Henrik Ibsen Biography in Bengali – হেনরিক যােহান ইবসেন জীবনী

Henrik Ibsen Biography: আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মহান ব্যক্তিদের জীবনী সমগ্র। মহান ব্যক্তি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁদের জীবনের ক্ষুদ্রতম অংশগুলি আমাদের জন্য শিক্ষামূলক হতে পারে। বর্তমানে আমরা এই মহান ব্যক্তিদের ভুলতে বসেছি। যাঁরা যুগ যুগ ধরে তাদের কর্ম ও খ্যাতির মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প ও সাহিত্যের জগতে এক অনন্য অবদান রেখেছেন এবং তাঁদের শ্রেষ্ঠ গুণাবলী, চরিত্র দ্বারা দেশ ও জাতির গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। সেইসব মহান ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম হেনরিক যােহান ইবসেন (Henrik Ibsen) -এর সমগ্র জীবনী সম্পর্কে এখানে জানব।

Henrik Ibsen Biography In Bengali – হেনরিক যােহান ইবসেন জীবনী

নামহেনরিক যােহান ইবসেন
জন্ম20th মার্চ 1828
পিতানুড ইবসেন
মাতাম্যারিচেন অ্যাটেনবার্গ
জন্মস্থানসিয়েন, নরওয়ে
জাতীয়তানরওয়েজীয়
পেশানাট্যকার, কবি, মঞ্চনাটক পরিচালক
মৃত্যু23rd মে 1906 (বয়স 78)

বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাট্যকার বার্নার্ড শ ইবসেনের নাটক সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিলেন যে তিনটে বিপ্লব, দুটোক্রুসেড, কয়েকটা বৈদেশিক আক্রমণ ও একটা ভূমিকম্পের যতটা প্রভাব হওয়া উচিত ইংলন্ডে ইবসেনের নাটকের প্রভাব ঠিক ততটাই। ইবসেন ছিলেন উনবিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ নাট্যকার। তার প্রথম নাটক কাতিলিনা রচিত হয়েছিল সমালােচিত রােমান সেনাপতির নামে ১৮৪৮ খ্রিঃ।

১৮৫০ খ্রিঃ থেকে ১৯৫৮ খ্রিঃ পর্যন্ত প্রকাশিত হয় তার খ্যাম্পেহাইয়েন, নুরমা, সানকথান্স, নাক্তেন, ইয়লদ্যা প সুলহাইগ ও ফু ইনগের তিল ওসল্লোত নামের নাটকগুলাে। ১৮৬২ খ্রিঃ থেকে ১৮৬৪ খ্রিঃ তিনি বিদ্রুপাত্মক খ্যার্লিহেভেন্স কুমেদিয়ে এবং ইতিহাস ও মনস্তত্ত্বের মিশ্রণে খঙ্গসেমনেনা নাটক লেখেন।

১৯৬৬ ও ১৯৬৭ খ্রিঃ যথাক্রমে লেখেন ব্রানদও পায়েরয়িনত নাটক।

এই দুটো নাটক লেখা হয়েছিল তার বিদেশবাসের সময়। এই সময় পর্যন্ত রচিত নাটকগুলির মধ্যে দেশের অতীত গৌরবের ইতিহাস বা সমাজসংস্কৃতি সম্পর্কে ইবসেনের চিন্তাধারার প্রতিফলন ঘটে।

১৮৬৯ খ্রিঃ থেকে ১৮৮২ খ্রিঃ পর্যন্ত রচিত হয় ফরবৃন্দ, এন ফোলকেফিনদে প্রভৃতি যে নাটকগুলাে। তার মধ্যে সমাজ ও সমাজের সমস্যা বিষয়ে তার মতামত ব্যক্ত হয়েছে। ইবসেন ছিলেন এক অবিচল সংগ্রামী মনােভাবের মানুষ।

তার নাটকে এই মনােভাবের রূপায়ন ঘটেছে প্রধানতঃ নারীচরিত্রের মাধ্যমে। তার এই প্রতিবাদী চরিত্র চিত্রনের জন্য ভারতবর্ষে ইবসেন সমাজ সংস্কারক হিসেবেই সমধিক পরিচিতি লাভ করেছেন।

হেনরিক যােহান ইবসেন এর জন্ম: Henrik Ibsen’s Birthday

নাট্যরচনার নবধারার প্রবর্তক এবং জাতীয়তাবাদী ইবসেনের জন্ম হয় ১৮২৮ খ্রিঃ ২০ শে মার্চ।

হেনরিক যােহান ইবসেন এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Henrik Ibsen’s Parents And Birth Place

নরওয়ের স্কিয়েন শহরে। তার বাবা কুদ হেনরিকসেন ছিলেন জাহাজের ব্যবসায়ী। মায়ের নাম মারিয়া কর্নেলিয়া অলতেনবার্গ।

এক ধনাঢ্য পরিবারে জন্মেও জীবনের প্রায় চল্লিশটি বছর ইবসেনের কেটেছে। কঠোর দুঃখদারিদ্র্য আর জীবনসংগ্রামের মধ্যে গােড়ার দিকেতার রচনারও কদর ছিল না। বাবার অমিতব্যয়িতার ফলে ছেলেবেলা থেকেই শুরু হয়েছিল ইবসেনের দুঃখের জীবন।

হেনরিক যােহান ইবসেন এর শিক্ষাজীবন: Henrik Ibsen’s Educational Life

পড়াশােনার কথা ভুলে তাকে বাধ্য হয়ে স্কীয়েনের বাইরে এক খামারে কাজ নিতে হয়েছিল। পরিবারের জ্যেষ্ঠপুত্র হওয়ার এই হয়েছিল পরিণতি।

হেনরিক যােহান ইবসেন এর প্রথম জীবন: Henrik Ibsen’s Early Life

বাল্যবয়স থেকেই খেলনা থিয়েটার নিয়ে মগ্ন থাকতে ভালবাসতেন। ফলে নাটকের প্রতি একটা স্বাভাবিক টান তার মধ্যে সব অবস্থাতেই বজায় ছিল।

তাই ক্লেশকর জীবনের চারপাশের মানুষজন ও তাদের ঘিরে যে জীবন তার ঘটনার নাটকীয়তা সহজেই তার দৃষ্টি আকর্ষণ করত।

হেনরিক যােহান ইবসেন এর কর্ম জীবন: Henrik Ibsen’s Work Life

১৮৪৪ খ্রিঃযােল বছর বয়সে বাড়িথেকে পালিয়ে পঞ্চাশমাইল দূরে গ্রীনস্ট্যান্ড শহরে একটা ওষুধের দোকানে শিক্ষানবিশের কাজ নেন। গ্রীনস্ট্যান্ডের জীবন খুবই কঠিন ছিল।

তবু এখানে খানিকটা হাঁপ ছাড়তে পারলেন ইবসেন কয়েকজন সাহিত্যরসিক বন্ধুকে পেয়ে।

হেনরিক যােহান ইবসেন এর রচনা: Written by Henrik Ibsen

এইসময় থেকেই (১৮৪৭ খ্রিঃ) তিনি কবিতা লিখতে শুরু করলেন। তাঁর এইসব কবিতায় থাকত নগর জীবনের প্রতি শ্লেষাত্মক আক্রমণ।

আর থাকত নিজের কৈশােরের নিঃসঙ্গতা, মৃত্যুভয় ও বেদনা। ১৮৪৯ খ্রিঃ পদ্যে পূর্ণ দৈর্ঘ্যের নাটক লিখলেন ক্যাটেলিনা- রােমের পটভূমিকায়। এবারে ইচ্ছা হল নাটকটি হাসাবার। কিন্তু চেষ্টা করেও প্রকাশক পেলেন না। শেষ পর্যন্ত এক বন্ধু ওলি স্কুলারুড এগিয়ে এলেন।

তারই আর্থিক সাহায্যে ক্যাটেলিনা ছাপা হল এবং সমালােচকদের প্রশংসা লাভ করল। দ্বিতীয় নাটক দ্য ওয়ারিয়রস টোম্ব প্রকাশের একবছর পরে ইবসেন বারগেনের ওলি বুল থিয়েটারে একটা কাজের সুযােগ পেলেন।

আরও পড়ুন- আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় জীবনী

হলেন থিয়েটার ডিরেকটর। কিন্তু আবাল্যের লাজুক প্রকৃতি আর স্বভাবজাত ভীরুতার ফলে ডিরেকটর হিসেবে তিনি সফল হতে পারলেন না।

অভিনেতা অভিনেত্রীদের সঙ্গে কথা বলার সময় ঘাবড়েযেতেন। ফলে বেশি দিন এই কাজে টিকতে পারলেন না। ১৮৫৭ খ্রিঃ ইবসেন ডাক পেলেন অসলাের ন্যাশনাল থিয়েটারে।

নরওয়ের নাট্যকলার উন্নয়নের উদ্দেশ্যে এই নাট্যশালা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ইবসেনও ত্রিশ বছরের টগবগে যুবক। উৎসাহের সঙ্গে তিনি কাজে যােগ দিলেন।

ইবসেন ছিলেন উগ্র জাতীয়তাবাদী। বহু শতাব্দী ধরে নরওয়ে ছিল সুইডেনের অধীন।

১৮১৫ খ্রিঃ ভিয়েনার সন্ধির পরে ডেনিস অধীনতা থেকে মুক্ত হয়ে নরওয়ে সুইডেনের রাজতন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য জাতীয়তাবাদী তরুণদের সংগ্রাম চলতে লাগল ধীরে ধীরে।

এই সঙ্গে শুরু হয়েছিল ভাষা চর্চার উন্নতির আন্দোলন। ইরসেন এই আন্দোলনে যুক্ত হলেন। এই সময়েই তিনি স্বাধীন নরওয়ের ঐতিহাসিক পটভূমিতে রচনা করলেন তার শ্রেষ্ঠ নাটক কিং মেকিং। কিছু রাজনৈতিক কবিতাও তিনি লিখেছেন এই সময়কালে। ১৮৫৮ খ্রিঃ আর্থিক অনটন সত্ত্বেও বিয়ে করলেন সুসান্না হারসনকে। অর্থের প্রয়ােজন জরুরী হয়ে পড়লে বাধ্য হয়ে তাকে থিয়েটারের কাজ ছাড়তে হল ১৮৬২ খ্রিঃ। কবি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে কিছু সরকারী সাহায্য ইবসেনের নামে বরাদ্দ হল।

তবে এই সুবিধাও বেশি দিন কপালে সইল না। লাভস কমেডি নাটক প্রকাশের পর খ্রিস্টীয় যাজক সম্প্রদায়ের বিরূপতার ফলে তার সরকারী বৃত্তি বাতিল হয়ে গেল। লাভস কমেডি নাটকে ইবসেন প্রচলিত বিবাহ রীতির বিরুদ্ধে মতামত প্রকাশ করেছিলেন। দেশে আর মন টিকছিল না।

আরও পড়ুন- শ্রীনিবাস রামানুজন জীবনী

এক বন্ধুর চেষ্টায় ইবসেন বিদেশ ভ্রমণের একটি বৃত্তি নিয়ে কোপেনহেগেন চলে গেলেন। সেখানে তিনি প্রুসিয়া- ডেনিস যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লেন। এখান থেকে তিনি দেশ ছেড়ে চলে গেলেন জোনে।

ভাগ্য বিড়ম্বিত ইবসেনের জীবনে এবারে অনুকূল পরিবর্তনের সূচনা হল। কিছুকাল স্ত্রী- পুত্র নিয়ে অবশ্য কৃচ্ছতার মধ্যে কাটল। ব্রান্ড নাটকের প্রকাশের পর তার জীবনে স্বচ্ছলতা ফিরে এলাে। সরকারী তরফ থেকেও কবিবৃত্তি মঞ্জুর হল। ইবসেনের বয়স যখন আটত্রিশ সেই সময় এলাে তার জীবনে সাফল্য।

সাফল্য নিয়ে এলাে পরিবর্তন। লেখায় এলােস্বকীয়তা। সাহিত্যকর্মই হয়ে উঠল প্রধান অবলম্বন।

ক্রমে ক্রমে ইউরােপের সাহিত্য জগতে ইবসেনের সাহিত্যকৃতি নিজের স্থান করে নিতে সক্ষম হল। সাহিত্যসাধনারজন্যইবসেন ঘরসংসারসবকিছুর বন্ধনকে অগ্রাহ্য করেছিলেন। সত্যের জন্য সবকিছুত্যাগ করার এই জীবন- সত্যই তিনিতার রচনায় বিভিন্নভাবে উচ্চারণ করেছেন।

১৮৬৪ খ্রিঃ থেকে দীর্ঘ দশ বছরইবসেন জার্মানীতে ছিলেন। এখানেই তিনি ছয় বছরের পরিশ্রমের শেষে সম্পূর্ণ করেন জুলিয়ান দ্য অপেস্টেন্ট। এইভাবে নাটকের ঐতিহাসিক পর্ব শেষ করে নতুন ধারার গদ্য নাটক রচনায় মনােনিবেশ করলেন। এই নাটকগুলাে তাকে ইউরােপীয় নাট্যকারের প্রতিষ্ঠা এনে দিল।

আরও পড়ুন- রাজচন্দ্র বসু জীবনী

সারা ইউরােপে ইবসেনের সবচাইতে বেশি আলােচিত নাটক হল ডলস হাউস। ১৮৭৮ খ্রিঃ রােমে ফিরে এলেন ইবসেন।

সমালােচকরাও তখন তার রচনার গুণগ্রাহী। সর্বত্রই সুখ্যাতি। তেষট্টিবছর বয়সে তিনি অসলাে ফিরে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করলেন।

শেষ বয়সের নাটকগুলিতে সমাজবিষয়ে তার বক্তব্যের মাধ্যম হয়েছিল গল্প বা প্লটের বদলে প্রতীক। তার জীবনের শেষ নাটক হল হােয়েন ইউ ডেড অ্যাওকেন।

হেনরিক যােহান ইবসেন এর মৃত্যু: Henrik Ibsen’s Death

আটাত্তর বছর বয়সে ১৯০৬ খ্রিঃ সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাট্যকার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

Leave a Comment