমাদের নিশ্বাস-প্রশ্বাস, হাঁটাচলার কাজের শক্তি, কথাবলা, প্রস্রাব-পায়খানার কাজ, এইসব ক্ষেত্রেই বায়ু ক্রিয়াশীল।

পিত্তের কাজ পরিপাকে সাহায্য করা। এছাড়া, দৃষ্টিশক্তিকে সতেজ রাখা এবং শরীরে তাপ যোগান দেওয়াও পিত্তের কাজ।

আমাদের মনের প্রফুল্লতা, বুদ্ধিবৃত্তি এবং লাবণ্য- এই সবকিছুর পেছনেই রয়েছে পিত্তর অবদান।

কফও হেলাফেলার নয়। কফ শরীরকে মজবুত রাখে, সহ্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে, দেহের ওজন স্বাভাবিক রাখে, সর্বোপরি যৌনক্ষমতা সতেজ রাখে।

আরও পড়ুন- রাহুল সাংকৃত্যায়ন জীবনী

সুস্থ শরীর মানেই, শরীরে এই তিন দোষের সাম্যভাব বজায় আছে অর্থাৎ মাত্রার হিসাবে কোনও একটি বা দুটি বেশি বা কম নেই।

কফের মাত্রা অপেক্ষাকৃত বেশি এমন শরীরের ত্বক হয় নরম, তেলচুকচুকে, আর ছিমছাম।

যেই শরীরে পিত্তের মাত্রা বেশি তাদের চামড়া হয় শুকনো, গরমে হয় আইঢাই অবস্থা, অল্প পরিশ্রমেই ক্লান্তি এসে যায়।

পাতলা, শুকনো শরীর মানেই বায়ুর আধিক্য, এসব মানুষ আকারেও হয় অপেক্ষাকৃত হ্রস্ব।

মূলকথা রোগ সংক্রমণের কারণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে চরক বলেছেন, আমাদের ইন্দ্রিয়গুলোর ব্যবহারের ত্রুটিই শরীরে রোগ উৎপত্তির মূল কারণ। এর সঙ্গে আবহাওয়ার প্রতিকূলতাকেও যুক্ত করেছেন চরক।

শরীরের প্রধান শত্রুই হল অনিয়ম ও কুখাদ্য। অনিয়ম, অত্যাচারে ত্রি-দোষের সাম্যাবস্থা বিঘ্নিত হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শরীরের ধাতুগুলো।

আরও পড়ুন- মুন্সী প্রেমচন্দ জীবনী

এইভাবে গোটা শরীরক্ষেত্রেই যখন একটা বিশৃঙ্খল আবহাওয়া সৃষ্টি হয়। তখনই রোগ শরীরে প্রবেশ করবার সুযোগ পায়।

ত্রি-দোষের সাম্য নষ্ট হয়ে গিয়ে শরীরে যে রোগের সৃষ্টি হয় তাকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন চরক।

প্রথম হল- নিরাময়যোগ্য রোগ, দুই, নিবাময়যোগ্য তবে দীর্ঘমেয়াদী। তৃতীয় হল দুরারোগ্য।

চরক বলেছেন, দুর্ঘটনা থেকেও রোগ উৎপত্তি অসম্ভব নয়।

রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে চরক সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন রোগী পর্যবেক্ষণের ওপর৷ অর্থাৎ রোগীকে পরীক্ষা করতে হবে খুঁটিয়ে। তারপর দেখতে হবে কোন পরিবেশে কিভাবে রোগী রয়েছে। পরিবেশই বলে দেয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগের পরিচয়।

রোগ নির্ণয়ের পরে চিকিৎসককে নিরাময়ের ব্যবস্থা নিতে হবে। অভিজ্ঞ ও জ্ঞানী চিকিৎসক তার লব্ধ শক্তি বলে রোগীর শরীরের ভেতরের অবস্থাটি লক্ষণ থেকেই পরিষ্কার দেখতে পাবেন। চরক বলেছেন, যিনি তা পাবেন তিনিই প্রকৃত চিকিৎসক। চিকিৎসককে বিচার করতে হবে লক্ষণ, কারণ, শরীরের ধাত, রোগীর বয়স, জীবনীশক্তি, পরিবেশ এবং সময় অর্থাৎ কোন ঋতুতে রোগী রোগাক্রান্ত হয়েছে।

চিকিৎসক ওষুধের যেমন ব্যবস্থা করবেন তেমনি পথ্য বা আহার ও বিহার সম্পর্কেও ব্যবস্থা দেবেন:

চরকের ভেষজ-বিজ্ঞানে বেশি গুরুত্ব লাভ করেছে দেশীয় উদ্ভিদজাত ওষুধপত্র৷ নানা খনিজ এবং জীবজন্তুর দেহ থেকে সংগৃহীত পদার্থ দিয়ে তৈরি ওষুধের কথাও তিনি বলেছেন।

আরও পড়ুন- বিজ্ঞানী চরক এর জীবনী

কোন ওষুধ শরীরে কিরূপ কাজ করে তা পর্যবেক্ষণ করে যাবতীয় ওষুধকে ৫০ ভাগে ভাগ করেছেন চরক।

সমস্ত ওষুধেরই কাজ একটাই, শরীরের ধাতু এবং ত্রি-দোষের সাম্যভাব পুনরুদ্ধার করা।

ওষুধ প্রয়োগের বিভিন্ন ধরনের কথা বলেছেন চরক। কোন ওষুধ অনুপানহীন, কোন ওষুধ অনুপানসহ দেওয়া হত।

কোন ওষুধ বড়ি অবস্থায়, কোনটি আবার কেবল গুঁড়ো করে সরাসরি রোগীকে দেওয়া হত। কোন কোন ওষুধ, জল, ঘি, বা মধুর সঙ্গে মিশিয়ে, কখনো ভেজে, ক্কাথ তৈরি করে, পাতিত করে গাজিয়ে বা নানা পানীয়ের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হত।

বিজ্ঞানী চরক এর জীবনী সমগ্র – Biography Of Charak

এমন ওষুধও আছে যা কেবল শুঁকতে হয় বা সুবাস নিতে হয়। মলদ্বার, মূত্রদ্বার, জননাঙ্গ ইত্যাদি ক্ষেত্রে শুই প্রয়োগ অর্থাৎ ইঞ্জেকশন করার কথাও চরক বলেছেন।

আয়ুর্বেদ চিকিৎসার এমন কোন দিক নেই যা নিয়ে চরক তাঁর সংহিতা গ্রন্থে আলোচনা করেন নি। কি নেই এই গ্রন্থে?

চিকিৎসা বিষয়ে অভিজ্ঞতা লাভের পথ, রোগ নিরাময়, সমাজে চিকিৎসকের স্থান, চিকিৎসকের সম্মান দক্ষিণা, রোগীর সেবাযত্নের প্রয়োজনীয়তা, বিভিন্ন চিকিৎসা শিক্ষায়তনের পরিচয়, চিকিৎসা, উদ্ভিদবিদ্যা, গুণাগুণ ভেদে প্রাণীজগতের শ্রেণীবিন্যাস, জীবজন্তুর মাংসের গুণাগুণ ইত্যাদি।

চিকিৎসা তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে গড়েওঠা ন্যায় ও বৈশেষিক দর্শন প্রসঙ্গেও আলোচনা করেছেন চরক।

আরও রয়েছে, মানুষের প্রাত্যহিক জীবনধারার রীতি-নিয়ম, আহার-বিহার, পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদির আলোচনা। মহামতি চরক স্বয়ং এক প্রতিষ্ঠান- এসম্পর্কে কোন দ্বিমত নেই। ভারতের চিকিৎসাক্ষেত্রে তাঁর প্রতিভার দ্রুতি অনির্বাণ সূর্যের মত দীপ্তিমান৷

আমাদের টেলিগ্রামে যুক্ত হন- এখানে ক্লিক করুন

Leave a Comment