Girish Chandra Ghosh Biography in Bengali – গিরিশচন্দ্র ঘোষ জীবনী

Girish Chandra Ghosh Biography: আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মহান ব্যক্তিদের জীবনী সমগ্র। মহান ব্যক্তি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁদের জীবনের ক্ষুদ্রতম অংশগুলি আমাদের জন্য শিক্ষামূলক হতে পারে। বর্তমানে আমরা এই মহান ব্যক্তিদের ভুলতে বসেছি। যাঁরা যুগ যুগ ধরে তাদের কর্ম ও খ্যাতির মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প ও সাহিত্যের জগতে এক অনন্য অবদান রেখেছেন এবং তাঁদের শ্রেষ্ঠ গুণাবলী, চরিত্র দ্বারা দেশ ও জাতির গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। সেইসব মহান ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম সাহিত্যের অন্যতম রূপকার নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষ জীবনী -এর সমগ্র জীবনী সম্পর্কে এখানে জানব।

Girish Chandra Ghosh Biography in Bengali – গিরিশচন্দ্র ঘোষ জীবনী

নামগিরিশচন্দ্র ঘোষ
জন্ম২৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৪৪
জন্মস্থানকলকাতা, ভারত
পিতানীলকমল ঘোষ
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয়
পরিচিতির কারণপ্রবন্ধকার এবং লেখক
পড়াশোনাপ্রথমে পাইকপাড়া স্কুল, হেয়ার স্কুল ও পরে ওরিয়েন্টাল সেমিনারি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।
মৃত্যু১৯১২ খ্রিঃ ৮ ই ফেব্রুয়ারী

গিরিশচন্দ্র ঘোষ এর জন্ম স্থান ও পিতামাতা: Birth Place And Parents Of Girish Chandra Ghosh

প্রখ্যাত নাট্যকার, কবি, অভিনেতা সাধারণ রঙ্গমঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা গিরিশচন্দ্রের জন্ম হয়েছিল কলকাতার বাগবাজারে ১৮৪৪ খ্রিঃ ২৮ শে ফেব্রুয়ারী। পিতার নাম নীলকমল ঘোষ।

গিরিশচন্দ্র ঘোষ এর ছোটবেলা: Girish Chandra Ghosh’s Childhood

বাল্যবয়সেই পিতা মাতাকে হারিয়ে গিরিশচন্দ্র একপ্রকার অভিভাবকহীন হয়ে পড়েন। ফলে পড়াশোনার বেশিরভাগ সময়টাই কাটতো বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় ও হুল্লোড়বাজিতে। তবে স্বভাবগত প্রতিভা বলে মুখে মুখে কবিতা রচনা করতে পারতেন। পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে মিলে নাটকে ভাল অভিনয়ও করতেন।

পড়াশোনা শুরু হয়েছিল পাইকপাড়া স্কুলে। কিন্তু উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির জন্য বেশিদূর এগোতে পারেন নি। ১৮৬২ খ্রিঃ এন্ট্রাস পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হন। কুড়ি বছর বয়সে অ্যাটিকিনসন টিলকন কোম্পানিতে বুক-কিপার -এর কাজ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন।

আরও পড়ুন- মাইকেল মধুসূদন দত্ত জীবনী

এই সময় বন্ধু ব্রজবিহারী সোমের উৎসাহে দেশী ও বিদেশী সাহিত্য পাঠে আগ্রহ জন্মে এবং প্রচুর পড়াশোনা করেন। কৈশোরে কিছুকাল হাফ-আখড়াই গানের দলের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদে সঙ্গীত ও অভিনয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন।

সেই সময় বাগবাজারে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে একটি থিয়েটারের দল গঠন করেন। ১৮৬৭ খ্রিঃ এই দলের প্রয়োজনায় মধুসূদনের শর্মিষ্ঠা নাটক মঞ্চস্থ হয়।

গিরিশচন্দ্র ঘোষ এর কর্ম জীবন ও রচনা: Girish Chandra Ghosh’s working life and composition

গিরিশচন্দ্র এই নাটকের জন্য সঙ্গীত রচনা করেন। এই ভাবেই ভাবীকালের শ্রেষ্ঠ নট ও নাট্যকারের নাট্যজগতে আবির্ভাব ঘটে।

১৮৬৮ খ্রিঃ বাগবাজার দল দীনবন্ধু মিত্রের সধবার একাদশী অভিনয় করে।

সপ্তমী পূজার রাত্রে বাগবাজারের প্রাণকৃষ্ণ হালদারের বাড়িতে স্টেজ বেঁধে অভিনয় হয়েছিল! গিরিশচন্দ্র এই নাটকের নিমচাঁদের ভূমিকায় অভিনয় করে প্রশংসা লাভ করেছিলেন।

এই নাট্যসংস্থার নাম পরে ন্যাশানাল থিয়েটার হয়। ১৮৭২ খ্রিঃ ডিসেম্বর মাসে গিরিশচন্দ্রের নেতৃত্বে সেই সর্বপ্রথম পেশাদারী রঙ্গমঞ্চ প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনিই সর্বপ্রথম নাট্যাভিনয়কে সুচারু শিল্পরূপে এদেশে প্রতিষ্ঠা করেন।

আরও পড়ুন- মহাকবি কালিদাস জীবনী

নিজের অভিনয় প্রতিভা বলে অভিনয় ক্ষেত্রে একটি বিশেষ রীতির প্রবর্তন করেন। গিরিশচন্দ্র ছিলেন নট ও নাট্যকার রূপে এক দুর্লভ প্রতিভার সমন্বয়।

অভিনয় রজনীতে টিকিট বিক্রির প্রশ্নে গিরিশচন্দ্র ন্যাশনাল থিয়েটারের সংশ্রব ত্যাগ করেন।

কিছুকাল পরে গ্রেট ন্যাশানাল থিয়েটার প্রতিষ্ঠিত হলে গিরিশচন্দ্র তাতে যোগ দেন ও অবৈতনিকভাবে অভিনয় করেন। পরবর্তীকালে তিনি এই প্রতিষ্ঠানেই একশ টাকা বেতনে ম্যানেজার নিযুক্ত হন।

এই সময় থেকেই তিনি নিয়মিত নাট্যরচনা আরম্ভ করেন। তাঁর রচির প্রথম মৌলিক নাটক আগমনী গ্রেট ন্যাশানালের মঞ্চেই ১৮৭৭ খ্রিঃ অভিনীত হয়। জীবনের পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে গিরিশচন্দ্র স্টার, এমারেল্ড, মিনার্ভা, ক্লাসিক, কোহিনূর প্রভৃতি রঙ্গশালায় পরিচালনার কাজ করেন।

পরে ১৯০৮ খ্রিঃ মিনার্ভা থিয়েটারে অধ্যক্ষ পদে আসীন হন এবং আমৃত্যু এই পদে নিযুক্ত ছিলেন। গিরিশচন্দ্র রচিত চৈতন্যলীলা নাটকের অভিনয় দেখতে ১৮৮৪ খ্রিঃ ২০ শে সেপ্টেম্বর ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ স্টার থিয়েটারে আসেন এবং চৈতন্য চরিত্রের অভিনেত্রী বিনোদিনী দাসীকে আশীর্বাদ করে যান।

আরও পড়ুন- দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার জীবনী

এই সময় থেকেই স্বেচ্ছাচারী গিরিশচন্দ্রের জীবনে পরিবর্তনের সূচনা হয়। ক্রমে তিনি রামকৃষ্ণদেবের অনুগ্রহ লাভ করেন এবং স্বামী বিবেকানন্দকে বন্ধুরূপে পান। শ্রীরামকৃষ্ণ সংঘের সংস্পর্শে এসে গিরিশচন্দ্র তাঁর বেপরোয়া জীবনকে সংহত করেন; ঠাকুরের প্রতি অচলা ভক্তি তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

তাঁর জীবনে ঠাকুরের প্রভাব এক বিচিত্র অধ্যায়। তারই প্রকাশ ঘটে তাঁর পৌরাণিক ও ভক্তি রসের নাটক নাটিকায়।

চৈতন্যলীলা ও বিল্বমঙ্গল গিরিশচন্দ্রের আদর্শ ভক্তিরসের নাটক রূপে চিহ্নিত।

ভারতীয় পুরাণের প্রধান নৈতিক আদর্শ ভক্তি নিষ্ঠা প্রভৃতি তত্ত্বগুলিকে তিনি অতি দক্ষতার সঙ্গে পৌরাণিক ভক্তিমূলক নাটকে ফুটিয়ে তুলেছেন।

গিরিশচন্দ্র বিংশ শতকের প্রথমদিকের পৌরাণিক নাট্যকার হলেও সম সাময়িক রাজনৈতিক ও স্বাদেশিক অনুরাগে কয়েকটি ঐতিহাসিক নাটকও রচনা করেন।

আরও পড়ুন- শিবনাথ শাস্ত্রীর জীবনী

সিরাজদ্দৌলা, মীরকাশিম, ছত্রপতি শিবাজী, অশোক, সৎনাম প্রভৃতি তাঁর ইতিহাসাশ্রিত নাটক। গিরিশচন্দ্রের পূর্ণাঙ্গ নাটকের সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশ। প্রহসন, রূপক, গীতিনাট্য প্রভৃতির সংখ্যাও প্রায় একই রকম।

অভিনয়, নাট্যালয় পরিচালনা, অভিনয় শিক্ষা প্রভৃতি কাজে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও যে শতাধিক নাটক তিনি রচনা করেছেন এতেই তাঁর অসামান্য প্রতিভা প্রমাণ করে।

গিরিশচন্দ্র পৌরাণিক নাটকগুলিতে অমিত্রাক্ষর ধরনের এক অভিনব ছন্দ ব্যবহার করেন। এই ছন্দ তাঁরই নামে গৈরিশছন্দ নামে স্বীকৃতি লাভ করেছে। তিনি নাট্যমঞ্চের প্রয়োজনে এবং নটনটীদের যোগ্যতানুযায়ী তাঁর অধিকাংশ নাটক রচনা করেছেন।

শেক্সপীয়রের ম্যাকবেথ নাটকের সার্থক বাংলা অনুবাদ ছাড়াও বঙ্কিমচন্দ্রের মৃণালিনী, বিষবৃক্ষ, দুর্গেশনন্দিনী উপন্যাস এবং মধুসূদনের মেঘনাদ বধ ও নবীনচন্দ্রের পলাশীর যুদ্ধ কাব্যের নাট্যরূপ দান করেছিলেন।

আরও পড়ুন- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী জীবনী

মেঘনাদ বধ কাব্যে রাম ও মেঘনাদ উভয় ভূমিকাতেই অভিনয় করে গিরিশচন্দ্র বাংলার নাট্যামোদিদের চমৎকৃত করেছিলেন। অভিনয় শক্তিবলে সেকালে তিনি জীবন্ত কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছিলেন।

গিরিশচন্দ্রের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য নাটক দক্ষযজ্ঞ, পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাস, জনা, পাণ্ডবগৌরব, প্রফুল্ল, হারানিধি, কালাপাহাড়, আবুহোসেন প্রভৃতি।

গিরিশচন্দ্র ঘোষ এর মৃত্যু: Girish Chandra Ghosh’s Death

১৯১২ খ্রিঃ ৮ ই ফেব্রুয়ারী গিরিশচন্দ্র ইহলোক ত্যাগ করেন।

গিরিশচন্দ্র ঘোষ কোথায় ও কবে জন্মগ্রহণ করেন?

২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৮৪৪ সালে, বাগবাজারে।

গিরিশচন্দ্র ঘোষের প্রথম নাটক কোনটি?

১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে “শর্মিষ্ঠা” নাটকে গীতিকার হিসেবে গিরিশচন্দ্র ঘোষ নাট্যজগতে প্রথম পদার্পণ করেন।

গিরিশচন্দ্র ঘোষের দুটি প্রহসনের নাম?

অভিমন্যুবধ (১৮৮১), সীতার বনবাস (১৮৮১)

Leave a Comment