গল্পের রাজা ঈশপ জীবনী – Biography of Aesop King of Fables

গল্পের রাজা ঈশপ জীবনী – Biography of Aesop King of Fables: আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মহান ব্যক্তিদের জীবনী সমগ্র। মহান ব্যক্তি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁদের জীবনের ক্ষুদ্রতম অংশগুলি আমাদের জন্য শিক্ষামূলক হতে পারে। বর্তমানে আমরা এই মহান ব্যক্তিদের ভুলতে বসেছি। যাঁরা যুগ যুগ ধরে তাদের কর্ম ও খ্যাতির মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প ও সাহিত্যের জগতে এক অনন্য অবদান রেখেছেন এবং তাঁদের শ্রেষ্ঠ গুণাবলী, চরিত্র দ্বারা দেশ ও জাতির গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। সেইসব মহান ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম গল্পের রাজা ঈশপ (Biography Of Aesop) -এর সমগ্র জীবনী সম্পর্কে এখানে জানব।

গল্পের রাজা ঈশপ জীবনী – Biography of Aesop the King of Fables

নামঈশপ
জন্মআনুমানিক খ্রিস্ট-পূর্ব ৬২০
পিতা
মাতা
জন্মস্থানগ্রীক
জাতীয়তাগ্রীক
পেশাবিখ্যাত ও প্রাচীন গ্রীক গদ্যকার
মৃত্যুআনুমানিক খ্রিস্ট-পূর্ব ৫৬৪

ঈশপ কে ছিলেন? Who is Aesop?

গ্রীসদেশের বিখ্যাত গল্প-কথক ঈশপ চিরকালের গল্পের রাজা। অথচ তিনি কখনাে কলম ধরে একটিও গল্প লেখেননি- অন্য সব লেখকরা যা করেন। কাজের ফাঁকে পথ চলতে চলতে ক্লান্তি দূর করবার উদ্দেশ্যে তিনি মন থেকে তৈরি করে অবলীলায় গল্প বলে যেতেন।

তার নীতিমূলক গল্পগুলাে বুদ্ধিদীপ্ত ঘটনায় ভরা। তিনি জীব জন্তুর মুখে মানুষের মুখের ভাষা ফুটিয়েছেন।

তাদের দিয়ে মানুষের দুর্বলতা, ত্রুটি বিচ্যুতির প্রতি কটাক্ষপাত করেছেন। মানুষের নীতিবােধ জাগরিত হয়, ন্যায়-অন্যায় কর্তব্য অকর্তব্য মানুষ বিবেচনা করতে পারে, তাঁর উপযুক্ত পথ ঈশপ নির্দেশ
করেছেন তাঁর গল্পের মধ্য দিয়ে।

শতাব্দীর পর শতাব্দী অতিক্রান্ত হয়ে গেছে, তবুও আজও পৃথিবীর দেশে দেশে বালক-বৃদ্ধ নির্বিশেষে ঈশপের এইসব মজাদার গল্পের সমাদর অম্লান। বর্তমান বিশ্বে নীতিকথামূলক গল্পের প্রধান ধারাটি ঈশপের নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে।

দীর্ঘদিন ধরে মানুষের মুখে মুখে ঈশপের গল্পগুলাে দেশ দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। এভাবে বিভিন্ন দেশের লােককথায় পড়েছেতার প্রভাব কখনাে বা একাত্ম হয়ে মিশে গেছে তার গল্প।

কালে কালে তাঁর নামে প্রচারিত হয়েছে এমন অনেক গল্প আদৌ কোনও দিন তিনি বলেননি। অফুরন্ত গল্পের ভান্ডারী ঈশপের জীবন সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। প্রাচীন গ্রীসে প্রথম ইউসিবিয়াসের বর্ণনায় তাঁর উল্লেখ পাওয়া যায়।

ঈশপ এর জন্ম: Aesop’s Birthday

ঈশপ ছিলেন গ্রীসদেশের ফ্রিজিয়া নগরের অধিবাসী। খ্রিষ্টের জন্মের ৬২০ থেকে ৫৬৪ অব্দ পর্যন্ত তিনি বর্তমান ছিলেন।

গ্রীসের ডেলফি রাজ্যে খ্রিষ্টপূর্ব ৫৬৪ অব্দে তাঁর মৃত্যু হয়। ঈশপ শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ ইথিওপ থেকে। এর অর্থ করলে দাঁড়ায় ঘাের কালাে, কদাকার ইত্যাদি।

ঈশপের চেহারার যে বর্ণনা পাওয়া যায় তা থেকে জানা যায় তাঁর গায়ের রঙ ছিল কৃষ্ণ বর্ণ। নাকটা ছিল যারপরনাই থ্যাবড়া। পিঠে ছিল দৃশ্যমান কুঁজ।

আরও পড়ুন- আর্কিমিডিস জীবনী

পা-গুলােও এমন ছিল যে তিনি নাকি সটান সােজা হয়ে চলতে পারতেন না। এদিক থেকে বলা যায় ঈশপ ছিলেন সার্থকনামা।

ঈশপ এর কর্ম জীবন: Aesop’s Work Life

গ্রীকদেশের স্যামস দ্বীপের রাজা জেনথাসের রাজপ্রাসাদের ক্রীতদাস রূপে ঈশপের জীবন শুরু হয়েছিল। পরে অসাধারণ তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও বিচক্ষণতার গুণে দাসত্ব থেকে মুক্তিলাভ করে স্যামস দ্বীপেরই এক ধনাঢ্য বণিক ইশাদমানের অধীনে কাজ নেন।

ঈশপ এর প্রথম জীবন: Aesop’s Early Life

কিছুদিন পরে ঈশপ ভাগ্যের সন্ধানে স্যামস ত্যাগ করে লিডিয়া রাজ্যের রাজা ক্রোসাসের দরবারে এসে উপস্থিত হন। স্বভাবসুলভ বুদ্ধিমত্তা কৌতুকপ্রিয়তা এবং অসাধারণ প্রতিভাবলে কিছুদিনের মধ্যেই রাজা ক্রোসাসের বিশ্বাসভাজন হয়ে ওঠেন।

এখানে তিনি রাজবার্তা বহনের দায়িত্ব লাভ করেন। ক্রোসাসের বিশ্বস্ত দূত হয়ে দেশ ও বিদেশের নানা প্রান্তে পরিভ্রমণের সুযোেগ ঘটল তাঁর।

ঈশপ যেখানেই যেতেন সঙ্গে নিয়ে যেতেন তাঁর অফুরন্ত গল্পের ভান্ডার। তাঁঁর গল্প ও গল্পের নীতিকথা মানুষকে মুগ্ধ ও উদ্বুদ্ধ করত। কর্মসূত্রে একবার ডেলাফি রাজ্যে যেতে হয় তাকে।

সেকালে ভবিষ্যদ্বক্তা পুরােহিত ও সাধুসন্তদের জন্য ডেলফির প্রসিদ্ধি ছিল। সেই সুবাদে যথেষ্ট জ্ঞানীগুণী ব্যক্তির বাস ছিল সেখানে। ঈশপ কিছু দিন এইসব ব্যক্তির সঙ্গে মেলামেশা করে হতাশ হলেন।তিনি বুঝতে পারলেন, শুষ্ক জ্ঞানচর্চা করে মানুষগুলাে বিবেক ও নীতিভ্রষ্ট হয়ে পড়েছে।

আকাশচুম্বী এদের লােভআর অহংকার। দেশের সাধারণ মানুষের সরল বিশ্বাস ও ভক্তি ভাঙ্গিয়ে এরা অফুরন্ত বিত্ত সম্পদের অধিকারী হচ্ছে। সৎচিন্তা ও জ্ঞান সাধনার এই পরিণতি ঈশপকে মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ করে তুলল।

আরও পড়ুন- চিকিৎসক জীবক জীবনী

তিনি জনসাধারণকে অবিলম্বে এদের সম্পর্কে সতর্ক করে দেবার চেষ্টা করলেন। কিন্তু সংস্কারাচ্ছন্ন বিভ্রান্ত মানুষ তাঁর হিতকথার মর্ম উপলব্ধি করতে পারল না।
একদিন কুদ্ধ জনতার হাতে নির্মমভাবে তিনি নিহত হন।

কিছুদিন পরেই অবশ্য ডেলাফিবাসীরা তাদের ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হল। তাঁর স্মৃতির উদ্দেশে তারা নির্মাণ করল এক সুদৃশ্য পিরামিড।

ঈশপের নীতিকথার গল্পগুলাে দীর্ঘদিন মানুষের মুখে মুখেই ফিরেছে। তাঁর মৃত্যুর প্রায় তিনশত বৎসর পরে ডিমিস্ট্রিয়াম ফেলিরিয়াম নামে জনৈক অ্যাথেন্সবাসী গল্পগুলাে সংগ্রহ করে একত্র গ্রথিত করেন।

ঈশপ এর রচনা: Written by Aesop

খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতকে ব্যাব্রিয়াস কতগুলি গল্প পদ্যে রূপ দেন। খ্রিষ্টীয় নবম শতকে ল্যাটিন ভাষায় গল্পগুলাে অনুবাদ করেন ফদেরাস। এরপর প্রায় দীর্ঘ পাচশ বছর মানুষ এই সংকলন গুলাের কথা ভুলে ছিল।

সহসা অ্যাম্বােস পর্বতের এক মন্দিরে একটি পান্ডুলিপি আবিষ্কৃত হয় এবং তারপর থেকেই বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে বই আকারে ঈশপের গল্প পৃথিবীর দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ব্রিটেনে ঈশপের গল্প প্রথম অনুবাদ করেন ক্যাকসাস ১৪২৪ খ্রিঃ। ১৬২২ খ্রিঃ ফরাসী ভাষায় প্রকাশ করেন লা ফতেন।

বাংলা ভাষায় ১৮৫৬ খ্রিঃ কথামালা নামে প্রথম প্রকাশ করেন পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। পঞ্চতন্ত্র -এর অনেক গল্পের সঙ্গে ঈশপের গল্পের সাদৃশ্য লক্ষ করবার মত। হিতােপদেশ ও জাতক কাহিনীতেও এরকম কিছু গল্প আছে।

আরও পড়ুন- ঈশপ উইকিপিডিয়া

Leave a Comment